সিঙ্গাপুরে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ এশিয়ান শক্তিকে ‘এই অঞ্চলের জন্য হুমকি’ বলে অভিহিত করার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। তাইওয়ান ইস্যুতে ওয়াশিংটনকে ‘আগুন নিয়ে না খেলতে’ সতর্ক করেছে বেইজিং।
শনিবার (৩১ মে) শাংগ্রি-লা সংলাপে বক্তৃতাকালে হেগসেথ বলেন, চীন এশিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করতে সামরিক পদক্ষেপের জন্য ‘বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে’। বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে তাইওয়ানে সম্ভাব্য আক্রমণের মহড়া দেওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি।
চীন তাইওয়ানকে নিজ ভূখণ্ডের অংশ বলে মনে করে এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পুনরায় এর ক্ষমতা গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাইওয়ান সরকার বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্বের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে, কেবল দ্বীপের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
হেগসেথের মন্তব্য চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, তাইওয়ান একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়, বিদেশি শক্তিগুলোকে বিষয়টি লাভজনকভাবে ব্যবহার না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
এটি এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন পদক্ষেপগুলোকে এই অঞ্চলটিকে ‘পাউডার পিপা’তে পরিণত করার প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘চীনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তাইওয়ান প্রশ্নকে দর কষাকষির একটি উপায় হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভ্রান্তি পোষণ করা উচিত নয়, তাদের আগুন নিয়ে খেলা করা উচিত নয়।’
চীনের ‘প্রকৃত এবং সম্ভাব্য আসন্ন’ হুমকি সম্পর্কে সতর্ক করার পর হেগসেথ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মিত্রদের প্ররতিরক্ষা খাতে আরও বেশি ব্যয় করার আহ্বান জানান।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘প্রকৃত অস্থিতিশীল’ শক্তি হিসেবে অভিহিত করে বেইজিং ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ চীন সাগরে আক্রমণাত্মক অস্ত্র মোতায়েন এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির অভিযোগ এনেছে।
বেইজিং হেগসেথকে ‘মানহানিকর অভিযোগের মাধ্যমে চীনকে নিন্দা করার’ এবং ‘ঠান্ডা যুদ্ধের মানসিকতা’ প্রচারের জন্য অভিযুক্ত করেছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘হেগসেথ ইচ্ছাকৃতভাবে এই অঞ্চলের দেশগুলোর শান্তি ও উন্নয়নের আহ্বান উপেক্ষা করেছে এবং পরিবর্তে ব্লক সংঘাতের জন্য ঠান্ডা যুদ্ধের মানসিকতাকে তুলে ধরেছে, মানহানিকর অভিযোগের মাধ্যমে চীনকে নিন্দা করেছে এবং মিথ্যাভাবে চীনকে হুমকি বলেছে।’
চীন মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, তারা ‘হিংসাত্মক বক্তব্য’ হিসেবে বর্ণনা করা বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগরের কিছু দ্বীপ, অ্যাটলের ওপর চীন এবং ফিলিপাইনের সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিরোধ রয়েছে, উভয় উপকূলরক্ষীর মধ্যে সামুদ্রিক সংঘর্ষ ক্রমশ বাড়ছে। কারণ তারা উভয়ই জলসীমায় টহল দেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করছে।
বেইজিং সামুদ্রিক নৌচলাচলের হুমকি সম্পর্কে মার্কিন দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছে। জোর দিয়ে বলেছে যে, তারা আঞ্চলিক বিরোধ সমাধানের জন্য ধারাবাহিকভাবে সংলাপ প্রচার করেছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের সীমার মধ্যে তার আঞ্চলিক অধিকার রক্ষা করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণ চীন সাগরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বড় কারণ।’
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুন এশিয়ার প্রধান নিরাপত্তা ফোরামের বার্ষিক শাংরি-লা সংলাপ এড়িয়ে গেছেন। পরিবর্তে বেইজিং নিম্ন স্তরের প্রতিনিধিদের একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে।
২০১৯ সালের পর এই প্রথমবারের মতো চীন তার প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা-বিষয়ক উচ্চ-স্তরের সংলাপে পাঠায়নি। যদিও ২০২০, ২০২১ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্ক হুমকির কারণে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইতোমধ্যেই উত্তেজনা চরমে রয়েছে।
সূত্র : আল-জাজিরা