সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০১:৩৮ এএম

গায়েবি প্রশিক্ষণে সরকারি কর্মকর্তার পকেট ভারি!

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০১:৩৮ এএম

গায়েবি প্রশিক্ষণে সরকারি  কর্মকর্তার পকেট ভারি!

প্রশিক্ষণ হয়নি কোনো উপজেলাতেই। অথচ প্রশিক্ষণের ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে কয়েক লাখ টাকা তুলে নিজের পকেট ভারি করেছেন সুনামগঞ্জের জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা এজেএম রেজাউল আলম বিন আনছার। জেলার ১২টি উপজেলায় মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচির আওতায় ‘উপজেলা রিসোর্স পুলের মডিউল-১’বিষয়ক এসবিসিসি প্রশিক্ষণে সম্মানির অন্তত ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই তার এই অনিয়ম-দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছেন। এই টাকা তুলতে স্বাক্ষর জাল করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য সহকারীদের। এমনকি একাধিক স্বাস্থ্য সহকারী পিআরএলে চলে গেলেও তাদের নামেও টাকা তোলা হয়েছে। প্রতিটি প্রশিক্ষণে তিনি সঞ্চালক এবং একই সাথে আলোচক দেখিয়ে আলাদা সম্মানি ধরে টাকা তুলেছেন। এমন অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের তরফ থেকে। তাদের মাঝে রয়েছেন এমনও ব্যক্তি, যাদের নামে তিনি টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। তারা জানান, যাদের নামে টাকা তোলা হয়েছে তারা কেউই টাকা পাননি। সব টাকা আত্মসাৎ করেছেন এজেএম রেজাউল আলম বিন আনছার। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে অপর সরকারি কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে টাকা আত্মাসাতের ঘটনা জানাজানি হলে সংশ্লিষ্ট মহলে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। 

সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় এ রকম প্রশিক্ষণের একটি ভুয়া বিল-ভাউচার দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসে পৌঁছে। সেখানে দেখা যায়, গত ৬ এবং ৭ নভেম্বর ২০২৪ হওয়া প্রশিক্ষণ কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম। এতে তার সম্মানি ধরা হয়েছে ৭ হাজার টাকা। প্রশিক্ষক ও আলোচক হিসেবে সুনামগঞ্জের জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ও ছাতকের চলতি দায়িত্বে থাকা এজেএম রেজাউল আলম বিন আনছার ১০ হাজার টাকা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত আরেফিন ৪ হাজার টাকা, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. শহীদুল ইসলাম ৫ হাজার টাকা এবং একই অনুষ্ঠান সঞ্চালনার জন্য এজেএম রেজাউল আলম বিন আনছারের নামে আবার ধরা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া দুই দিনে মোট ১০৮ জন স্বাস্থ্য সহকারীর নামে সম্মানি তোলা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা। একটি প্রশিক্ষণ থেকেই তিনি মোট ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা তুলেছেন। একই অনুষ্ঠানে নিজেই আলোচক হিসেবে একটি এবং সঞ্চালক দেখিয়ে আরেকটি সম্মানি তুলেন। এভাবে সুনামগঞ্জের প্রায় প্রত্যেকটি উপজেলায় প্রশিক্ষণ দেখিয়ে জাল স্বাক্ষরে টাকা তুলে নেন তিনি। ১২ উপজেলায় এভাবে অন্তত ২৫ লাখেরও বেশি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেনÑ দাবি সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক সূত্রের। সূত্র মতে, এ রকম প্রশিক্ষণে প্রত্যেক আলোচকের ২ হাজার টাকা করে সম্মানি হওয়ার কথা। সেখানে দেখানো হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। এটিও নিয়মের বাইরে।

এ নিয়ে ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ রকম কোনো প্রশিক্ষণে অংশ নেননি উল্লেখ করে তার স্বাক্ষর জাল করে টাকা তোলায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলেন, এ রকম কোনো প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়নি।

একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে অপর সরকারি কর্মকর্তার স্বাক্ষর কীভাবে তিনি জাল করতে পারলেন? আমি ওই অনুষ্ঠানে ছিলাম না, এমনকি প্রশিক্ষণের কোনো টাকাও আমাকে দেওয়া হয়নি।
ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত আরেফিন জানান, তিনি ছাতকে এসে যোগদানই করেছেন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ। এর আগে তিনি কীভাবে ছাতকে কর্মশালায় যোগ দেবেন? বলেন, আমি ছিলামই না তখন। অথচ আমার নামে আমার স্বাক্ষর জাল করে সম্মানি বিল তোলা হয়েছে! তিনি জানান, তার কাছে এ অভিযোগ এসেছে। অনেক স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, তাদের নামেও সম্মানি বিল করা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউই তা পাননি। 

সিলেট বিভাগীয় মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহিনা আক্তার বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় এ রকম প্রশিক্ষণ হওয়ার কথা। কিন্তু সুনামগঞ্জের ছাতকে যে হয়নি তা আমি আগে জানতাম না। এখন শুনছি সেখানে প্রশিক্ষণ না করে টাকা তোলা হয়েছে। এটি হতে পারে না, মারাত্মক অন্যায়। তিনি বলেন, একই অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ও প্রশিক্ষক আলাদা সম্মানি নিতেও পারেন না। তা ছাড়া ইউএনও থেকে বেশি সম্মানি পাবেন না জেলা বা উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা। এখানেও তিনি সঠিক করেননি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এজেএম রেজাউল আলম বিন আনছার জাল স্বাক্ষরে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে উপস্থিত সবাইকে সম্মানি দেওয়া হয়েছে। আপনারা চাইলে ওই সময়কার ছবি সংগ্রহ করতে পারেন। তিনি অসুস্থ জানিয়ে এর চেয়ে বেশিকিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। মোবাইল ফোনে জানান, তিনি এখন ঢাকায় আছেন, অসুস্থ। অফিসে এসে কথা বলবেন।
সূত্র জানায়, দুর্নীতির মাধ্যমে এজেএম রেজাউল আলম বিন আনছার ঢাকায় তিনটি বাড়ির মালিক হয়েছেন। মাসের বেশির ভাগ সময় তাই ঢাকায়ই কাটান। বর্তমানে তিনি এক সাথে সুনামগঞ্জের একাধিক উপজেলার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। ছাতকে গত ৩ বছর ধরে তিনিই সুনামগঞ্জ থেকে এসে এই দায়িত্ব পালন করছেন। তবে মাসে দুই দিনের বেশি সেখানে অফিস করতে পারেন না। এখানে কেউ আসতে চাইলেও তিনি আসতে দেন না। নানা রকম বাধা তৈরি করেন।

সূত্র মতে, একাধিক উপজেলা দায়িত্বে থাকায় জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা এজেএম রেজাউল আলম বিন আনছার নিজের ইচ্ছেমাফিক কার্যক্রম চালাতে পারেন। ‘উপজেলা রিসোর্স পুলের মডিউল-১’ বিষয়ক এসবিসিসি প্রশিক্ষণের নামে তিনি পুরো জেলার প্রায় উপজেলায় একইভাবে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রশিক্ষণ বাস্তবে না হলেও তিনি কাগজে-কলমে তা দেখিয়ে বিল উত্তোলন করেছেন। এ জন্য অনেক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বাস্থ্য সহকারীদের স্বাক্ষর তাকে জাল করতে হয়েছে। এই স্বাক্ষর তিনি ১০ টাকার রাজস্ব স্টাম্পে দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!