সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:০৯ পিএম

ইসির নির্বাচনি সংলাপ শুরু

ইসির মেরুদণ্ড শক্ত না হলে অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটবে 

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:০৯ পিএম

ইসির মেরুদণ্ড শক্ত না হলে অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটবে 

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতীকসহ দলগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়মিত বিদেশি কূটনীতিকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছেন নিয়মিত। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার শুরু হয়েছে ইসির নির্বাচনি সংলাপ। এদিন সকালে শিক্ষাবিদ এবং বিকেলে সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিতর্কিত নির্বাচন পরিচালনার দায়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারদের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আসন্ন সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার তাগিদ দেন। আর শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা ইসিকে মেরুদ- শক্ত করার তাগিদ দিয়ে বলেন, যদি এমনটা না হয় তাহলে অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

এ সময় তারা ‘মব ভায়োলেন্স’ নিয়ে সতর্কও করেন নাগরিকরা। নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীরা নাসির কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাহস দেখানোর পরামর্শ দিয়ে প্রয়োজনে পদত্যাগেরও আহ্বান জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও বিশ^াসযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।  

সংলাপে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, অনেক অর্জন থাকার পরও আমরা খুব দুঃখী ও দুর্ভাগা। কারণ আমরা এখনো নির্বাচন প্রক্রিয়া ঠিক করতে পারিনি। যে রাষ্ট্র তার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে না, সে জাতি ব্যর্থ হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাবেক তিন প্রধান বিচারপতির পরিণতি আপনারা দেখেছেন। একজন প্রধান বিচারপতিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ৫ আগস্টের আগে। আরেকজনকে মব করে বের করে দেওয়া হয়েছে ৫ আগস্ট। আরেকজন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এখন কারাগারে। আপনারা সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের পরিণতিও দেখেছেন। মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, সংসদ- বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান কিন্তু নেই। পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা নেই। এমন অবস্থায় কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ, যদি মেরুদণ্ড থাকে, যদি সাহস থাকে, তবেই স্বাধীন হতে পারবেন। 

তিনি আরও বলেন, গত ২০ বছরে সব পেশা কালিমালিপ্ত করা হয়েছে। সব পেশার মর্যাদা শেষ করে দেওয়া হয়েছে। সব ভেঙে গেছে। কারো প্রতি কারো কোনো আস্থা বা বিশ্বাস নেই। গতবারও এসেছি, বলেছি। তারা কিন্তু সেই সাহস, মেরুদণ্ড দেখাতে পারেননি। তারা পরিণতি ভোগ করেছেন। সংলাপের দরজা কোনো দিন বন্ধ হয় না। শেষ পর্যন্ত খোলা রাখতে হয়Ñ এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। পুরো পৃথিবী বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। কমিশনকে স্বাধীন ও স্বচ্ছ হতে হবে। 

এ সময় সাংবাদিক ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, আমরা কারিগরি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে কম আলোচনা হয়েছে। আমাদের একটা ধারণা হয়েছে যে, পাঁচজন নির্বাচন কমিশনার মঙ্গলগ্রহ থেকে এসেছেনÑ সব কিছুর দায় তাদের। আমরা অন্যায় করব, অনিয়ম করব, ভোট জালিয়াতি করব, চুরি করব; কিন্তু ইসিকে কাজটা করতে হবে। এটা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ইসির প্রতি আমাদের আস্থা আছে কি নাÑ তার চেয়ে বড় কথা হলো, বর্তমান নির্বাচন কমিশন মনে করে কি না যে বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। যদি মনে করে, তাহলে পরবর্তী নির্বাচনের দায় নিতে হবে। যদি মনে না করে, তাহলে আগামী পাঁচ মাসে সরকারের কী করা উচিত তা জনসম্মুখে জানাতে হবে। তাহলে ইসির প্রতি জনাস্থা আসবে। সোহরাব হাসান আরও বলেন, নির্বাচন করে জনগণ। কিন্তু জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার, ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা সহায়তা না করলে সম্ভব নয়। আপনাদের যেমন নির্বাচন করার মানসিকতা থাকতে হবে, তেমনই নির্বাচন না করার মানসিকতাও থাকতে হবে। যদি মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তাহলে নির্বাচন থেকে সরে আসা উচিত, আপনাদের পদত্যাগ করা উচিত। বিগত ইসিকেও একই কথা বলেছিলাম।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে ভোটাররা যেন নিরাপত্তা পায়, তা এখনই দৃশ্যমান করতে হবে। অনেক প্রার্থী পোলিং এজেন্ট দিতে পারেন না। বড় দলগুলো ভয়ভীতি দেখায়। এটা যেন না হয় তা কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জারিফ রহমান বলেন, অদৃশ্য একটা ভয় নির্বাচনের আগে বিরাজ করে। ভোটের আগে দাগি আসামিরা যেন অংশ নিতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচন-পরবর্তী নিরাপত্তাব্যবস্থা যেন বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার ঠেকাতে ফ্যাক্ট-চেকিং ও কুইক রেসপন্স টিম গঠন করতে হবে।

এর আগে একই দিন সকালে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধিরা বর্তমান পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে গতানুগতিক নির্বাচনের পরিণতি নিয়ে ইসিকে সতর্ক করেন। সংলাপে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নানা পরামর্শ দেন। তারা বলেন, যেকোনো সময় মব সৃষ্টির বিষয়ে কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে। এ ধরনের ঘটনা পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে। কমিশনকে সাহসী হয়ে এবং মেরুদ- সোজা করে স্বাধীনভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তারা। যাতে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া যায়।

প্রবাসীদের জন্য আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও বিষয়টি বিতর্কিত হওয়ার সুযোগ নিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে, নির্বাচনের আগে ও পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য ও এআই-জেনারেটেড তথ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশল হাতে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সচেতনতা তৈরি না করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) পদ্ধতি চালু না করার পরামর্শও দিয়েছেন অনেকে।

এ ছাড়া, মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। জাতীয় প্রতীক শাপলা কোনো বিশেষ দলকে না দেওয়ার বিষয়ে ইসিকে অনড় থাকার জন্য অভিনন্দন জানানো হয়। একই সঙ্গে শুধু একক প্রার্থীর আসনেই নয়, সব আসনে ‘না ভোট’ প্রবর্তন করা এবং নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

দুই বৈঠকেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক চিন্তার অগ্রদূত হিসেবে আপনাদের সঙ্গে এই সংলাপ আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ভূমিকা রাখবে। তিনি জানান, প্রবাসীদের জন্য আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা এবার মাইলফলক হয়ে থাকবে। নির্বাচন স্বচ্ছ করতে চাওয়ার কথা জানিয়ে সবার সহযোগিতা চান তিনি। 

সিইসি জানান, ফোন কলের মাধ্যমে তথ্য ফাঁসের ভয়ে তিনি অনেকের ফোন ধরেন না। তবে ইসির দরজা খোলা এবং যেকোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা নির্বাচন স্বচ্ছ করতে চাই। সবাই যাতে দেখতে পারে সে ব্যবস্থা করতে চাই। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাব। দেশীয় পর্যবেক্ষক যতটা পারি বেশি নিবন্ধন দিতে চাই। আমরা চেষ্টা করব আপনাদের পরামর্শ বাস্তবায়ন করার। অতীতের মতো হবে না। অনিয়ম হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা ফিরিয়ে এনেছি।

এ সময় নির্বাচন কমিশনার (ইসি) তাহমিদা আহমদ জানান, নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৯ কোটি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায়ই রয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ মানুষ। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের (বিবিএস) দেওয়া তথ্যকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলেও মন্তব্য করেন ইসি তাহমিদা। তিনি বলেন, জনসংখ্যা নিয়ে বিবিএসের ডেটা প্রশ্নবিদ্ধ। একবার তারা যেটা প্রকাশ করল, পরে আবার সেটা কমিয়ে দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। তাহমিদা আহমদ বলেন, আমরা যে ভোটার তালিকা করলাম বাড়ি বাড়ি গিয়ে, সেখান থেকে তথ্যটা পেয়েছি। এটা  কেবারে ঠিক তথ্য। আমাদের লোকসংখ্যা হলো ১৯ কোটি। এর মধ্যে ১ কোটি ৫১ লাখ বাইরে, প্রবাসী যেটাকে বলা হয়। শুধু ঢাকায় রয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ মানুষ।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!