বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ১২:৫৩ এএম

গাজার শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম

তাঁবু-স্কুলে শিশুদের বাঁচার স্বপ্ন

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ১২:৫৩ এএম

তাঁবু-স্কুলে শিশুদের বাঁচার স্বপ্ন

‘আমরা নতুন জামা পরে স্কুলে যেতে পারি না। ব্যাগভর্তি বই-খাতা বা টিফিন নেই। আমি চাই এ বছর পড়াশোনা করতে, যেন আমি অন্য দেশের শিশুদের মতো লিখতে-পড়তে পারি।’ বলছিল ১২ বছর বয়সি লিয়ান আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী। লিয়ান আহমেদ বলে, ‘সারা রাত আমি আর আমার ভাইবোনেরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদি। আমাদের কষ্ট দেখে বাবা-মাও কাঁদেন। এ জীবন আমাদের আর ভালো লাগে না, আমরা আর এভাবে বাঁচতে চাই না। কীভাবে বাঁচতে হয়, সেটাই আমরা জানি না।’

যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল। এর মধ্যেই শিশুরা শুরু করেছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। তবে ক্লাসরুম নয়, পড়াশোনা চলছে তাঁবুতে। জাতিসংঘ বলছে, গাজার ৯৭ শতাংশ স্কুল হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকদের উদ্যোগে জীবনের কঠিন সময়েও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না গাজার শিশুরা। গাজার টানা যুদ্ধ আর বারবার বাস্তুচ্যুতির মধ্যে শিশুদের জন্য তাঁবুতে চলছে স্কুল। নেই ছাদ, নেই টেবিল-চেয়ার, তবু কলম আর খাতায় বাঁচার স্বপ্ন আঁকছে তারা। যুদ্ধ নয়, শিক্ষাই যেন এ শিশুদের ভবিষ্যৎ হতে পারে তারই প্রচেষ্টা।

ইবতিসাম হাসান নামের একজন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক বলেন, ‘আজকের দিনে অন্য সব দেশে স্কুল শুরু হয়েছে। আমরাও চেয়েছিলাম, আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস শুরু করতে। কিন্তু যুদ্ধ সবকিছু থামিয়ে দিয়েছে। তাই আমরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে এই তাঁবু-স্কুল চালু করেছি।’

আসন নেই, টেবিল নেই, তবু শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়তে চায় না এই শিশুরা। দিনভর গরম, চারপাশে যুদ্ধের শব্দ, খাবার সংকটের মধ্যে হাতে খাতা-কলম নিয়ে শিখতে চায় তারা।

জাতিসংঘ বলছে, গাজার যেসব স্কুল টিকে আছে, সেগুলো এখন আশ্রয়কেন্দ্র। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ স্কুল পুরোপুরি নতুন করে তৈরি না করলে ব্যবহার করা যাবে না।

ওলা আল-সাদেক নামের একজন শিক্ষক বলেন, ‘বাচ্চারা এখন রাস্তায় থাকে। ওদের জন্য কোনো স্কুল নেই। তাই আমরা নিজেরা চেষ্টা করছি, যেন ওরা শিক্ষা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়ে। তাঁবুর ভেতরে হলেও যেন কিছু শিখতে পারে।’ যুদ্ধ সবকিছু কেড়ে নিলেও এ শিশুদের চোখে এখনো আছে স্বপ্ন। তাদের কাছে শিক্ষা শুধু অধিকার নয়, বেঁচে থাকার আশা। তাই এ অস্থায়ী পাঠশালাতেই শিক্ষার আলো খুঁজছে তারা।

অব্যাহত ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গাজার শিক্ষাব্যবস্থা। উপত্যকাটির প্রায় ৭ লাখ ৮৫ হাজার শিক্ষার্থী তাদের মৌলিক শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গাজার উপ-শিক্ষামন্ত্রী ড. খালেদ আবু আল-নাদা এ পরিস্থিতিকে গাজার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক কেউই আর নিরাপদ নয় গাজায়। জাতির মেরুদ- তৈরির এ কারখানাগুলোকে সুপরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ধ্বংসযজ্ঞের এ নীলনকশার লক্ষ্য শুধু অবকাঠামো নয়, বরং ফিলিস্তিনিদের পরিচয় ও ভবিষ্যৎ মুছে দেওয়া।’

গাজার প্রায় সব স্কুল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৯৫ শতাংশ আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এডুকেশন ক্লাস্টারের তথ্য অনুসারে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ২১২টি স্কুলে সরাসরি বিমান হামলা হয়েছে। আরও ২৮২টি স্কুল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একসময় এ ভবনগুলোয় ৫ লাখ ৩ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী ও ১৮ হাজার ৯০০ শিক্ষকের পদচারণা ছিল। অনেক স্কুলই আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যেখানে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো এখনো বোমাবর্ষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪টি পুরোপুরি ধ্বংস এবং ১০টি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ত্রাণকর্মীও রয়েছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজা শহরে তীব্র স্থল অভিযানের হুমকি দিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলীয় নগর কেন্দ্রের ফিলিস্তিনিদের চলে যাওয়ার সতর্ক করেছেন।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরাইলি বাহিনী।  দখলদার বাহিনীর হামলায় একদিনেই আরও ৫২ জন নিহত হয়েছেণ।  একইসঙ্গে ক্ষুধায় আরও দুই শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা শহরের বাসিন্দাদের ‘এখনই চলে যেতে’ হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একইসঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক প্রধান বেসামরিক মানুষকে ‘গণহত্যা’ এবং জীবনরক্ষাকারী সহায়তা সরবরাহ ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে ইসরাইলের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল অভিযোগ করেন, ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে বাস্তুচ্যুত পরিবারের শিবিরসংলগ্ন আবাসিক ভবনগুলোতে আঘাত হানছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০০টিরও বেশি তাঁবু ধ্বংস হয়েছে। আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ গাজা শহর থেকে জানিয়েছেন, ‘একটির পর একটি সুউচ্চ ভবন ভেঙে পড়তে দেখা হৃদয়বিদারক। এগুলো শুধু ভবন নয়, এর সঙ্গে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জরুরি সেবাগুলোও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সেটিও আবার যুদ্ধের প্রায় দুই বছর পরও।’

চিকিৎসকরা জানান, সোমবার ইসরাইলি হামলায় নিহতদের মধ্যে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ওসামা বালউশাও রয়েছেন।

গাজার সব বাসিন্দাদের তাৎক্ষণিকভাবে শহর ছাড়তে বলেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরবিতে দেওয়া এক পোস্টে আইডিএফের মুখপাত্র এই আহ্বান জানান। গাজায় হামলা আরও জোরদার করার কথাও উল্লেখ করা হয় এই পোস্টে। এ ছাড়া গতকাল সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও ফিলিস্তিনিদের গাজা ছাড়তে বলেছেন।

 

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!