মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম

আমরা গ্রাম বাঁচিয়েছি : মোহাম্মদ দীনু

জোরপূর্বক ৮০ লক্ষ পুরুষকে বন্ধ্যা করেছিল ভারত

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম

হরিয়ানার উত্তরাওয়ারে মোহাম্মদ দীনু তার নাতি-নাতনিদের সাথে  তার বাড়িতে । ছবি - সংগৃহীত

হরিয়ানার উত্তরাওয়ারে মোহাম্মদ দীনু তার নাতি-নাতনিদের সাথে তার বাড়িতে । ছবি - সংগৃহীত

১৯৭৬ সালের নভেম্বর মাসের শীতের এক রাত। সেই রাতে সবাই ছিল চরম ভয় ও আতঙ্কে। কেউ জঙ্গলের দিকে ছুটছিল, কেউ আশেপাশের গ্রামে, কেউ বা সরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ে ঘরের কুয়োর ভেতর লুকিয়ে পড়েছিল। তবে মোহাম্মদ দীনু শান্তি ঘরে ছিলেন—তিনি উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মেওয়াট অঞ্চলের উত্তাওয়ার গ্রামের বাসিন্দা। দিল্লি থেকে প্রায় ৯০ কিমি দূরের এই গ্রামকে পুলিশ ঘিরে ফেলে। তাদের নির্দেশ ছিল সব প্রজননক্ষম পুরুষদের একত্রে ভেড়ার ঘাঁটিতে এনে রাখা।

তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষনাকৃত জরুরি অবস্থা ১৭ মাস স্থায়ী হয়েছিল। দেশের নাগরিক অধিকার স্থগিত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বন্ধ, রাজনৈতিক বিরোধীদের বিচার ছাড়াই কারাভোগ—সব কিছুই ঘটেছিল। বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহযোগিতায় ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ‘জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ’ শুরু হয়।

মোহাম্মদ দীনু এবং তার ১৪ জন বন্ধুকে নির্মমভাবে আটকিয়ে বন্ধ্যাকরণ শিবিরে নেয়া হয়। দীনু এটাকে গ্রাম রক্ষা করার ত্যাগ বলে মনে করেন: ‘আমরা নিজেদের দিয়ে গ্রামকে বাঁচিয়েছি—আজ বাচ্চারা দৌড়ে বেড়াচ্ছে।’ ২০২৫ সালে ভারত এই জরুরি অবস্থার ৫০তম বার্ষিকী পালন করছে যার সূচনা ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন হয়েছিল।

জরুরি অবস্থার সময় ভারতে প্রায় ৮০ লাখ পুরুষকে জোরেপূর্বক বন্ধ্যা করা হয়েছিল, যার মধ্যে মাত্র ১৯৭৬ সালে হয়েছিল ৬০ লাখ। অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগের কারণে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত দুই হাজার মানুষ।

১৯৫২–তে ভারতের প্রথম জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি চালু হলেও তা নিষ্ক্রিয় ছিল কিন্তু ১৯৬০–এর দশকে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তা কঠোর রূপ নেয়। সেই সময় নারী প্রতি গড়ে শিশুর সংখ্যা ছিল ছয় যা একটি জটিল সমস্যা হিসেবে দেখা হত।

বিশ্বব্যাংকের ৬৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ ও যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য সহায়তায় বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি সৃষ্টির চাপ তৈরি হয়।

কিন্তু জরুরি অবস্থায় সব নিয়ন্ত্রণ উঠে যায়। সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর চাপ ছিল প্রতিটি কোটা পূরণ করতে, না হলে চাকরি ও বেতন থেকে বঞ্চিত করা হতো। যারা মেনে নিত না, তাঁদের পিঁপড়া—কুয়োর পানি ও সেচও বন্ধ করে দেয়া হতো।

উত্তাওয়ার গ্রাম প্রতিবাদকারীদের মধ্যে এগিয়ে ছিল। সেই গ্রামের অধিকাংম মুসলিম হওয়ায় তাদের ওপর অত্যাচার ও ছিল আরও নির্মম। ১৩–১৪ বছর বয়সে মোহাম্মদ নূর ও তার বাবার বাড়িতে হানা দিয়ে ধান-চাল নষ্ট করার মত ঘৃণ্য আচরণ করা হয়। 
চার দিন রান্নাই থেমে যায়, আর নূরকে আটক করে নির্যাতন করা হয়—যদিও বয়স প্রমানের কারণে পরে ছেড়ে দেয়া হয়।


গ্রামবাসীরা ঐ রাতকে এখনো ‘ভয়ের রাত’ হিসেবে স্মরণ করে। গ্রামপ্রধান আব্দুর রহমান পুলিশ অ্যাপারেশনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন—বলেছিলেন, ‘একটা কুকুরও দেব না’—তবু গ্রাম রক্ষা হয়নি। অভিযানের পর গ্রাম হতাশায় নিমজ্জিত—পরিবার ছিন্নবিচ্ছিন্ন, গৃহবধুদের বিয়ে ভেঙে যায়, অনেকের জীবন শেষ হয় ভয়ে।

বর্তমানে ভারতে জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ নেই এবং প্রজনন হার দুইয়ের কাছাকাছি। তবে কিছু বিশ্লেষক বলেন, মোদির আমলেও নাগরিক অধিকার হরণের মানসিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। সমাজবিজ্ঞানী শিব বিশ্বনাথনের মতে, জরুরি অবস্থা থেকেই আধুনিক ভারতে একনায়কতন্ত্রের বীজ বপণ হয়।

২০২৪ সালে মোদি শাসনে গণতন্ত্র ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ভারতের অবস্থার অবনতি হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা ও সাংবাদিকদের কারাবন্দী করা হয়। 

‘ফ্রি স্পিচ কালেকটিভ’-এর গীতা শেঠুর মন্তব্য: ‘তখন আইন দিয়ে অধিকার কেড়ে নেওয়া হত, আজ আইনের অপব্যবহার করে সেই কাজ হচ্ছে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিম আলী বলেন, ‘শাসন যখন দৃঢ়—তা সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে দিতে পারে।’

১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরাকে পরাজিত করা হয়—কারণ জনগণ প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে, তবে একই প্রশ্ন আজও: মোদির পর ভারতের গণতন্ত্র কি ফিরে আসবে?

১৯৭৬ সালে দীনু যখন পুলিশের ভ্যানেই বসেছিলেন, তিনি শুধু তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সালিমার কথা ভাবতেন। আটদিনের কারাবাসের পর পালওয়ালের শিবিরে অপারেশন—শিশুর জন্ম তখন নিশ্চিত হয়নি। এক মাস পর ফিরে এসে জানতে পায়, পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সালিমা। আজ দীনুর তিন নাতি ও প্রপৌত্র রয়েছে। ২০২৪ সালে তার স্ত্রী সালিমার মৃত্যু হয়।

৯০ বছর বয়সে দীনু বলছেন, ‘আমরা গ্রাম বাঁচিয়েছি—ইন্দিরা চেয়েছিলেন পুরো গ্রামটা পুড়িয়ে দিত।’

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!