ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সংসদে নারী ও সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব কম

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ০১:১৭ এএম
সিরিয়ার প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে। ছবি- সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর গঠিত সিরিয়ার প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সংসদে নারী ও সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব আশানুরূপ হয়নি। সোমবার (৬ অক্টোবর) ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত এই ভোটে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে নারী ও সংখ্যালঘুদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

অগণতান্ত্রিক বলে সমালোচিত এই প্রক্রিয়ায় স্থানীয় কমিটির কয়েক হাজার সদস্য রোববার ভোট দিয়ে পরিষদের সদস্য নির্বাচন করেন। ২১০ সদস্যবিশিষ্ট এই সংসদের মেয়াদ হবে ৩০ মাস, যা পরবর্তী সময়ে নবায়নযোগ্য। সংসদের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য (৭০ জন) নিয়োগ করবেন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা।

বাকি দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচন করবে স্থানীয় কমিটিগুলো, যেগুলো গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন—যা আবার রাষ্ট্রপতি শারার নিযুক্ত। তবে কুর্দি অধ্যুষিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ সিরিয়ার ড্রুজ সংখ্যাগরিষ্ঠ সুইদা প্রদেশে ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র নাওয়ার নাজমেহ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নির্বাচিত ১১৯ সদস্যের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ নারী। তিনি বলেন, এই সংখ্যা সিরিয়ান সমাজে নারীর ভূমিকা ও অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কমিশনের আগের তথ্যমতে, এক হাজার ৫০০ প্রার্থীর মধ্যে নারী ছিলেন মাত্র ১৪ শতাংশ।

নাজমেহ আরও জানান, বিজয়ীদের মধ্যে মাত্র দুইজন খ্রিস্টান প্রার্থী আছেন। তিনি এ প্রতিনিধিত্বকে ‘সিরিয়ায় খ্রিস্টানদের অনুপাতের তুলনায় অপ্রতুল’ বলে মন্তব্য করেন। তার ভাষায়, ‘প্রেসিডেন্টের নিয়োগকৃত সদস্যদের মধ্যে হয়তো সমাজের অবহেলিত অংশের প্রতিনিধিত্ব কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে কোনো কোটার ব্যবস্থা থাকবে না।’

এবারের নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রথম ইহুদি প্রার্থী হিসেবে আলোচিত সিরিয়ান-আমেরিকান হেনরি হামরা নির্বাচিত হতে পারেননি। দক্ষিণের সুইদা প্রদেশ এবং উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুর্দি অধ্যুষিত এলাকাগুলো, যা এখনো দামেস্কের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ গেছে।

এর আগে, গত ১০ মার্চ সিরিয়ার কুর্দি প্রশাসন এবং দামেস্ক সরকার উত্তর-পূর্বের বেসামরিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বছরের শেষে রাষ্ট্র কাঠামোর সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে একমত হয়েছিল। তবে এই চুক্তি বাস্তবায়ন এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। নাজমেহ বলেন, ‘আমরা সম্পূরক ব্যালটের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি, তবে রাকা ও হাসাকেহ অঞ্চলে ভোটের সময়সূচি নির্ধারণ এখনই সম্ভব নয়।’

মধ্য সিরিয়ার হোমস থেকে নির্বাচিত রাজনৈতিক ও মানবাধিকারকর্মী নুর আল-জান্দালি বলেন, নতুন আইন প্রণেতাদের সামনে একটি বড় দায়িত্ব রয়েছে ‘আমরা কীভাবে স্বাধীনতা, নাগরিকত্ব ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র পুনর্গঠন করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘জননীতি নির্ধারণে নারীদের বাস্তব ও সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।’

চলতি বছরের মার্চে ঘোষিত অস্থায়ী সংবিধান অনুযায়ী, নতুন সংসদ স্থায়ী সংবিধান গৃহীত না হওয়া এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আইন প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করবে।

সূত্র: আল-জাজিরা, ফ্রান্স২৪, তুর্কি টুডে