দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী মাসে দেশটির গিয়ানজু প্রদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনে ট্রাম্প উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা। সফরকালে তার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্মেলনের সাইডলাইন বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে ট্রাম্পের।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, আগামী মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় এপেক সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রীদের বৈঠকের সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হতে পারে। হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা জানান, এপেক বৈঠকের ফাঁকে শি জিনপিং-ট্রাম্পের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হলেও এখনো চূড়ান্ত কোনো পরিকল্পনা হয়নি। এর আগে গত মাসে এক ফোনালাপে ট্রাম্প ও তার স্ত্রীকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানান শি জিনপিং। পাল্টা আমন্ত্রণ জানান ট্রাম্পও, তবে তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণ কোরিয়া সফরের পরিকল্পনা চলছে এবং সেখানে অর্থনৈতিক সহযোগিতাই হবে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতাও আলোচনায় আসবে বলে জানান তিনি।
কর্মকর্তারা আরও জানান, সফরের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিত করা, এটি ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বৈদেশিক সফরগুলোর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এর আগে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরেও তিনি এ ধরনের উদ্যোগ নেন।
এদিকে এশিয়া সফরের সময় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গেও ট্রাম্পের বৈঠক হতে পারে, যদিও কিম বৈঠকে যোগ দেবেন কি না তা অনিশ্চিত। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জায়ে মিয়ং সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তাকে এপেক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান এবং জানান, বৈঠকটি কিমের সঙ্গে আলোচনার সুযোগও তৈরি করতে পারে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘কিম আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। আমরাও তাকে দেখার অপেক্ষায় আছি এবং সম্পর্ক আরও ভালো করব।’
তবে এ সফরটি হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন ট্রাম্পের সঙ্গে শি জিনপিং এবং কিম—দুই নেতার সম্পর্কই টানাপোড়েনে রয়েছে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে শি জিনপিংয়ের আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেন কিম, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই ঘটনায় একাধিকবার সমালোচনা করেন ট্রাম্প, যদিও প্রায়ই তিনি দাবি করেন, এ নেতাদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো।
কুচকাওয়াজ চলাকালে সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘প্রেসিডেন্ট শি এবং চীনের জনগণকে অভিনন্দন। পুতিন ও কিমকেও আমার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেবেন—যখন আপনারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।’
পরদিন এক পোস্টে শি জিনপিং, পুতিন ও মোদির একটি ছবি শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা ভারত ও রাশিয়াকেও চীনের হাতে হারালাম। আশা করি তাদের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধ হোক।’
এদিকে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সম্ভাব্য এ বৈঠকটি হচ্ছে এমন এক সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের মধ্যে আলোচনায় বসেছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। পাল্টা পদক্ষেপে চীনও মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসায়।
চলমান আলোচনা এগিয়ে নিতে ট্রাম্প গত মাসে এক নির্বাহী আদেশে শুল্কহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রাখেন। এর আগে এপ্রিলেই বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চরমে পৌঁছেছিল।