সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:২৩ পিএম

বিশ্ব হার্ট দিবস আজ

ভালো নেই ‘হৃদয়’

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:২৩ পিএম

ভালো নেই ‘হৃদয়’

  • দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ ভাগ অসংক্রামক রোগে; যার ৩৬.১ শতাংশ হৃদরোগী
  • প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগে
  • দেশে ৯৭ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে হৃদরোগের ঝুঁকিতে
  • সম্প্রতি দেশে হৃদরোগে আক্রান্তদের মধ্যে ২০ শতাংশই তরুণ
  • বিশ্বে প্রতিবছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু অন্তত ১ কোটি ৮০ লাখ

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্যমতে, প্রতিবছর পৃথিবীজুড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে ১ লাখ ১২ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাত্র ১০ বছর আগেও ৩০ বছরের নিচে কোনো হৃদরোগের রোগী পাওয়া যেত না। কিন্তু সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্তদের মধ্যে ২০ শতাংশই তরুণ।

চিকিৎসকরা বলছেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের দৈনিক রোগীর পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ ভাগই হচ্ছে অসংক্রামক রোগে; যার ৩৬ দশমিক ১ শতাংশই হৃদরোগী। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৯৭ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা বয়সে তরুণ। হৃদযন্ত্রের নানা ধরনের রোগের পাশাপাশি মৃত্যুও হচ্ছে অনেকের।

এ অবস্থায় আজ সোমবার ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বের পাশাপাশি দেশজুড়ে পালিত হতে যাচ্ছে ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’। ‘একটি বিট মিস করবেন না’ প্রতিপাদ্যে পালিত হতে যাওয়া দিবসটি উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন আয়োজন করছে নানা আয়োজনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সময়ে হৃদরোগে বয়স্কদের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছেন তরুণরাও। এমনকি ভুগছে শিশুরাও। এর অন্যতম কারণÑ অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া। হৃদয়কে ভালো রাখতে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের বিকল্প নেই যেন।  

তরুণ শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক পৃথ্বীরাজ। ২০১১ সালে নিজের হাতে তৈরি করেন ‘স্টুডিও জিলাপি’। যখন এই স্টুডিও তৈরি করেন সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘জিলাপি নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। এখানে ছবি দেখব, গান শুনব। এখান থেকে নতুন নতুন গান তৈরি করব। এটা একান্তই আমার জগৎ। এই ঘরটাতেই কাজ করতে করতে যদি চলে যাই, তা হবে আমার জন্য অনেক শান্তির।’ তার সেই চাওয়া পূরণ হয়, কিন্তু তা ছিল অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। এই জিলাপি স্টুডিওতেই কাজ করা অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন পৃথ্বীরাজ। মৃত্যুর আগের রাত ১০টার দিকে কাজের জন্য জিলাপি স্টুডিওতে যান পৃথ্বীরাজ। এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার স্ত্রী বারবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করছিলেন না। শুরুতে তার স্ত্রী ধারণা করেছিলেন, পৃথ্বীরাজ হয়তো ফোন সাইলেন্ট করে কাজে ব্যস্ত। কিন্তু অনেকক্ষণ ফোনে কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এরপর পৃথ্বীরাজের ভাই ঋতুরাজ ও আরেক তরুণ সংগীতশিল্পী সৈয়দ নাফিজকে নিয়ে সেখানে ছুটে যান। স্টুডিওর দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, পৃথ্বীরাজ চেয়ারেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছেন। 

সম্প্রতি পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের আসামের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গও মারা যান স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক করে। অতিমাত্রায় মদে আসক্ত ছিলেন এই শিল্পী। এর আগেও দেশটিতে অভিনয়শিল্পী সিদ্ধার্থ শুক্লা, সংগীতশিল্পী কেকের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিক মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে যায় সব বয়সের মানুষকে। 

পৃথ্বীরাজ, জুভিন গার্গ, সিদ্ধার্থ বা কেকের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও অন্ধকারেই থেকে যায় অনেক তরুণের হৃদরোগে ভুগে নির্মম পরিণতির কথা। এমনকি শিশুকাল থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কঠিন দিন পার করতে হয় অনেককে। এমনই একজন শিক্ষার্থী রাজধানীর ইংরেজি মাধ্যমের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সিদ্ধার্থ ধর। বুকে প্রচ- ব্যথা দেখা দিলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই ক্লিনিক থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১০ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ইসিজি ও এনজিওগ্রামসহ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান, সিদ্ধার্ত হৃদরোগে আক্রান্ত। তার হৃদযন্ত্রে রয়েছে একটি বড় ছিদ্র।

সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের কাছে আসা হৃদরোগে আক্রান্তদের প্রায় ২০ শতাংশই তরুণ। এই রোগের চিকিৎসায় গড়ে ওঠা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সেবা নেওয়া রোগীর পরিসংখ্যানেও এ পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন মেলে। পরিসংখ্যান বলছে, এই হাসপাতালে ১০ বছর আগে চিকিৎসা নেওয়া মোট রোগীর ৫ শতাংশ ছিলেন তরুণ। এখন সেটি বেড়ে এখন ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন চিকিৎসকরা।

দেশে হৃদরোগী বাড়ার কারণ হিসেবে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ওয়াদুদ চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের দেশে সংক্রামক ব্যাধি অনেক বেশি ছিল। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ফলে বর্তমানে সংক্রামক ব্যাধি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ছে অসংক্রামক রোগ। অসংক্রামক রোগ পৃথিবীজুড়েই বাড়ছে। মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হয়েছেÑ পাশাপাশি এসব রোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার মধ্যে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ অন্যতম। বাংলাদেশের ৬৭ শতাংশ মানুষ নন কমিউনিকেবল ডিজিজে (অসংক্রামক  রোগ) মারা যান। যার মধ্যে হৃদরোগ অন্যতম। মূলত জাংক ফুড ও মাদকে আসক্তির কারণেই তরুণদের একটা বড় অংশ হৃদরোগে ভুগছে। ১০ বছর আগে যুবকদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল। বর্তমানে তা ২০ শতাংশ পৌঁছেছে।’

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ্ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে হৃদরোগের প্রকোপ অনেক বেশি। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় এই রোগে। এসব রোগীর ঝুঁকি অনেক বেশি হওয়ার প্রধান কারণ তামাকের ব্যবহার, হাসপাতালে কাক্সিক্ষত সেবা না পাওয়া, লবণ বেশি খাওয়া এবং ওজন বেড়ে যাওয়া।’ তিনি বলেন, ‘এসব কারণে আমাদের এখন কম বয়সিরা আক্রান্ত হচ্ছেন। একটা ছেলে ১৬ বছর বয়সে সিগারেট খাওয়া শুরু করলে ৪০ বছরে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বে যে পরিমাণ মানুষ মৃত্যুবরণ করে তার শতকরা ৩১ শতাংশ হৃদরোগের কারণে। বাংলাদেশেও হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। উন্নত আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর জীবনাভ্যাস, অসচেতনতা এসব কারণে হৃদরোগ শুধু বড়দের নয় শিশু-কিশোরদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। তাই পরিমিত খাদ্যাভাস এবং কায়িক শ্রমের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে জানিয়ে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ চক্রবর্তী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘যেহেতু হৃদরোগের ৮০ শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য তাই মানুষের এটি প্রতিরোধে সদিচ্ছা জরুরি। তবে আমাদের মধ্যে সচেতনতার খুবই অভাব। কেউ যদি উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখলেই হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে না। কারো যদি মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান-অ্যালকোহলে আসক্তি থাকে তাহলে তার হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। বাজে অভ্যাস পরিহারের পাশাপাশি ওজন বেশি হলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। কারো যদি কোলেস্টেরল বেশি থাকে তাহলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’  

বিশ্ববাসীকে হৃদযন্ত্রসহ, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও সুস্থ জীবনযাপন শেখানোর উদ্দেশ্যে ২০০০ সালে বিশ্ব হৃৎযন্ত্র দিবস পালন শুরু হয়। ২০১২ সালে বিশ্বনেতারা ঠিক করেন তারা ২০২৫ সালের মধ্যে হৃদরোগের মতো অসংক্রামক ব্যাধি কমাতে ভূমিকা রাখবেন। হার্টের রোগের লক্ষণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, বুকে চাপ চাপ ব্যথা, বুকের এক পাশে বা বুকজুড়ে অসহ্য ব্যথা। বেশির ভাগ সময় বুকে ব্যথার তীব্রতার জন্য শরীরের অন্য অংশে ব্যথা টের পাওয়া যায় না। অনেক সময় ব্যথা শরীরের এক অংশ থেকে অন্য অংশে চলে যেতে পারে। যেমনÑ বুক থেকে হাতে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত বাম হাতে ব্যথা হলেও দুই হাতেই ব্যথা হতে পারে, মাথা ঘোরা, ঝিমঝিম করা ও বমি ভাব, ঘাম হওয়া, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, বুক ধড়ফড় করা বা বিনা কারণে অস্থির লাগা, সর্দি বা কাশি হওয়া। 

হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে করণীয় হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে সেসব খাবার খেতে হবে বেশি করে। এসব খাবারের কারণে শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। শিম, মটরশুঁটি, ডাল জাতীয় শস্য এবং ফলমূল, আলু, মুলা, গাজর, আটা ও ব্রাউন রাইসে প্রচুর আঁশ রয়েছে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট বাঁধা চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। এতে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ার ভয় থাকবে না। ফলে কমবে হৃদরোগের ঝুঁকি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!