রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন গতকাল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আয়োজনটিকে ঘিরে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে জমজমাট প্রচার চালাতে দেখা গেছে নির্বাচনে স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীদের। প্রার্থীদের শেষ সময়ের প্রচারে ক্যাম্পাসে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।
অন্যদিকে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্ততি চূড়ান্ত করছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সভা হয়েছে। সভা শেষে তারা জানান, নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসে ২ হাজার পুলিশ, ৬ প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন র্যাব কাজ করবে।
প্রতি বছরের মতো গতকাল ২০২৪-২৫ সেশনের প্রথম বর্ষের প্রায় ৪ হাজার নবীন শিক্ষার্থীকে ফুল, কলম ও বিভিন্ন শিক্ষা সামগ্রী দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় মিলনায়তনে পরিপূর্ণ ছিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভিড়ে।
গতকাল সকাল থেকেই ছাত্রদল, ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলসহ বিভিন্ন প্যানেলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রার্থীরা বলেন, একই বর্ষের এত শিক্ষার্থীকে এক সঙ্গে পাওয়া কঠিন। এই অনুষ্ঠানে তাদের পাওয়া গেছে। তাই প্রার্থীরা তাদের বার্তা পৌঁছাতে কাজ করছেন।
মিলনায়তন প্রাঙ্গণে ঢোল ও একতারা হাতে গানে গানে নিজের প্রচার চালাচ্ছিলেন ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের সহকারী সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রার্থী শাহরিয়র আলম অথৈ ও তার কয়েকজন বন্ধু। এ সময় প্রচার চালাতে আসেন একই প্যানেলের সহ-সভাপতি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবির। পরে অথৈর হাতে থাকা একতারা আবির নিজের হাতে নিয়ে নেন। তিনি সেটি বাজান এবং অথৈ গানের সুর ধরেন। আবির শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় ও শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করে যাব।’
মিলনায়তন প্রাঙ্গণে এ সময় প্রচার চালাতে দেখা গেছে ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থীসহ অনেক প্রার্থীকে। প্যানেলের প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাসিমুখে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন। এমন সময়ে নবীন এক শিক্ষার্থীকে দেখা যায় তিনি জাহিদকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং জাহিদও সেটি গ্রহণ করেন।
নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে শিউলি ফুল ও লিফলেট দিয়ে প্রচার চালাতে দেখা গেছে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী নোমান ইমতিয়াজকে। তিনি বলেন, ‘আমি সকাল বেলায় আসার পথে স্টেডিয়ামের পেছনে দেখলাম একটি শিউলি গাছের নিচে ফুল পড়ে বিছিয়ে আছে। তখন মনে হলো শিক্ষার্থীদের মাঝে ফুল বিনিময় করা যেতে পারে।’
শিক্ষার্থীদের বহুল প্রত্যাশার এ নির্বাচন আয়োজিত হচ্ছে প্রায় তিন যুগ পরে। এ বছরেও নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে তিনবার। তবুও নির্বাচনের নিয়ে আনন্দের কমতি নেই শিক্ষার্থীদের মাঝে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, নির্বাচনি তারিখ পরিবর্তনে কিছুটা আমেজ কমলেও শেষ সময়ে সেটি উৎসবে পরিণত হয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাফি উজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনি আমেজে বার বার তারিখ পরিবর্তনে ভাটা পড়লেও এখন উৎসব উৎসব মনে হচ্ছে।’
ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের জিএস ফাহিম রেজা বলেন, ‘আমরা শেষ সময়ের প্রচার চালাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন।’
ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গত রোববার রাত ১০টা থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের দেখা গেছে। এ ছাড়াও ওইদিন ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু সুফিয়ান, বিজিবি ও র্যাবের প্রতিনিধি দল। পরে তারা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে একটি সভা করেন।
সভা শেষে পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, ‘ভোটের তিন দিন ক্যাম্পাসে দুই হাজার পুলিশ, ৬ প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন র্যাব কাজ করবে। এ ছাড়াও নিরাপত্তার জন্য বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরা সহযোগিতা করবেন।’
সার্বিক বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি, সবার সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন শিক্ষার্থীদের উপহার দিতে পারব।’
এদিকে গত রোববার রাত ১০টা থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের অংশ হিসেবে দুটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালানো হয়েছে। হল দুটি হলোÑ বিজয়-২৪ এবং মতিহার হল। অভিযানে অংশ নেয় পুলিশ, প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রশাসন। এ দুই হলে অবস্থানরত মোট পাঁচজন অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘দুটি হলে যৌথ তল্লাশি চালানো হয়েছে। মতিহার হলে অভিযান চালিয়ে ৩ জন এবং বিজয়-২৪ হলে ২ জন অনাবাসিক শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে। তারা সবাই সংশ্লিষ্ট হলেরই ছাত্র। তবু আমরা তাদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দিয়েছি।’
আগামী ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে রাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। রাকসু ও সিনেট নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। গণনা শেষে সেদিনই ফল ঘোষণা করা হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন