চারজনের অবস্থা সংকটাপন্ন

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের মধ্যে এখনো চারজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা।

এ ছাড়া শঙ্কামুক্ত হওয়ায় আরও দুজনকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। এদিকে অজ্ঞাত মৃতদেহ শনাক্তের পর মৃতের সংখ্যা সংশোধন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করতে গতকাল রোববার মাইলস্টোন স্কুলে যায় বিমানবাহিনীর একটি তদন্তদল।  

মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পর স্কুলের শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত ভবন সংস্কার করে যথাশিগগির স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ। যদিও স্কুল খোলার সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করতে পারেননি তারা।

আরও ২ জনকে হাসপাতাল থেকে ছুটি: বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আরও ২ জনকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ঘটনাটিতে মোট চারজন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরল। এখনো সংকটাপন্ন অবস্থায় আইসিইউতে রয়েছে ৪ জন। গতকাল রোববার বিকেল ৩টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন।

পরিচালক বলেন, আজ (রোববার) কাজী আমজাদ সাইদ (২০) ও সবুজা বেগম (৪০) নামে দুজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। আমজাদ ঘটনার সময় উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হয়েছে এবং সবুজা বেগম স্কুলে আয়ার কাজ করতেন।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ইনস্টিটিউটে ৩৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। যাদের মধ্যে ২৮ জন শিশু, ৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক। এদের মধ্যে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে ৪ জন। তাদের মধ্যে দুজন রয়েছেন লাইফ সাপোর্টে। এই দুই রোগী হলেন ১৪ বছর বয়সি আয়ান, যার শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে এবং ইনহেলেশন ইনজুরিও রয়েছে এবং নাবিদ নেওয়াজ, যিনি ৫৩ শতাংশ দগ্ধ ও ইনহেলেশন ইনজুরিতে আক্রান্ত। এ ছাড়া মেডিকেল এইচডিইউতে চিকিৎসাধীন ৩ জন, ফিমেল এইচডিইউতে ৬ জন, পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ডে ৮ জন এবং কেবিনে আছেন ১২ জন। সিভিয়ার ক্যাটাগরিতে অর্থাৎ এদের চাইতে একটু কম গুরুতর অবস্থায় রয়েছে ৯ জন। বাকিরা অন্যান্য ওয়ার্ড ভর্তি রয়েছে। আপাতত মোট ভর্তি থাকা ৩৪ জন রোগীর মধ্যে শরীরে ৩০ শতাংশের বেশি দগ্ধ হয়েছে এমন রোগী আছে ৬ জন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা ভর্তি রয়েছে তাদের সাথে নিয়মিত ২ বেলা করে ইউনিটপ্রধানরা কথা বলছেন এবং তাদের মানসিক সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে আরও বেশ কয়েকজনকে পর্যায়ক্রমে ছাড়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

অন্যদিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) দুর্ঘটনায় আহত ৯ জন চিকিৎসাধীন আছেন বলে গত শনিবার জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, চিকিৎসাধীনদের মধ্যে ৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এখানে চিকিৎসাধীন সবার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানান তিনি। এর আগে গত শনিবারে আয়ান খান ও রাফসিকে নামে দুই শিক্ষার্থীকে ছুটি দেওয়া হয়েছে বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে।

মৃতের সংখ্যা কমে ৩৪: মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে সিআইডিতে অশনাক্তকৃত মৃতদেহ ও মৃতদেহের খ-িতাংশ শনাক্তের পর মোট মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেছে। এর আগে গত শনিবার পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা বলা হয়েছিল ৩৫ জন। গতকাল রোববার বলা হয় ৩৪ জন। তবে এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সিএমএইচে ১৫ মরদেহ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি মরদেহ অভিভাবকরা শনাক্ত করে নিয়ে গেছেন। বাকি ছয়টি মরদেহ ও আংশিক মরদেহের ব্যাগ ছিল। যেগুলো শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। ডিএনএ টেস্ট করে সেখানে ছয়টির পরিবর্তে পাঁচটি মরদেহ পাওয়া গেছে। যার কারণে সেই ১৫ সংখ্যা এখন ১৪-তে দাঁড়িয়েছে।

এ নিয়ে সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২১ জুলাই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল কর্তৃক মোট ১৫টি বডিব্যাগ গৃহীত হয়, যার মধ্যে তুরাগ থানা পুলিশ প্রাথমিকভাবে ১১টি মরদেহ, দুটি অপূর্ণাঙ্গ মরদেহ এবং পাঁচটি দেহের অংশবিশেষ সুরতহাল করে। ১১ মরদেহের মধ্যে ৯ জন দাবিদার মরদেহ শনাক্ত করতে পারায় ঘটনার দিন ২১ জুলাই তুরাগ থানা পুলিশ দাবিদারদের কাছে আটটি এবং ২২ জুলাই একটি মরদেহ হস্তান্তর করে।

সুরতহাল করা বাকি দুটি মরদেহ, দুটি অপূর্ণাঙ্গ মরদেহ এবং পাঁচটি দেহের অংশবিশেষ থেকে ২২ জুলাই সিআইডি ফরেনসিক টিম ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন এবং পরীক্ষা শেষে ফলাফলের ভিত্তিতে সিআইডি ফরেনসিক টিম পাঁচজনের মরদেহ শনাক্ত করে। গত বৃহস্পতিবার রাতে তুরাগ থানা পুলিশ পাঁচজন দাবিদারের কাছে শনাক্ত মরদেহ ও দেহের অংশবিশেষ হস্তান্তর করে।

স্কুলে বিমানবাহিনীর তদন্তদল: গতকাল রোববার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যায় বিমানবাহিনীর একটি তদন্তদল। তারা দুর্ঘটনাস্থল এবং এর আশপাশসহ শ্রেণিকক্ষে মেটাল ডিটেকটর দিয়ে তল্লাশি চালান। মূলত বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির সর্বশেষ ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করতেই তারা এই অভিযান চালান বলে জানা যায়। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। জানা যায়, বিধ্বস্ত হওয়া স্কুল ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছে যথাশিগগির বুঝিয়ে দিতেই বিশ^স্ত বিমানটি ছোট ছোট আলামতগুলো সংগ্রহ করে তদন্তদল।

এদিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত স্কুলটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাউন্সেলিং শুরু করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার থেকে নির্দিষ্ট কক্ষে এই কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু হয়। আজ সোমবার পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের কথা জানিয়েছিলেন স্কুলটির অধ্যক্ষ জিয়াউল আলম। গত শনিবার একইসাথে কাউন্সেলিং করার কথাও বলেছিলেন। স্কুল খোলার বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল রোববার কিছু জানায়নি। তবে একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২ আগস্ট পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকতে পারে। এর আগে আগামী ২-১ দিনের মধ্যে ভবন সংস্কারের কাজ শুরু হতে পারে।