শরীরে কতটা ফ্যাট জমেছে তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কোথায় সেটা জমছে সেটিও ক্যানসারের ঝুঁকির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শরীরজুড়ে ফ্যাট বা চর্বির বণ্টন ক্যানসারের ঝুঁকিকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে এবং প্রতিটি ক্যানসারের জন্য এই ধরন এক নয়।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে এক আন্তর্জাতিক গবেষক দল শুধু বডি মাস ইনডেক্স বাইরে গিয়ে খুঁজে দেখেছেন, শরীরের নির্দিষ্ট অংশে চর্বি জমা যেমন হাত-পা, কিংবা ভিসেরাল ফ্যাট সামগ্রিক ওজনের তুলনায় আলাদা প্রভাব ফেলতে পারে কি না।
বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই জানেন স্থূলতা একাধিক ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু এতদিন বেশির ভাগ তথ্য সংগ্রহ হয়েছে ইগও দিয়ে, যা মূলত ওজন ও উচ্চতার অনুপাত। সমস্যা হলো, ইগও কখনোই বলে দিতে পারে না শরীরের গঠন কতটা পেশিবহুল আর কতটা চর্বিযুক্ত। সবচেয়ে বড় বিষয়, এটি চর্বি কোথায় জমছে তা বোঝায় না।
হৃদরোগ গবেষণা বহু বছর ধরে প্রমাণ করেছে, কেন্দ্রীয় বা ভিসেরাল ফ্যাট সবচেয়ে ক্ষতিকর। তবে ক্যানসারের ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য কি নাÑ তা এতদিন স্পষ্ট ছিল না। ব্রিস্টলের গবেষক দল তাই ১২ প্রকার স্থূলতাসংশ্লিষ্ট ক্যানসারের ওপর এই ধারণা পরীক্ষা করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছে এন্ডোমেট্রিয়াল, ডিম্বাশয়, স্তন, কোলোরেক্টাল, অগ্ন্যাশয়, মাল্টিপল মাইলোমা, লিভার, কিডনি, থাইরয়েড, গলব্লাডার, ইসোফেজিয়াল অ্যাডিনোকারসিনোমা ও মেনিঞ্জিওমা।
গবেষকরা ব্যবহার করেছেন মেন্ডেলিয়ান নামক পদ্ধতি, যেখানে জেনেটিক ভ্যারিয়েশন ব্যবহার করে বোঝা যায় জীবনের শুরু থেকেই কার কোথায় চর্বি জমার প্রবণতা আছে। যেহেতু জিন জন্মের সময় নির্ধারিত, তাই এই পদ্ধতি কারণ আর সহসম্পর্কের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য করতে সাহায্য করে।
ফলাফল বলছে, চর্বির অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ তবে সবক্ষেত্রে নয়। কিছু ক্যানসারের ক্ষেত্রে মোট চর্বি থেকে বেশি প্রভাব ফেলে কোথায় সেই চর্বি জমছে। আবার কিছু ক্যানসারে উল্টোটা সত্যি। আর কিছু ক্যানসারে দুটোই প্রভাব রাখে।
এমনকি যখন অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়, তখনো কোন অংশ ঝুঁকি বাড়াবে তা ক্যানসারভেদে ভিন্ন। এই বৈচিত্র্য দেখায়, চর্বি আর টিউমারের মধ্যে সম্পর্কিত জৈব রাস্তা প্রতিটি টিস্যুতে আলাদা হতে পারে। কারণ ইগও কেবল আকার বোঝায়, গঠন নয়। দুজন মানুষের ইগও একই হলেও যদি একজনের ভিসেরাল ফ্যাট বেশি হয় আর অন্যজনের শুধু ত্বকের নিচে চর্বি থাকে, তবে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি একেবারেই আলাদা।
এই গবেষণার ফল সাম্প্রতিক সময়ে স্থূলতা সংক্রান্ত চিকিৎসা কাঠামোর সঙ্গেও মিলে যায়, যেখানে ইগও-কে ত্রুটিপূর্ণ মাপকাঠি হিসেবে চিহ্নিত করে চিকিৎসকদের শরীরের গঠন ও চর্বির বণ্টন বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। অতএব, স্থূলতার চিকিৎসায় শুধু ওজন কমানো নয়, বরং ক্ষতিকর চর্বি কমানো কতটা সম্ভব হচ্ছে তা দিয়েও মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ হরমোন, প্রদাহ, ইনসুলিন সিগনালিং কিংবা ইমিউন কার্যকলাপÑ সবই নির্ভর করে চর্বির অবস্থানের ওপর।
এটাই ব্যাখ্যা করতে পারে কেন ডিম্বাশয়ের ক্যানসার এক ধরনের ফ্যাট প্যাটার্নে বেশি সংবেদনশীল, আর কোলোরেক্টাল ক্যানসার আরেক ধরনের প্যাটার্নে। এসব জৈব প্রক্রিয়া বোঝা গেলে নতুন ওষুধ কিংবা প্রতিরোধের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন