১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট—ঘুম ভেঙে কর্মব্যস্ততায় ছুটছিল জাপানের শান্ত শহর হিরোশিমার বাসিন্দারা। সকাল সোয়া ৮টায় হঠাৎ এক তীব্র আলোকচ্ছটায় চোখ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কিছু বুঝে না উঠতেই মুহূর্তের মধ্যে কর্মব্যস্ত শহরটি পরিণত হয় এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে। আর এই ভয়াবহতায় প্রাণ হারায় ৭০ হাজার মানুষ। মার্কিন বোমারু বিমানের ফেলে যাওয়া ‘লিটল বয়’ তছনছ করে দেয় শান্ত শহরের চিত্র।
সেই ভয়াবহতার ৮০ বছর পূর্তি আজ বুধবার। ইতিহাসের এই দিনটি আজ স্মরণ করছে জাপানসহ সারা বিশ্বের মানুষ।
জাপানের সংবাদমাধ্যম এনএইচকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দিনটি উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজন করা হয়েছে বার্ষিক স্মরণ অনুষ্ঠান, যা অনুষ্ঠিত হচ্ছে হিরোশিমা শহরের পিস মেমোরিয়াল পার্কে।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরু এবং রেকর্ডসংখ্যক ১২০টি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধি, যার মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
প্রথা অনুযায়ী, পার্কটিতে সংরক্ষণের জন্য একটি হালনাগাদ তালিকা সংযোজন করা হয়েছে, যেখানে নতুন করে যোগ হয়েছেন সেই ভয়াবহতা থেকে বেঁচে ফেরা মানুষেরা, যারা গত এক বছরে মারা গেছেন। এই তালিকায় এখন রয়েছে মোট ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৬ জনের নাম।
এরই মধ্যে সকাল সোয়া ৮টায় এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়, ঠিক যে সময়টায় বোমাটি বিস্ফোরিত হয়েছিল।
বর্তমানে জীবিত ‘হিবাকুশা’ বা পারমাণবিক হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ১ লাখের নিচে নেমে এসেছে। তাদের গড় বয়স এখন ৮৬ বছরেরও বেশি। সময়ের সাথে সাথে তাদের অভিজ্ঞতা শোনার সুযোগ ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
গত বছর ‘নিহন হিদাঙ্কিও’ নামের একটি হিবাকুশা সংগঠন নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে। এতে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আন্দোলনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছিল।
তবে বর্তমানে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো এখনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে চলেছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বারবার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত শোনা যাচ্ছে।
এই বাস্তবতার মাঝে হিরোশিমা আবারও পারমাণবিক অস্ত্র বন্ধের আহ্বান জানিয়ে স্মরণ করছে সেই নিরীহ মানুষদের, যারা ৮০ বছর আগে ইতিহাসের প্রথম পারমাণবিক হামলার শিকার হয়েছিলেন।