বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিঠি পেয়ে কোমা থেকে ফিরলেন চীনের হেনান প্রদেশের ১৮ বছর বয়সী এক তরুণী। হৃদ্যন্ত্রের বিরল সংক্রমণে কোমায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু, এমন সময় পরিবারের হাতে এল এক সুখবর। জিয়াং চেননান নামে ওই তরুণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সেই ভর্তির চিঠিই হয়ে উঠল আশ্চর্য এক ‘ওষুধ’, যা জিয়াংকে আবারও ফিরিয়ে এনেছে জীবনযুদ্ধে।
সংবাদমাধ্যম ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’র খবরে বলা হয়েছে, গত জুনে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ‘গাওকাও’ শেষ করেন জিয়াং চেননান। স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নিজের জীবন গড়ে তোলার। কিন্তু ১১ জুলাই, পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিন পরই তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, সঙ্গে বুকে চাপ অনুভব করতে থাকেন। পরিবার দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়।
চিকিৎসকেরা জানান, জিয়াংয়ের শরীরে ধরা পড়েছে বিরল ও মারাত্মক রোগ ‘ফুলমিন্যান্ট মায়োকার্ডাইটিস।’ যে রোগে হঠাৎ হৃদ্যন্ত্রে তীব্র প্রদাহ হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে। ভাইরাস, মানসিক চাপ কিংবা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এর কারণ হতে পারে, তবে জিয়াংয়ের ক্ষেত্রে সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
অবস্থার অবনতি হলে জিয়াংকে অন্য এক বড় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই কোমায় চলে যান তিনি। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) কৃত্রিম হৃদ্যন্ত্র-ফুসফুসের সহায়তায় তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছিল। চিকিৎসকেরা জানালেন, অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর।
এদিকে জিয়াং চেননান’ র পরিবারের অবস্থা নাজুক। তার বাবা গত বছর এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়েন এবং কাঁধে রয়েছে প্রচুর ঋণের বোঝা। মা রাস্তার ধারে খাবার বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। বাড়িতে আরও এক ছোট ভাই আছে স্কুল পড়ুয়া। জিয়াংয়ের চিকিৎসার খরচের পেছনে এরই মধ্যেই ২ লাখ ইউয়ানের (প্রায় ২৮ হাজার মার্কিন ডলার) বেশি খরচ হয়ে গেছে। এই টাকা জোগাড় করতে পরিবার বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়েছে।
এরপরই একদিন এল সুসংবাদ। জিয়াং কোমায় যাওয়ার অষ্টম দিন, ডাকবাক্সে এসে পৌঁছাল একটি খাম—তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চিঠি। মেয়ের স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ সফল হয়েছে। বাবা আর দেরি করলেন না। চিঠি হাতে নিয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে মেয়ের কাছে পৌঁছালেন। কোমায় থাকা মেয়ের কানে কানে বললেন, ‘আমরা সবাই খুব খুশি, তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছ!’
চমকপ্রদভাবে, জিয়াংয়ের বাবা দেখলেন তাঁর মেয়ের চোখের পাতা কেঁপে উঠেছে। চিকিৎসকেরা বললেন, কোমা থেকে ফিরে আসার লক্ষ্যে সাড়া দেওয়ার লক্ষণ হতে পারে। পরিবারে নতুন করে আশার আলো জ্বলে উঠল। পরদিন সকালে ঘটলও আরও বিস্ময়কর ঘটনা, জিয়াং চেননান জ্ঞান ফিরে পেলেন। ভিডিও কলে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বললেন, যদিও কথা বলা তখনো কষ্টকর ছিল। কিন্তু দুই হাত তুলে ‘ওকে’ ভঙ্গি করে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি খুশি এবং শুনতে পাচ্ছেন সবকিছু।
চিকিৎসকেরা বললেন, তাঁর হৃদ্যন্ত্রের কার্যক্ষমতা এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক এবং অবস্থা স্থিতিশীল। কীভাবে এত দ্রুত তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন, তার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
মেয়েটির পরিবার জানিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরেই জিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করবেন। জিয়াংয়ের বাবা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘অর্থনৈতিক অবস্থা যতই কঠিন হোক, আমি তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাব। এটা তাঁর স্বপ্ন। সে যেন নিজের জীবন নিজের মতো করে গড়তে পারে, সেই সুযোগ আমি দেব।’
চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই গল্প ছড়িয়ে পড়তেই হাজারো মানুষ শুভকামনা জানিয়েছেন। একজন লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আশা হয়তো জিয়াংকে জাগিয়ে তুলেছে। আশা করি, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে নতুন জীবন শুরু করবেন।’
আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘এত অল্প বয়সে হৃদ্যন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়া চিন্তার বিষয়। তাঁর উচিত সুস্থ জীবনযাপন করা এবং বাবা-মাকে দুশ্চিন্তায় না রাখা।’
চীনে এর আগেও এমন আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে। ঠিক এক সপ্তাহ আগে পূর্ব চীনের এক তিন বছরের শিশু ১৮ তলা থেকে পড়ে বেঁচে গিয়েছিল, কারণ নিচে একটি গাছ তার পড়া থামিয়ে দিয়েছিল। শিশুটির বাবা সেই গাছের ডালে বড় লাল ফুল বেঁধে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন