- গাজায় নিহত ৬৬ হাজার ছাড়াল
- নিহতদের প্রায় ৮৩ শতাংশ বেসামরিক নাগরিক
- মোট আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৬২
- সাহায্য নিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ২৫৬৬
ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান গণহত্যায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬৬ হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল রোববার সবশেষ বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই নিয়ে উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছে ৬৬ হাজার ৫ জন। এ সময় ৩৭৯ জন আহত হয়েছে। ফলে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি আক্রমণে আহত ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৬২ জনে দাঁড়িয়েছে।
কিছু সংস্থা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের মতে, গাজায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ইসরায়েলের এক নথির তথ্যমতে, গাজায় নিহত ব্যক্তিদের প্রায় ৮৩ শতাংশ বেসামরিক নাগরিক।
আল জাজিরার তথ্যানুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় অবকাঠামো, ঘরবাড়ি ও পুরো পাড়া-মহল্লা ধ্বংস করছে। এতে আহতদের কাছে পৌঁছানো বা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে চিকিৎসা দলগুলোর কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা দুটি লাশসহ ৭৯ জন ফিলিস্তিনিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এতে বলা হয়, অনেক ভুক্তভোগী এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছে। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।
গাজায় কথিত ‘মানবিক নিরাপদ অঞ্চলেই’ বারবার ইসরায়েলি হামলার ঘটনা ঘটছে। আন্তর্জাতিক সমালোচনা উপেক্ষা করেই অবরুদ্ধ উপত্যকায় স্থল অভিযান আরও জোরদার করেছে দখলদার সেনারা। গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল জোর করে গাজা সিটি থেকে দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিতে এসব এলাকাকে ‘নিরাপদ’ বলে প্রচার করছে। অথচ গত ১১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় অন্তত ১৩৩ দফা হামলায় ১ হাজার ৯০৩ জন নিহত হয়েছে, যা গাজার মোট প্রাণহানির প্রায় ৪৬ শতাংশ। সংস্থাটির দাবি, এসব হামলা প্রমাণ করে, বেসামরিক নাগরিকদের সরাসরি টার্গেট করা হচ্ছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছে এবং সতর্ক করেছে, বিশ্ব নীরব থাকলে তা আরও হত্যাযজ্ঞ চালানোর জন্য ‘সবুজ সংকেত’ হিসেবে কাজ করবে।
গাজা সিটিতে চলমান হামলার কারণে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। তীব্র গোলাবর্ষণের জেরে জর্ডান ফিল্ড হাসপাতাল থেকে ১০৭ রোগী এবং সব চিকিৎসক-কর্মীকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। বহু আগে থেকেই সংকটে থাকা গাজার হাসপাতালগুলোতে অ্যানাস্থেসিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিকের মতো মৌলিক ওষুধ নেই। ক্ষুধার্ত চিকিৎসকেরা রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। দক্ষিণাঞ্চলের কিছু হাসপাতাল আংশিকভাবে চালু থাকলেও উত্তর দিক থেকে আসা আহতদের ঢল নামায় সেখানে চরম চাপ তৈরি হয়েছে।
আল-আকসা হাসপাতালের চিকিৎসক খলিল দিগরান অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি সেনারা শিশুদের একমাত্র বিশেষায়িত রান্তিসি হাসপাতালকে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করেছে। তিনি সতর্ক করেছেন, হামলা অব্যাহত থাকলে দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালগুলোর কার্যক্রমও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গাজার মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় মানবিক সাহায্যের জন্য জড়ো হওয়াদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ছয়জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬৬ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে ২৭ মে থেকে সাহায্য নিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা ২ হাজার ৫৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে ১৮ হাজার ৭৬৯ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৬৬ হাজার ৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৬২ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো মানুষের লাশ চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার জার্মানির বার্লিন ও যুক্তরাজ্যের লিভারপুলসহ বিভিন্ন শহরে যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, গাজা যুদ্ধবিরতিতে শিগগিরই সমঝোতা হতে যাচ্ছে। তবে হামাস জানিয়েছে, তাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাব পৌঁছায়নি। হামাসের এক কর্মকর্তা আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমাদের কাছে কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।’
আজ সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বৈঠকের কথা রয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন