সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:২০ পিএম

ধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তপ্ত পাহাড়, নিহত ৩

রূপালী প্রতিবেদক ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:২০ পিএম

ধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তপ্ত পাহাড়, নিহত ৩

  • স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার ঘোষণা
  • মেজরসহ ১৩ সেনা সদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ তিন পুলিশ সদস্য এবং আহত আরও অনেকে

খাগড়াছড়ির গুইমারায় মারমা স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়ি এলাকা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জুম্ম ছাত্র-জনতার সংঘর্ষে অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন মেজরসহ ১৩ সেনা সদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ তিনজন পুলিশ সদস্য এবং আরও অনেকে। গতকাল রোববার দুপুরে গুইমারার রামেসু বাজারে এ ঘটনা ঘটে। তবে রাত ৯টায় এ খবর লেখা পর্যন্ত হতাহতদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। 

এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শিগগিরই তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধারণপূর্বক শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।   

জানা গেছে, গত শনিবার খাগড়াছড়ি সদরে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সব দল-মতের সঙ্গে আলোচনার পর খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তী সময়ে মধ্যরাতে সামাজিক মাধ্যমে খাগড়াছড়ি জেলায় পুনরায় অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। 

এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘আজকে (গতকাল) যেটা হলো, আমার কাছে ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক মনে হচ্ছে। ১৪৪ ধারা জারির পরও এমন ঘটনা ঘটার কথা ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী তিনজনের বেশি মানুষ জড়োই হতে পারবে না। অথচ সেখানে দল বেঁধে মানুষ মিছিল করেছে। আমি বলব, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় নেতৃত্বÑ উভয়েরই অপরিণত আচরণের জন্য এটা হয়েছে। কেউ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেনি।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন অবরোধের সমর্থনকারীরা। বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি উচ্ছৃঙ্খল জনতা ইউপিডিএফের প্রত্যক্ষ উসকানিতে টায়ার জ্বালিয়ে এবং গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে। সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রামসু বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ সরানোর সময় ৫০ থেকে ৬০ জন পাহাড়ি সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এর কিছুক্ষণ পরে আনুমানিক ২০০ থেকে ৩০০ পাহাড়ি সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে সেনাবাহিনীর টহলদলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় সেনাবাহিনীর গুইমারা জনের টুআইসিসহ ১২ জন সেনা সদস্য আহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে মাইকের মাধ্যমে বিক্ষুব্ধ পাহাড়ি সমাবেশকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। তারা সরে না যাওয়ায় ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করা হয়। এতে তারা আরও মারমুখী হয়। ফলশ্রুতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১০ থেকে ১৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে উচ্ছৃঙ্খল পাহাড়ি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

একপর্যায়ে দুপুরের দিকে বাঙালি ও পাহাড়ি উভয়ের মধ্যেই সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায়। গুইমারার রামসু বাজারে এলাকায় বেশ কয়েকটি স্থানে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা পাহাড়ের উঁচু অবস্থান থেকে সংঘর্ষরত জনতার ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের মাধ্যমে গোলাবর্ষণ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুইজন পাহাড়ি নিহত হওয়ার খবর প্রাথমিকভাবে জানা যায়।  

স্থানীয় বাসিন্দা মংসাজাই মারমা ও কংজরী মারমা জানান, অবরোধের সমর্থনে তারা খাদ্যগুদামের সামনের সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এলে তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর গুলি চালান। গুলির পরপরই লোকজন ভয়ে দিগি¦দিক পালিয়ে যায়। এরপর ২০-২৫ জন লোক এসে রামেসু বাজার ও বসতবাড়ি লুটপাট করে এবং যাওয়ার সময় আগুন ধরিয়ে দেয়। এসব লোকের সঙ্গে মুখোশ পরা লোকও ছিল। দোকানপাট ও বসতবাড়ির সঙ্গে অনেকগুলো মোটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

নিহতের বিষয়ে খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন মোহাম্মদ সাবের বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় গুইমারা থেকে তিনজনের মরদেহ এসেছে খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতালে। তারা যুবক। লাশগুলো মর্গে রাখা হয়েছে। সোমবার (আজ) সকালে ময়নাতদন্ত করা হবে। হাসপাতালে আরও চারজন চিকিৎসাধীন আছেন।

পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে গত শনিবার ভোর ৫টা থেকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল রোববার সকালে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেন অবরোধকারীরা।

গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে ওই কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে অবরোধ চলাকালে গতকাল দুপুরে গুইমারার একটি বাজারে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুনে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়। এ সময় বাজারের পাশে থাকা বসতঘরও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেলা ১টায় খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজারে এ ঘটনা ঘটে। বাজারটি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে। বাজারে আগুন দেওয়ার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে আগুনে বাজারের দোকানপাট জ্বলতে দেখা যায়। বাজারের দোকান মালিকদের অধিকাংশ পাহাড়ি বলে জানা গেছে। 

খাগড়াছড়ির গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক চৌধুরী জানান, অবরোধ নিয়ে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে ঝামেলা চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও ঝামেলা হয়। এখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।


 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!