থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত সামরিক আগ্রাসনের অভিযোগ এনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত। থাইল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশন-এর এক প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫-এর জুলাইয়ের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি অ্যাম্বাসাডর অসিম ইফতিখার আহমদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে হুন মানেত জানান, থাই সশস্ত্র বাহিনী কম্বোডিয়ার একাধিক সীমান্ত এলাকায় পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। হামলার লক্ষ্য ছিল প্রেহ ভিহিয়ার ও ওদার মিয়াঞ্চেই প্রদেশে অবস্থিত তামোন থম মন্দির, তা ক্রাবেই মন্দির এবং মম বেই এলাকা।
চিঠিতে হুন মানেত আরও লেখেন, ‘কম্বোডিয়া পূর্বপরিকল্পিত সামরিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং এতে আমরা গভীরভাবে ক্ষুব্ধ।’ তিনি থাইল্যান্ডের এই কর্মকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ ও আসিয়ান সনদের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ড রক্ষার স্বার্থে কম্বোডিয়ার সেনারা আত্মরক্ষামূলক জবাব দিতে বাধ্য হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি থাইল্যান্ডকে অবিলম্বে সব ধরনের সংঘতমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং উসকানিমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
চিঠিতে হুন মানেত থাই-কম্বোডিয়া সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। তিনি ১৯০৪ সালের ফ্রাঙ্কো-সিয়ামীয় চুক্তি, ১৯০৭ সালের চুক্তি এবং ২০০০ সালের সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডগত দাবির ভিত্তি তুলে ধরেন। তিনি অভিযোগ করেন, থাইল্যান্ড একতরফাভাবে মানচিত্র পরিবর্তন করে ওই চুক্তিগুলো লঙ্ঘন করছে এবং সাম্প্রতিক স্থলমাইন ইস্যুতে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।
কম্বোডিয়ান প্রধানমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, চলমান সীমান্ত বিরোধ নিরসনে কূটনৈতিক ও আইনি পথ গ্রহণ করে কম্বোডিয়া ইতোমধ্যেই মম বেই এলাকা, তামোন থম মন্দির, তামোন টাচ মন্দির ও তা ক্রাবেই মন্দির—এই চারটি বিরোধপূর্ণ অঞ্চল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) কাছে ২০২৫ সালের ২ জুন উপস্থাপন করেছে। তা সত্ত্বেও থাইল্যান্ড উত্তেজনা বাড়িয়ে চলেছে এবং সম্প্রতি ১৪-১৫ জুন কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিত যৌথ সীমান্ত কমিশন (জেবিসি) সভার আগেও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করেছে।
চিঠির শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে এই আগ্রাসন ঠেকাতে জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানান এবং তার চিঠিটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদের দলিল হিসেবে প্রচারের অনুরোধ জানান।