মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ১২:০০ এএম

জাতিসংঘ মিশন

পুলিশ বাহিনীতে নতুন ১৯ ধরনের যানবাহন আসছে

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ১২:০০ এএম

পুলিশ বাহিনীতে নতুন ১৯  ধরনের যানবাহন আসছে

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের ১৯৫ সদস্যের নতুন একটি ইউনিট পাঠাবে বাংলাদেশ। এই ইউনিটের জন্য এবং বর্তমান মিশনের প্রয়োজনে নতুন যানবাহন কিনবে সরকার। এসব কেনাকাটার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হলেও অর্থ বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন। তাই অর্থ বিভাগের অনুমোদন চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বিশেষ ইউনিটগুলোর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রায় ১৬৭ কোটি টাকার আধুনিক যানবাহন ও সরঞ্জাম কেনার অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই ক্রয়ের মাধ্যমে জাতিসংঘের মিশনে অংশগ্রহণকারী পুলিশের সক্ষমতা, নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ শাখা-৪ থেকে জারি করা একটি অনুমোদনপত্রে এই সিদ্ধান্তের বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ছয়টি গঠিত পুলিশ ইউনিট (এফপিইউ), দুটি সুরক্ষা প্রহরী ইউনিট (পিজিইউ) এবং একটি বিশেষ অভিযান ইউনিটের (সোয়াট) জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন ও সরঞ্জাম কেনা হবে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সুনাম ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বজায় রাখতে এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি ও যানবাহন অন্তর্ভুক্ত করতে এ ধরনের উদ্যোগকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থবছর ২০২৫-২৬ এর এই অনুমোদন দেশের পুলিশ বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন।

আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ক্রয় নির্দেশ

চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানে অংশ নেওয়া সব পুলিশ ইউনিটের সক্ষমতা ও মান বজায় রাখতে ‘সংগঠনের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উপকরণ তালিকা (এসইউআর)’ অনুসরণ করে এই ক্রয় সম্পন্ন করতে হবে। জাতিসংঘের নির্ধারিত মান অনুযায়ী প্রতিটি যানবাহন ও সরঞ্জামের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য এবং নিরাপত্তা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে বলে মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, এই ক্রয় প্রক্রিয়া বাংলাদেশ পুলিশের সদর দপ্তরের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হবে। বরাদ্দের অনুমোদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব বদরুল আলম।

যানবাহনের বিস্তারিত তালিকা ও সংখ্যা

চিঠির তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণির মোট ১৯ ধরনের ৭৯টি যানবাহন ও বিশেষ সরঞ্জাম কেনা হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সাঁজোয়া যান, উদ্ধার ট্রাক, পানি বহনকারী ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, জিপ, বাস এবং ভারী সরঞ্জাম উত্তোলন যন্ত্র (ফর্ক লিফট) ইত্যাদি।

পদাতিক পরিবহন সাঁজোয়া যান (চাকার উপর ভিত্তিক, শ্রেণি-৩) ১৬টি। পুলিশ সাঁজোয়া সুরক্ষা যান (সশস্ত্র বা অসশস্ত্র) ৮টি। জনতা নিয়ন্ত্রণের যান ৮টি। পানি কামান ট্রাক (দশ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা) ৮টি। চার চাকার সামরিক জিপ (বেতার যোগাযোগযন্ত্রসহ) ১১টি। বাস (চব্বিশের অধিক যাত্রীবাহী) ২টি। অ্যাম্বুলেন্স (চার চাকাচালিত) আটটি। কার্গো ও টহল ট্রাক (দেড় টন ধারণক্ষমতা, বিচ্ছিন্নযোগ্য বেঞ্চ ও ছাউনি-যুক্ত) ১০টি। ফুয়েল ট্যাঙ্কার ট্রাক (দশ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা) একটি। উদ্ধার ট্রাক (দশ টন ধারণক্ষমতা) দুটি। নিকাশযান বা পয়ঃবাহী ট্রাক ২টি। ভারী সরঞ্জাম উত্তোলন যন্ত্র (পাঁচ টনের বেশি ধারণক্ষমতা) দুটি। এক্সেল ট্রাক (হালকা পণ্য পরিবহনের জন্য) তিনটি। জ্বালানি ট্রেলার (দুই হাজার লিটার ধারণক্ষমতা, প্রবাহ মাপযন্ত্রসহ) দুটি। পানি ট্রেলার (দুই হাজার লিটার ধারণক্ষমতা) চারটি। এই যানবাহনগুলোর বেশির ভাগই আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ আছে।

জাতিসংঘের মূল্যায়ন সফর ও নতুন নির্দেশনা

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশের একটি প্লাটুন বিশেষ অভিযান ইউনিটের (সোয়াট) ‘মূল্যায়ন ও পরামর্শ সফর’ (এএভি) শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে। এই সফরে জাতিসংঘের মূল্যায়ন দল ইউনিটের সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ ও মান যাচাই করবে। এরই অংশ হিসেবে নতুন যানবাহন সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে জাতিসংঘের নির্ধারিত মানদ-ে বাংলাদেশের ইউনিট উত্তীর্ণ হতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানে প্রেরিত সদস্যদের নিরাপত্তা, চলাচল, যোগাযোগ এবং উদ্ধার কার্যক্রমে দ্রুততা আনতে এই যানবাহনগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষা ভূমিকা

বাংলাদেশ বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানে অন্যতম শীর্ষ অবদানকারী দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সাত হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা দায়িত্ব পালন করছেন।

এই পুলিশ ইউনিটগুলোতে নারী সদস্যদের অংশগ্রহণও ক্রমবর্ধমান, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ শুধু আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালনের অংশ নয়, এটি দেশের কূটনৈতিক ও পেশাদার সক্ষমতার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়।

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণে ইতিবাচক প্রভাব

বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘ মিশনে অংশ নেওয়া সদস্যদের জন্য উন্নত সরঞ্জাম ও যানবাহন সংগ্রহ শুধু বিদেশি মিশনে নয়, দেশে ফিরে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও দুর্যোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অভিজ্ঞ শান্তিরক্ষীরা উন্নত সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে ফিরে প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রমে দক্ষতা বাড়ানো। ফলে পুলিশ বাহিনীর সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

সতর্কতা ও স্বচ্ছতার নির্দেশ

চিঠিতে বলা হয়েছে, ক্রয় প্রক্রিয়ায় সরকারি ক্রয়বিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রতিটি যানবাহন ক্রয়ের ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ, সরবরাহ সময়সীমা, প্রযুক্তিগত স্পেসিফিকেশন ও গুণগত মান যাচাইয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রার ওঠানামা, আমদানি শুল্ক এবং পরিবহন ব্যয়ের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!