ইরান একাধিক দেশে অস্ত্র কারখানা স্থাপন করেছে জানিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে বলেছেন, গত জুনে ‘ইসরায়েল’র সঙ্গে যুদ্ধ ১৫ দিনে গড়ালেই তারা ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে পারত না। ‘ইসরায়েল’র সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের প্রায় দুই মাস পর এমন তথ্য দিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইয়াং জার্নালিস্টস ক্লাবকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাসিরজাদে বলেন, “ইরানি সেনাবাহিনীর অগ্রাধিকার এখনো ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন। ‘ইসরায়েল’র সঙ্গে যুদ্ধের পর অগ্রাধিকারে পরিবর্তন আসতে পারে।” প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও ইঙ্গিত দেন, এসব কারখানা শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ও ঘোষণা করা হবে।
সাম্প্রতিক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে আজিজ নাসিরজাদে বলেন, “গত এক বছরে উন্নত ও নতুন কৌশলী ওয়ারহেড সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। তার দাবি, জুন মাসে চলা ১২ দিনের যুদ্ধ যদি আরও দীর্ঘস্থায়ী হতো, ‘ইসরায়েলি’ বাহিনী ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারত না। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ যদি ১৫ দিন চলত, শেষ তিন দিনে তারা আমাদের কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে পারত না।’ এ কারণেই ‘ইসরায়েল’ শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি মেনে নেয় বলে দাবি তার।
মন্ত্রী আরও জানান, তেহরান ওই সংঘাতের সময় তাদের অন্যতম সর্বাধুনিক অস্ত্র কাসেম বাসির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার থেকে বিরত ছিল। এই মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার এবং একে তিনি ‘সবচেয়ে নিখুঁত অস্ত্র’ বলে অভিহিত করেন।
নাসিরজাদের এই মন্তব্য ইরানের ২১ আগস্ট নৌ-মহড়ার সময় এসেছে, যেখানে উপসাগরীয় ওমান ও উত্তর ভারত মহাসাগরে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো হয়। এটি ছিল ‘ইসরায়েল’র সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইরানের প্রথম সামরিক মহড়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা ইরানকে আধুনিক অস্ত্র আমদানির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। ফলে দেশটি পুরোনো অস্ত্রব্যবস্থা উন্নত ও দেশীয় প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়েছে।
গত ১৩ জুন ‘ইসরায়েল’ ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এতে আবাসিক এলাকা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় এবং এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা। জবাবে ‘ইসরায়েলে’ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। এরপর ২২ জুন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। অবশেষে ২৪ জুন ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে সংঘাতের অবসান হয়।