ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

ভিসা ছাড়াই চীন ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছে ৭৫ দেশের নাগরিক

এপি
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫, ১১:১৭ পিএম
চীন ভ্রমণ করছেন বিদেশি পর্যটকরা। ছবি- এপি

চীন আবারও বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠছে। কারণ দেশটি তার ভিসা নীতি আগের চেয়ে অনেক সহজ করেছে। এখন ৭৪টি দেশের নাগরিকরা চীনে ভিসা ছাড়াই ৩০ দিন পর্যন্ত ঘুরে বেড়াতে পারেন। আগে এতদিন চীনে যাওয়ার আগে সবাইকে ভিসা নিতে হতো, যা ছিল সময়সাপেক্ষ ও দুরূহ ব্যাপার।

চীনের সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে পর্যটন খাতকে চাঙা করতে, অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং বিশ্বের সামনে নিজেদের ভাবমূর্তি আরও উন্নত করতে। চীনের জাতীয় অভিবাসন অধিদপ্তর জানায়, ২০২৪ সালে এরই মধ্যে দুই কোটির বেশি বিদেশি ভিসা ছাড়াই চীনে প্রবেশ করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

চীন ২০২৩ সালের শুরুতে কড়াকড়ি কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে বিদেশি পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়। তবে সেই বছর মাত্র ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ চীন ভ্রমণ করেছিলেন, যা ২০১৯ সালে মহামারির আগের সংখ্যার চেয়েও অনেক কম। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ১৯ লাখ অর্থাৎ ২০২৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে চীন ধাপে ধাপে অনেক দেশের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ চালু করেছে। প্রথমে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন এবং মালয়েশিয়ার নাগরিকদের জন্য এই সুবিধা চালু হয়। এরপর প্রায় পুরো ইউরোপের নাগরিকরাই এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

সাম্প্রতিক মাসে আরও পাঁচটি ল্যাটিন আমেরিকার দেশ, উজবেকিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশের নাগরিকরাও ভিসা ছাড়াই চীন সফরের সুযোগ পাচ্ছেন। ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে আজারবাইজান যুক্ত হলে, মোট ৭৫টি দেশের নাগরিক চীনে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারবেন। এই তালিকায় বাংলাদেশ বা ভারত নেই।

তবে এই সুবিধা অনেক দেশের জন্য এখনও পরীক্ষামূলক প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ দেশকে এক বছরের জন্য ট্রায়াল ভিত্তিতে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

নরওয়ের এক পর্যটক অইস্টাইন স্পোরশেইম বলেন, এই নিয়ম বদলের ফলে এখন তার পরিবারকে আর দুই সন্তান নিয়ে অসলোতে চীনা দূতাবাসে গিয়ে বারবার ভিসা আবেদন করতে হয় না, যা আগে সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ছিল।

চীনের বিলাসবহুল ট্যুর আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াইল্ডচায়না-এর ব্যবস্থাপক জেনি ঝাও জানান, ‘এই নতুন নিয়ম আমাদের জন্য ১০০ শতাংশ উপকারী। মহামারির আগের তুলনায় এখন আমাদের ব্যবসা ৫০ শতাংশ বেড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, এখনো যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় পর্যটক উৎস, যা তাদের মোট ক্লায়েন্টের ৩০ শতাংশ। তবে ইউরোপীয় পর্যটকদের সংখ্যাও বেড়েছে, ২০১৯ সালের আগে যেখানে ছিল ৫ শতাংশের কম, এখন তা দাঁড়িয়েছে ১৫–২০ শতাংশে। এই নতুন সুবিধাগুলো আরও দীর্ঘমেয়াদে চালু থাকবে এবং পর্যটনের বিকাশ অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী ঝাও।

২০ বছরের অভিজ্ঞ একজন ইংরেজিভাষী ট্যুর গাইড গাও জুন বলেন, ‘আমি এখন এত ব্যস্ত যে একা সব সামলানো সম্ভব হচ্ছে না।’ তিনি এখন নতুন উদ্যোগে নেমেছেন, যারা ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন, তাদের ট্যুর গাইড হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছেন।

সাংহাইভিত্তিক অনলাইন ভ্রমণ সংস্থা ট্রিপডটকম জানিয়েছে, চীনের ভিসামুক্ত নীতির কারণে পর্যটন অনেক বেড়েছে। ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের ওয়েবসাইটে বিমান, হোটেল ও অন্যান্য বুকিং দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ বুকিং এসেছে ভিসামুক্ত দেশগুলো থেকে।

তবে চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও আফ্রিকার কোনো বড় দেশ এখনো ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ পায়নি।

এছাড়াও যেসব দেশের নাগরিকরা এখনও চীনের ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন না, তাদের জন্য বেইজিং একটি বিকল্প পথ রেখেছে। এই বিকল্প হলো ট্রানজিট ভিসা, যার মাধ্যমে কেউ যদি চীনের পথ ধরে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করেন, তাহলে তিনি চীনে ১০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারবেন। তবে এই নিয়ম শুধু ৬০টি নির্দিষ্ট সীমান্ত পয়েন্ট বা এয়ারপোর্টে প্রযোজ্য।

এই ট্রানজিট সুবিধা ৫৫টি দেশের নাগরিকদের জন্য চালু আছে, যদিও এর অনেকেই ইতোমধ্যেই ৩০ দিনের ভিসামুক্ত তালিকায় রয়েছে। ফলে মূলত ১০টি দেশের নাগরিকদের জন্যই এটি সীমিত বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। দেশগুলো: যুক্তরাজ্য, সুইডেন, রাশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, লিথুয়ানিয়া, ইউক্রেন, ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো।

এই তালিকায় একটি বিষয় লক্ষণীয়—সুইডেনই একমাত্র ধনী ইউরোপীয় দেশ, যাকে চীন এখনো ৩০ দিনের ভিসামুক্ত তালিকায় রাখেনি। এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। ২০২০ সালে সুইডিশ নাগরিক ও বই বিক্রেতা গুই মিনহাইকে চীনা কর্তৃপক্ষ ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তিনি ২০১৫ সালে থাইল্যান্ড থেকে নিখোঁজ হন এবং পরে চীনে পুলিশ হেফাজতে দেখা যায়। এরপর থেকেই চীন-সুইডেন সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়।