ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

জাতিসংঘে সম্মেলন

হামাসের বিরুদ্ধে আরব বিশ্ব

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ বন্ধে এই ভূখণ্ডে হামাসের শাসনের অবসান ঘটানো এবং সংগঠনটিকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে কাতার, সৌদি আরব, মিশরসহ একাধিক আরব দেশ।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রস্তাব পুনরুজ্জীবিত করতে গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্যোগে নিউইয়র্কে সংস্থাটির সদর দপ্তরে একটি সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানেই  গৃহীত সাত পৃষ্ঠার একটি ঘোষণাপত্রে এ আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণাপত্রটিকে সমর্থন করেছে ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ। ঘোষণায় বলা হয়, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে অবশ্যই তার শাসন (এ উপত্যকায়) শেষ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। এটি একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।’

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। এতে যুদ্ধ শেষে গাজায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিদেশি সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। সম্মেলনে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি। আগের দিন, জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদল ইসরায়েল ও হামাস উভয়কে গাজা ত্যাগ করার আহ্বান জানায়; যাতে সাগর উপকূলবর্তী এই অঞ্চল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে। ঘোষণায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলারও নিন্দা জানানো হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানায়নি। সম্মেলনের সহ-আয়োজক ফ্রান্স ঘোষণাপত্রটিকে ‘ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে। হামাস একটি ফিলিস্তিনি ইসলামি সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা গাজা উপত্যকা শাসন করে। হামাস ২০০৭ সালে ইসরায়েলকে হঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে।

এরপর ইসরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করে তারা। ১০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সকালে হামাসের বন্দুকধারীদের একটি দল গাজার সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়ে। সেই সঙ্গে গাজা থেকে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করা হয়। ওই দিন বন্দুকধারীদের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার দাবি করেছে তেল আবিব। বিবিসি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ এবং ৩৬৪ জন যুবক একটি সংগীত উৎসবে ছিল। এ ছাড়া ওই অভিযানে হামাসের যোদ্ধারা প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়, যার মধ্যে বিদেশি নাগরিকও ছিল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি দাবি করেছে, হামাসের হামলার সময় ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার প্রমাণও পাওয়া গেছে। যদিও ইসরায়েলের এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। হামাস ২০০৭ সালের নির্বাচনে জয়ী হলেও তাদের পুরো ফিলিস্তিনের ক্ষমতায় বসতে দেয়নি পশ্চিম তীরকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ফাতাহ।

মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন দলটি মূলত ইসরায়েল ও পশ্চিমা সমর্থিত। এরপর থেকে গাজা উপত্যকা শাসন করছে হামাস। সংগঠনটির একটি সশস্ত্র শাখা রয়েছে এবং সর্বশেষ যুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত এর ৩০ হাজার যোদ্ধা ছিল বলে ধারণা করা হয়। ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন শীর্ষক এই দল একটি ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। তা ছাড়া হামাস ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার প্রত্যাখ্যান করে এবং তার ‘ধ্বংসের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। এদিকে হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছে ছেড়ে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা। সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক সম্মেলনে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখ-ে ‘নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারের জন্য হামাসকে’ নিরস্ত্র করার দাবিও জানান তিনি। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানবিষয়ক এক সম্মেলনে মুস্তফা বলেন, ‘ইসরায়েলকে গাজা উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে যেতে হবে এবং হামাসকে উপত্যকার ওপর থেকে তার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে।

অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও মানবিক পরিস্থিতি উন্নতির ব্যবস্থা করা না হলে সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্যÑ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা হামাসকে পুরস্কৃত করার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। লন্ডনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে প্যারিস। এদিকে সেপ্টেম্বরেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মাল্টা।

ফ্রান্সের পর যুক্তরাজ্য। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্টারমার প্রশাসনের স্বীকৃতি প্রদানের সম্ভাবনায় নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ববাসী। প্রায় ২২ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানির পরেও ছোট এই পদক্ষেপেই পরিবর্তিত হতে পারে বিশ্ব রাজনীতি। যদিও জুড়ে দেওয়া শর্তের কারণে ঘোষণা বাস্তবায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তার দোলাচল।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজার মানবিক সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে নতুন খাবার বিতরণকেন্দ্র চালু করবে। তবে এই উদ্যোগের বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল এসব কেন্দ্র পরিচালনা করবে, যেন খাদ্য বিতরণ সঠিকভাবে হয়। এ সময় গাজায় ক্ষুধা ও দারিদ্র্য চরমে এবং বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়ছে বেশি সহায়তা দেওয়ার জন্য। ট্রাম্প বলেন, তিনি গাজায় অনাহারে থাকা শিশুদের ছবি দেখে মর্মাহত হয়েছেন এবং এ কারণেই নতুন পরিকল্পনার কথা বলছেন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এটি আগেরই চালু হওয়া একটি বিতরণ ব্যবস্থার মতোই, যেখানে ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, ঝুঁকি নিয়ে খাবার আনতে হয়। জাতিসংঘ এমন বিতরণব্যবস্থাকে মানবিক নীতির পরিপন্থি বলছে।

এদিকে মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা চাইছেন ট্রাম্প প্রশাসন যুদ্ধবিরতির জন্য আবার আলোচনায় ফিরুক এবং দীর্ঘদিন ধরে ত্রাণ দিয়ে আসা অভিজ্ঞ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সহায়তা বিতরণ হোক। ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েল ‘ভালোভাবে’ খাবার বিতরণ করতে পারবে। তবে অনেকেই মনে করছেন, নতুন এই ঘোষণা রাজনৈতিক চাপের মুখেই এসেছে।