নগরায়ণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা রোগগুলোর মধ্যে একটি হলো টাইফয়েড জ্বর। এটি একটি অত্যন্ত সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ, যা মূলত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়।
টাইফয়েড জ্বর কীভাবে হয়?
- টাইফয়েডের জীবাণু হলো সালমোনেলা টাইফি এবং সালমোনেলা প্যারাটাইফি। এই জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে
- সংক্রামিত ব্যক্তির তৈরি খাবার খেলে
- হাত ধোয়ার অভ্যাস না থাকলে
- অপরিষ্কার পানীয় গ্রহণ করলে
- রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে
- মলদ্বার স্পর্শ করে হাত না ধুয়ে মুখে হাত দিলে
- অনেক সময় সুস্থ হওয়ার পরেও কেউ কেউ এই জীবাণু বহন করে এবং অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ কী কী?
- জীবাণু শরীরে প্রবেশের ৭-১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন-
- উচ্চমাত্রার জ্বর (১০৪ক্কঋ পর্যন্ত উঠতে পারে)
- মাথাব্যথা ও শরীরব্যথা
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- ক্ষুধামন্দা
- পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
- বমি ভাব বা বমি
- পেটে বা বুকে গোলাপি ফুসকুড়ি
- ধীরে ধীরে হৃৎস্পন্দন কমে যাওয়া
চিকিৎসা না করলে জটিলতা হতে পারে- অন্ত্র ছিদ্র, রক্তক্ষরণ, কিডনি বিকলতা ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয় কীভাবে হয়?
টাইফয়েড শনাক্ত করার জন্য নিচের পরীক্ষাগুলি করা হয়:
- ব্লাড কালচার টেস্ট (রোগ নির্ণয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি)
- উইডাল টেস্ট
- স্টুল বা ইউরিন কালচার
টাইফয়েডের চিকিৎসা
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক (১০-১৪ দিন)
- জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল
- বেশি পরিমাণে পানি ও তরল খাবার গ্রহণ
- পুষ্টিকর ও হালকা খাবার খাওয়া
- চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া কখনোই ওষুধ বন্ধ করবেন না
- জটিল ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে শিরায় অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হতে পারে।
টাইফয়েড প্রতিরোধে করণীয়
- সব সময় ফুটানো বা বিশুদ্ধ পানি পান করুন
- টয়লেট ব্যবহারের পর, খাওয়ার আগে ও খাবার তৈরির আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন
- কাঁচা শাক-সবজি ও ফলমূল ভালোভাবে ধুয়ে নিন
- রাস্তার খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন
- সব খাবার ভালোভাবে রান্না করে খান
- টাইফয়েড টিকা গ্রহণ করুন (ইনজেকশন বা মুখে খাওয়া- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)
কিছু জরুরি তথ্য
- টাইফয়েড যেকোনো বয়সে হতে পারে, তবে শিশু ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে ঝুঁকি বেশি
- রোগী সুস্থ হলেও অনেক সময় জীবাণু শরীরে বহন করে- এদের বলে বাহক
- টাইফয়েড একটি ছোঁয়াচে রোগ
- সতর্ক হোন! যদি দীর্ঘ সময় জ্বর থাকে, পেটে ব্যথা বা দুর্বলতা দেখা দেয়- আজই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন!
- সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে টাইফয়েড পুরোপুরি সেরে যায়।
ডা. সৈয়দা মনি চৌধুরী বলেন টাইফয়েড জ¦র একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। এটি খাবারের মাধ্যমে, পানির মাধ্যমে ছড়ায়, সাল্মনিয়া টাইফি নামের এক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে এই টাইফয়েড জ¦র হয়। লক্ষণগুলোর মধ্যে অনান্য জ্বরের মতো তীব্র জ¦র হয়, সঙ্গে শরীর ব্যথা, শরীরের ক্লান্তিভাব, পেটে ব্যথা, প্রথম সপ্তাহে রোগীদের কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, এই টাইফয়েড জ্বর থেকে নিউমোনিয়াও হতে পারে, কাশিও বাড়তে পারে। প্রথম সপ্তাহে রোগীদের ব্লাড টেস্ট করা হয়, দ্বিতীয় সপ্তাহে ইউরিন টেস্ট করা হয়, ফলে সহজে ধরা পরে টাইফয়েড। টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা হলো ১৪ দিনের নির্দিষ্ট ওষুধের ডোজ দিতে হবে। ব্লাড টেস্টের মাধ্যেমে জানা যায় কেমন টাইফয়েড তার উপর ভিত্তি করে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে হবে। অবশ্যই পুরা ডোজ শেষ করতে হবে। অনেকের প্রতি বছর টাইফয়েড জ্বর হয়; এর কারণ হলো তারা ওষুধের ডোজ সম্পূর্ণ করে না ফলে বার বার জ¦র আসে। টাইফয়েড পানিবাহিত রোগ অর্থাৎ এটি পানির সঙ্গে আসে তাই পরিষ্কার পানি খাওয়ার ব্যবহার করতে হবে। অপরিষ্কার পানি থেকেই টাইফয়েড ছড়িয়ে পড়ে। পানি ব্যবহারে সচেতন থাকলে টাইফয়েড রোধ করা সম্ভব।
ডা. সৈয়দা মনি চৌধুরী
সহকারী অধ্যাপক
মেডিসিন বিভাগ
ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
টঙ্গী, গাজীপুর