প্রায় ১৩ ঘণ্টা দীর্ঘ বিতর্কের পর ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় ওয়াকফ বিল পাস হয়েছে। বুধবার (৩ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত ভোটে ২৮৮ জন এমপি বিলের পক্ষে ভোট দেন, বিপক্ষে ভোট দেন ২৩২ জন।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করা হবে বলে জানা যায়।
এই নতুন ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪ মূলত ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের সংশোধনী। এর আগেও ২০১৩ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আমলে বিলটি সংশোধন করা হয়েছিল, যা তখন বিনা বিতর্কে পাস হয়েছিল।
তবে এবারের সংশোধনী নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নতুন বিধান অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে কমপক্ষে দুইজন অ-মুসলিম সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক। এবং কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে ঘোষণা করতে হলে ওই ব্যক্তি কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে ইসলাম ধর্মাবলম্বী হতে হবে।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া: এই বিল সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে
বিরোধী দলগুলো একজোট হয়ে এই বিলের বিরোধিতা করেছে। ‘ইন্ডিয়া’ জোট এই বিলকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি বিরোধীদের মতামত উপেক্ষা করেছে।
কংগ্রেস বলেছে, "এই সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নিতে চায়।"
এআইএমআইএম-এর প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি সংসদে প্রতিবাদ হিসেবে বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি বলেন, “২০১৩ সালে যখন বিজেপির প্রবীণ নেতারা সংসদে উপস্থিত ছিলেন, তখন তারা এই সংশোধনী নিয়ে কোনো আপত্তি করেননি। তাহলে এখন কেন এই পরিবর্তন?"
শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী)-এর সাংসদ অরবিন্দ সাওয়ান্ত প্রশ্ন তোলেন, "সরকার যদি ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিমদের রাখছে, তাহলে কি মন্দির পরিচালনা কমিটিতে অ-হিন্দুদের রাখা হবে?"
সরকারের ব্যাখ্যা: "বিলটি ধর্মীয় নয়, সম্পত্তি সংক্রান্ত"
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “এই আইন ধর্মীয় কোনো বিষয়ে নয়, এটি সম্পত্তি সংক্রান্ত।”
অপরদিকে সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু সংসদে বলেন, “যদি এখন এই আইন সংশোধন না করা হয়, তাহলে বিতর্কিত সম্পত্তিগুলো সব ওয়াকফ বোর্ডের আওতায় চলে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “কোনো ব্যক্তি অন্যের জমি অন্য কাউকে দান করতে পারেন না। এটা রুখতেই এই আইন সংশোধন করা হচ্ছে।”
আজ রাজ্যসভায় চূড়ান্ত পরীক্ষা
এখন বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাজ্যসভায় বিলটি পাস হবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা রয়েছে।
রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, তাই বিরোধীরা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। তবে, বিজেপির মিত্রদলগুলো সমর্থন দিলে বিলটি পাস হতে পারে।
যদি রাজ্যসভায় বিলটি পাস হয়, তবে এটি চূড়ান্তভাবে আইনে পরিণত হবে। পাস না হলে, সংসদের যৌথ অধিবেশনে আলোচনা হতে পারে।
নতুন আইন কী প্রভাব ফেলতে পারে?
বিলের সমর্থকদের মতে, এটি ওয়াকফ বোর্ডের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অন্য ধর্মের সম্পত্তি ভুলভাবে ওয়াকফে চলে যাওয়া রোধ করবে।
অন্যদিকে বিরোধীদের মতে, এটি সংখ্যালঘুদের স্বায়ত্তশাসন সংকুচিত করবে। এ ছাড়া তারা বলছেন, সরকার মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছে।
বিতর্ক চললেও, সরকার বিলটি পাস করাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে রাজ্যসভায় কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

 
                            -20250403063404.jpg) 
                                    
 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন