সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে ঐতিহাসিক ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’। দিবসটি পালন উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাজধানীসহ সারা দেশে সমাবেশ এবং বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি দিবসটি পালন করে নানা সংগঠনও।
১৯৭৫ সালের এই দিনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অরাজকতা ও অনিশ্চয়তার ঘোর কাটিয়ে বাংলাদেশে সূচিত হয়েছিল নতুন যাত্রা। সেদিন রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের রাস্তায় নেমে আসে হাজারো মানুষ। উদযাপিত হয় ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এর পরই রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
ওই দিন জাতি আবারও শুনেছিল তার কণ্ঠÑ ‘আমি জিয়া বলছি’। মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে যে কণ্ঠে জাতি শুনেছিল স্বাধীনতার আহ্বান, আবারও সেই কণ্ঠে তারা শুনেছিল আশ্বাসের সুর। মুহূর্তেই জেগে উঠেছিল ১৯৭১ সালের মুক্তির প্রেরণা, যেন বুকের ভার নেমে গিয়েছিল, এক স্বস্তির নিঃশ্বাসে মুখরিত হয়েছিল দেশ। স্বতঃস্ফূর্ত বিপ্লব ও বিজয়ের মিছিলে ভরে গিয়েছিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের রাস্তা। সৈনিক ও সাধারণ মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত রেখে উচ্চারণ করেছিল: ‘সিপাহি-জনতা ভাই ভাই; বাংলাদেশ জিন্দাবাদ; মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ; সিপাহি-জনতা এক হও।’
ইতিহাসের এই দিনটি তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস নামে পরিচিতি পায়। ১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান দেশকে ভূরাজনৈতিক, সম্প্রসারণবাদী ও নব্য ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রের জাল থেকে মুক্ত করেন। জাতীয় সংকটের সেই ভয়াল মুহূর্তে দেশপ্রেমিক বিপ্লবী সৈনিক ও জনতা ঐক্যবদ্ধ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের পরাস্ত করে জেনারেল জিয়াকে নেতৃত্বে আনেন।
৭ নভেম্বরের পর থেকেই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও স্বাতন্ত্র্যবোধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও পরিচয়ের বিকাশ শুরু হয়। নতুন ভোরের সেই ইতিহাসের নায়ক হয়ে ওঠেন শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি পালন করে। গতকাল পালিত এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন। এদিন সকাল ১০টায় দলের জাতীয় নেতারাসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মী সাবেক রাষ্ট্রপতি শহিদ জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। বিকেলে নয়াপল্টন থেকে র্যালি বের করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। এ ছাড়া সারা দেশে বিএনপির উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নিজ নিজ উদ্যোগে আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করে।
এর আগে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল গত ৫ নভেম্বর আলোচনা সভা, ছাত্রদল আজ শনিবার আলোচনা সভা ও কাল রোববার আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ওলামা দল রোববার এতিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, তাঁতী দল সোমবার আলোচনা সভা, কৃষক দল মঙ্গলবার আলোচনা সভা, জাসাস ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া দিবসটি পালন উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে ১২ নভেম্বর বুধবার দুপুর ২টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন