ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

গাজাগামী ফ্লোটিলা থেকে গ্রেটা থুনবার্গ আটক

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৩:০৭ এএম
সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনের মুখপাত্র গ্রেটা থানবার্গ। ছবি- সংগৃহীত

গাজায় ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটক করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় আটক হওয়া কর্মীদের মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনের মুখপাত্র গ্রেটা থানবার্গও রয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহলে এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল-জাজিরা।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সেএক বিবৃতিতে জানায়, ‘হামাস-সুমুদ ফ্লোটিলার বেশ কয়েকটি জাহাজ নিরাপদে থামানো হয়েছে এবং যাত্রীদের ইসরায়েলি বন্দরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। গ্রেটা ও তার সহযাত্রীরা নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।’

পরে মন্ত্রণালয় একটি ভিডিওও প্রকাশ করে, যেখানে গ্রেটা থানবার্গকে ইসরায়েলি সেনাদের পাহারায় নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।

যদিও ফ্লোটিলাটিকে হামাসের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেছে তেলআবিব, তবে সেই অভিযোগের পক্ষে এখনো পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা এই ফ্লোটিলার কর্মীরা আটক হওয়ার ঘটনাকে অবৈধ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের ভাষায়, আন্তর্জাতিক জলসীমায় ত্রাণবাহী জাহাজে এ ধরনের হস্তক্ষেপ সরাসরি ‘জলদস্যুতা’।

স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা বলেছেন, তাদের মিশনের লক্ষ্য ছিল খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী গাজায় পৌঁছে দেওয়া, কোনোভাবেই সামরিক বা রাজনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত নয়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১৩ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ছয়টি নৌকা আটক করা হয়েছে, যার মধ্যে আলমা জাহাজটিও রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বাধার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি সৈন্যরা জাহাজগুলোতে উঠে পড়েছে এবং জাহাজে থাকা অনেক কর্মীকে আটক করেছে। তবে হাস্যকর হলো, ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইয়োম কিপ্পুর ছুটির দিনেও নৌবহর সম্পর্কে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ কর্মকর্তারা ছুটির দিনেও কাজ করছেন।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে গ্রেটা থুনবার্গের অবস্থান

গ্রেটা থুনবার্গ দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে আসছেন। গাজায় যুদ্ধ ও অবরোধের বিরুদ্ধে তিনি বারবার বক্তব্য দিয়েছেন এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্লোটিলায় তার অংশগ্রহণকে অনেকে প্রতীকী ও শক্তিশালী বার্তা হিসেবে দেখেছেন। তবে এবার তাকে আটক করায় আন্তর্জাতিক পরিসরে ইসরায়েল নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছে।

ফ্লোটিলা আটক সংবাদের প্রকাশের পর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও কর্মীরা ইসরায়েলের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে অবরোধ করা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ‘গাজায় চলমান মানবিক সংকটের সময় ত্রাণবাহী জাহাজ আটকে দেওয়া অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য।’

সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশেষত গ্রেটা থুনবার্গের মতো বিশ্বব্যাপী পরিচিত এক তরুণীর আটক হওয়া ঘটনাটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

এটি প্রথমবার নয়, এর আগেও ইসরায়েল গাজাগামী ফ্লোটিলা আটক করেছিল। ২০১০ সালে ‘মাভি মারমারা’ নামের তুর্কি জাহাজে অভিযান চালিয়ে নয়জন কর্মীকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই ঘটনার পর থেকেই ফ্লোটিলা আন্দোলন আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এবার থুনবার্গকে আটক করার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারও কূটনৈতিক চাপের মুখে পড়বে। কারণ, তিনি কেবল একজন জলবায়ু আন্দোলনকারী নন, বরং পশ্চিমা দেশগুলোর তরুণ প্রজন্মের কাছে নৈতিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।