দুই শতাধিক সংবাদকর্মীর মৃত্যুতে এখন প্রশ্নের মুখে যুদ্ধনীতি, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার।
গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এই রক্তক্ষয়ী তালিকা শুধু সংবাদকর্মীদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে না, বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্য জানার অধিকারকেও চরম হুমকির মুখে ফেলেছে।
পরিচয় সত্ত্বেও প্রাণ বাঁচে না
সংঘর্ষের সময় নিহত অধিকাংশ সাংবাদিকের পরনে স্পষ্ট পরিচয়চিহ্ন ছিল- যেমন ‘সংবাদকর্মী’ লেখা জ্যাকেট বা হেলমেট। তা সত্ত্বেও তাঁদের ওপর নির্বিচারে হামলা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থাগুলোর দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই এসব হামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার পরিকল্পনার অংশ।
তথ্য সংগ্রহে জীবনঝুঁকি
যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে তথ্যপ্রবাহ মূলত স্থানীয় সাংবাদিকদের ওপর নির্ভর করে। গাজায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট, ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতা ও চলমান বোমা হামলার মধ্যেও সাংবাদিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন।
কিন্তু এ পর্যন্ত যে হারে তাদের মৃত্যু ঘটছে, তাতে নিরপেক্ষ ও মাঠপর্যায়ের প্রতিবেদন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
নীরব বিশ্ব, বিক্ষুব্ধ বিবেক
যদিও জাতিসংঘ এবং কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা সাংবাদিক হত্যার নিন্দা জানিয়েছে, অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্র বিষয়টি উপেক্ষা করছে। এই নীরবতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যবস্থা ও যুদ্ধবিধির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
সাংবাদিকদের জন্য কোনো নিরাপত্তা বিধান কার্যকর হচ্ছে না, বরং তাদের হত্যাকে ‘সাধারণ ক্ষয়ক্ষতি’ বলে চিহ্নিত করার প্রবণতা বাড়ছে।
গণতন্ত্র ও সত্যের শত্রুতা
সাংবাদিকতা একটি রাষ্ট্রের বিবেক, একটি জাতির চোখ। গাজায় এই চোখ উপড়ে ফেলার যে প্রচেষ্টা চলছে, তা শুধু স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক গণতন্ত্রের জন্যও বিপজ্জনক।
যুদ্ধক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে, ভবিষ্যতে আর কেউ সেখানে সত্য খুঁজতে সাহস দেখাবে না।
শুধু সংখ্যা নয়, প্রতিটি মৃত্যু যেন একেকটি নীরব প্রশ্ন
এই ২ শতাধিক সংবাদকর্মীর মৃত্যু শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি আন্তর্জাতিক বিবেকের সামনে এক কঠিন প্রশ্ন। যুদ্ধের নিয়ম ভঙ্গ করে সাংবাদিকদের হত্যা করা হলে, তার বিচার না হলে, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ যে কতটা অনিশ্চিত, তা বলাই বাহুল্য।
আপনার মতামত লিখুন :