জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার পদত্যাগের পর ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। হঠাৎ সৃষ্ট রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং উত্তরসূরিদের সম্ভাব্য সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আর্থিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) ইশিবা সংসদের উভয় কক্ষে জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর দায় স্বীকার করে তার সংক্ষিপ্ত মেয়াদের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ভোটারদের চাপেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এরপরই তিনি দলকে জরুরি নেতৃত্ব নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দেন। বিষয়টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক এলডিপি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, নির্বাচন আগামী ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।
পদত্যাগের ঘোষণার পর ইয়েনের মান কমে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের ফলন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে। জল্পনা শুরু হয়, নতুন নেতৃত্বের অধীনে রাজস্ব ঘুঘু নীতির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত উন্নত অর্থনীতি জাপান আরও চাপের মুখে পড়তে পারে।
সোমবার প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিতসু মোতেগি (৬৯) নেতৃত্বের দৌড়ে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলডিপি সবচেয়ে বড় সংকটের মুখে। দেশি-বিদেশি গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
সরকারের শীর্ষ মুখপাত্রের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশিও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
তবে নেতৃত্ব দৌড়ে এগিয়ে আছেন প্রবীণ রাজনীতিক সানাই তাকাইচি এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমির পুত্র শিনজিরো কোইজুমি। কোইজুমি ইশিবার মন্ত্রিসভায় কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ধানের ঊর্ধ্বমুখী দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পরিচিত। তাকাইচি জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, অন্যদিকে ৪৪ বছর বয়সী কোইজুমি আধুনিক যুগে সবচেয়ে তরুণ নেতা হবেন।
তাদের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা না করলেও ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নেতৃত্ব প্রতিযোগিতায় তারা যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। কান্দা ইউনিভার্সিটি অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রভাষক জেফ্রি হল বলেন, ‘সব ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে তাকাইচি ও কোইজুমি একে অপরের মুখোমুখি হবেন।’
বিনিয়োগকারীদের নজর এখন তাকাইচির দিকে, যিনি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাপান ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির বিরোধিতা করে ব্যয় বাড়িয়ে ভঙ্গুর অর্থনীতি চাঙা করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি কঠোর করার পরিকল্পনা বিলম্বিত হতে পারে। বর্তমানে অক্টোবরের শেষ নাগাদ সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৬ শতাংশ।
জাতীয়তাবাদী অবস্থান এবং রক্ষণশীল নীতির জন্য পরিচিত তাকাইচির নেতৃত্বের সম্ভাবনা জাপানের প্রধান প্রতিবেশী চীনও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। শান্তিবাদী সংবিধান সংশোধনের পক্ষপাতী তাকাইচি নিয়মিতভাবে ইয়াসুকুনি মন্দির সফর করেন, যাকে বেইজিং অতীতের সামরিকবাদের প্রতীক হিসেবে দেখে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে তাকাইচি তাইওয়ান সফর করে জাপান, তাইওয়ান ও অন্যান্য অংশীদারদের নিয়ে একটি ‘আধা-নিরাপত্তা জোট’ গঠনের প্রস্তাব দেন। জেফ্রি হলের মতে, ‘চীন জাপানের প্রতি আরও শত্রুতাপূর্ণ অবস্থান নিতে পারে, কারণ তাকাইচি নিজেকে চীনের বিরুদ্ধে বাজপাখি হিসেবে উপস্থাপন করেন।’