ফিলিস্তিনের পবিত্র আল-আকসা মসজিদের খতিব শেখ মুহাম্মদ সেলিমকে ৭ দিনের জন্য মসজিদ চত্বরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
খুতবায় গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযান ও বেসামরিক গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করার দায়ে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। যদি নিষেধাজ্ঞার মেয়াদে তিনি আল-আকসায় প্রবেশ করেন, তবে তাকে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) জুমার নামাজে খুতবা প্রদানকালে শেখ সেলিম গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান রক্তক্ষয়ী সামরিক অভিযান, গোলাবর্ষণ এবং মানবিক সংকটের তীব্র নিন্দা জানান। একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মুসলিম বিশ্বকে এই বর্বরতা বন্ধে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান।
নামাজ শেষে গ্রেপ্তার, পরে নিষেধাজ্ঞা
জুমার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় শেখ মুহাম্মদ সেলিমকে আল-আকসার একটি গেট থেকে আটক করে ইসরায়েলি পুলিশ।
পরে তাকে পূর্ব জেরুজালেমের একটি থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং কয়েক ঘণ্টা পর মুক্তি দেয়া হয়, তবে তার বিরুদ্ধে সাত দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি নোটিশ হস্তান্তর করা হয়।
ইসরায়েলি সরকারের অধীনে থাকা ইসলামিক এনডাওমেন্ট ডিপার্টমেন্ট- যা আল-আকসা মসজিদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে, তাদের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ভবিষ্যতে বাড়তে পারে।
আল-আকসা ও রাজনৈতিক বার্তা: ইমামদের মুখ বন্ধ করতে চায় ইসরায়েল?
এর আগেও আল-আকসার আরেক প্রভাবশালী ইমাম শেখ একরিমা সাবরিকে নিষিদ্ধ করেছিল ইসরায়েল। তিনি জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (ফাতাহ) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পক্ষে বক্তব্য দিতে থাকায় তার ওপরও প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল বারবার আল-আকসার ইমামদের মুখ বন্ধ করতে চায়, কারণ এই মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়। এটি ফিলিস্তিনি জাতিসত্ত্বা, প্রতিরোধ এবং একতাবদ্ধতার প্রতীক। আল-আকসায় ইমামদের প্রতিটি বক্তব্য মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলে, বিশেষত যখন সেটি রাজনৈতিক বা মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
গাজা সংকটের প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বড় অংশই নারী ও শিশু। যুদ্ধকালীন এই মানবিক বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ অব্যাহত থাকলেও, ইসরায়েল তার সামরিক অভিযানে বিরতি দিচ্ছে না।
আল-আকসার মতো একটি পবিত্র ধর্মীয় স্থানেও ইসরায়েলের কড়া নজরদারি এবং ধর্মীয় নেতাদের ওপর দমনমূলক ব্যবস্থা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো এই বিষয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো যদিও আল-আকসার ধর্মীয় নেতাদের ওপর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে, তবে জাতিসংঘসহ বড় আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে নীরবতা পালন করছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে ইসরায়েল যে শুধু গাজা নয়, বরং পুরো ফিলিস্তিনজুড়ে ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং সামাজিক নেতৃত্বকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, সেটাই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আল-আকসার মতো একটি আন্তর্জাতিকভাবে সংবেদনশীল মসজিদেও ধর্মীয় স্বাধীনতা সীমিত করার এই প্রবণতা ভবিষ্যতে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন