আবারও বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলেন চীনা বিজ্ঞানীরা। চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের (সিএএস) প্লাজমা পদার্থবিদ্যা ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে এক অভূতপূর্ব সুপারকন্ডাক্টিং চুম্বক। এ চুম্বক ৩৫ দশমিক ১ টেসলার স্থির চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করেছে, শক্তি হিসেবে যা পৃথিবীর প্রাকৃতিক চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রায় ৭ লাখ গুণ বেশি।
চুম্বকটি টানা ৩০ মিনিট স্থিতিশীলভাবে কাজ করেছে। এরপর নিরাপদে চৌম্বক মুক্ত করা হয়। সিএএস জানিয়েছে, এই অর্জন প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করেছে এবং গবেষকদের জন্য ৩৫ দশমিক ১ টেসলার চৌম্বক অবস্থায় বিভিন্ন পরীক্ষা চালানোর গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে।
টেসলা (টি) হলো চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তির আন্তর্জাতিক একক। তুলনায় দেখা যায়, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র প্রায় শূন্য দশমিক ০০০০৫ টেসলা। আধুনিক এমআরআই মেশিনে ব্যবহৃত সুপারকন্ডাক্টিং চুম্বকের শক্তি প্রায় ৩ টেসলা। এই গবেষণায় অংশ নেয় হেফেই ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপ্লাইড সুপারকন্ডাক্টিভিটি সেন্টার, হেফেই কমপ্রিহেনসিভ ন্যাশনাল সায়েন্স সেন্টারের এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
এর আগে, ২০১৯ সালে সম্পূর্ণ সুপারকন্ডাক্টিং চুম্বকের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ৩২ দশমিক ৩৫ টেসলা। এবার সেই রেকর্ড ভাংল চীনের দল। আরও পেছনে তাকালে দেখা যায়, ২০১৭ সালে মার্কিন ন্যাশনাল হাই ম্যাগনেটিক ফিল্ড ল্যাবরেটরি তৈরি করেছিল ৩২ টেসলার এক চুম্বক।
সিএএস ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং জানিয়েছে, নিম্ন-তাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টিং চুম্বক সর্বোচ্চ ২৩ টেসলা শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। এই প্রযুক্তিই এমআরআই মেশিনের উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়েছে।
তবে উচ্চতর চৌম্বক ক্ষেত্র পেতে গবেষকরা কম্বিনেশন ব্যবহার করেন। নিম্ন-তাপমাত্রার চুম্বক দিয়ে মূল ক্ষেত্র তৈরি হয়, আর উচ্চ-তাপমাত্রার চুম্বক কেন্দ্রস্থলে বসানো হয় শক্তি বাড়ানোর জন্য।
চীনা দল এভাবেই নতুন রেকর্ড গড়েছে। তারা এক উচ্চ-তাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টিং চুম্বক বসিয়েছে নিম্ন-তাপমাত্রার চুম্বকের কেন্দ্রে। এর ফলে তৈরি হয়েছে ৩৫ দশমিক ১ টেসলার নতুন ইতিহাস। সিএএস জানায়, চাপ ঘনত্ব ও বহু-চৌম্বক ক্ষেত্র সংযোগের মতো জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এই কৃতিত্ব অর্জিত হয়েছে।
সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অগ্রগতি ভবিষ্যতে পারমাণবিক ফিউশন প্রযুক্তি, এমআরআই মেশিন এবং ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স স্পেকট্রোমিটারের মতো যন্ত্রের উন্নয়নে সহায়ক হবে। বিশেষত পারমাণবিক ফিউশন ক্ষেত্রে এটি দেবে এক নতুন দিগন্ত।
চীনের প্লাজমা পদার্থবিদ্যা ইনস্টিটিউট আন্তর্জাতিক তাপনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাক্টরের (আইটিইআর) অন্যতম অবদানকারী। এই বৈশ্বিক প্রকল্পের লক্ষ্য সূর্যের মতো ফিউশন প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদন। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যেখানে ভারী পরমাণু ভেঙে শক্তি তৈরি করে, সেখানে ফিউশনে দুটি হালকা পরমাণু যুক্ত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পারমাণবিক ফিউশন কার্যত সীমাহীন ও পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎস হতে পারে। এতে তেজস্ক্রিয় পদার্থের ঝুঁকিও নেই। চীনের আনহুই প্রদেশের হেফেই শহরে ফিউশন প্রযুক্তির জন্য বিশাল গবেষণা সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছে। এখানেই প্রকৌশলীরা ফিউশন রিঅ্যাক্টরের মূল উপাদান তৈরি ও পরীক্ষা চালাচ্ছেন।