ইহুদিদের জন্য ইউরোপের ‘অন্ধকার অতীত’ যেন ফিরে এসেছে নতুন রূপে। বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন যুক্তরাজ্যের ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকজন—যেন সেই ১৯৩০ থেকে ৫০-এর দশক আবারও চোখ রাঙাচ্ছে! আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ইহুদিবিদ্বেষ।
একসময় যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। কিন্তু বিগত এক দশকে সেই সম্পর্কে যেন চিড় ধরতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিককালে দেশটিতে ইহুদিবিদ্বেষ শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে আর সীমাবদ্ধ নেই। সেটি ছড়িয়ে পড়েছে সাংস্কৃতিক উৎসব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনীতি ও গণমাধ্যমেও।
জেরুজালেম পোস্টের এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার অভাবে অনেক ব্রিটিশ ইহুদি ইসরায়েল বা অন্য নিরাপদ দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। একসময় যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল, কিন্তু বিগত এক দশকে সেই সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে জেরেমি করবিনের উত্থান, সরকারের মনোভাব পরিবর্তন এবং সামাজিকভাবে ইসরায়েল ও ইহুদি-বিদ্বেষের উত্থানকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।
সংস্কৃতি উৎসবে ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান
সম্প্রতি ব্রিটেনের গ্লাস্টনবেরি ফেস্টিভ্যালে র্যাপার বব ভাইলান ‘ডেথ টু দ্য আইডিএফ’ স্লোগান দিয়ে পরিবেশনা করেন, যা উপস্থিত দর্শকরাও সমর্থন করেন। এ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই তদন্তে নামে ব্রিটিশ পুলিশ। এতে ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ আরও তীব্র হয়।
ব্রিটিশ আইনজীবী সংগঠন ‘ইউকে লইয়ারস ফর ইসরায়েল’ বিবিসির বিরুদ্ধে ‘জাতিগত বিদ্বেষ’ ছড়ানোর অভিযোগ এনেছে। তাদের দাবি, সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে ইহুদিবিদ্বেষকে উসকানি দেওয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ ইহুদি নেতারা মনে করছেন, এসব ঘটনাকে শুধু ‘ইসরায়েলবিরোধিতা’ বলে এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়, বরং এগুলো ইহুদিবিদ্বেষেরই স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।
কমিউনিটি সিকিউরিটি ট্রাস্ট (সিএসটি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাজ্যে ইহুদিবিদ্বেষমূলক ঘটনার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালে ইহুদিদের ওপর যত হামলা হয়েছে, অতীতে কোনো বছরেই এত বেশি ঘটনা ঘটেনি।
এর মধ্যে রয়েছে উপাসনালয়ে হামলা, স্কুলে ইহুদি শিশুদের হয়রানি, এমপিদের হুমকি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জায়োনিস্ট’ অপবাদ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অপমান।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে ইহুদিদের বসবাস আরও অনিরাপদ হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে যা ঘটছে তার সঙ্গে ব্রিটেনের ৩০ ও ৪০-এর দশকের বিদ্বেষমূলক রাজনীতি, মিডিয়া কভারেজ এবং সমাজনীতির ভয়াবহ মিল রয়েছে। সে সময় ইহুদিদের ‘লোভী’, ‘ষড়যন্ত্রী’ বা ‘বিদেশি দখলদার’ হিসেবে তুলে ধরা হতো।
১৯৩০ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে ইহুদিবিদ্বেষ ছিল বহুমাত্রিক। রাজনৈতিক দল, সংবাদমাধ্যম, সমাজ, এমনকি শরণার্থী নীতিতেও এর প্রতিফলন দেখা গেছে। বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সেই সময়কার ঐতিহাসিক বিদ্বেষের সাদৃশ্য দেখে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাঝ্যে ইহুদিরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন।
আপনার মতামত লিখুন :