ঢাকা শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

রোগী আটকাতে লিফট বন্ধ সিঁড়িতে গর্ভপাতে শিশুর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৯:৪৪ এএম

ময়মনসিংহ নগরীতে ‘হেলথ কেয়ার (প্রাঃ) হাসপাতাল’ নামের একটি বেসরকরি ক্লিনিকে গর্ভবতী রোগীকে আটকাতে লিফট বন্ধ করে দেওয়া ও অবহেলার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। পরে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে ওই রোগীর গর্ভপাত ঘটলে গর্ভের শিশুটির মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলে ক্লিনিকের মালিক-ম্যানেজারসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। 

এদিকে তীব্র সমালোচনার মুখে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্টি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম খান। একই সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ক্লিনিকটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে, তদন্ত কমিটির সদস্যদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
এদিন দুপুরে অভিযান চালিয়ে ক্লিনিকের মালিকার অংশিদার রঞ্জণ দে, মো. পাপ্পু এবং ম্যানেজার মো. মজিবুর রহমানকে আটক করেছে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।

ভুক্তভোগী নারীর নাম, রোজিনা আক্তার। তিনি ময়মনসিংহ নগরীর ২ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) লুৎফর হোসেনের স্ত্রী। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর ব্রাহ্মপল্লী রোড হেলথ কেয়ার (প্রাঃ) হাসপাতালে অন্তঃসত্ত্বা ভুক্তভোগীকে নিয়ে যায় এক দালাল। তবে ক্লিনিকে চিকিৎসক না থাকায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করে অন্তঃসত্ত্বা নারী ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে যেতে চান। এ সময় ক্লিনিকের মালিকপক্ষ ওই নারী যেন অন্য কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতালে না যেতে পারে সে কারণে ক্লিনিকের লিফট বন্ধ করে দেয়। তখন অন্তঃসত্ত্বা নারী সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গর্ভপাত ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ওই নারী।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. শিবিরুল ইসলাম বলেন, গত ২ আগস্ট গর্ভবর্তী রোগীকে জামালপুর হাসপাতাল থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। কিন্তু রোগী ময়মনসিংহ আসলে মো. হান্নান নামের এক দালাল ফুসলিয়ে ওই হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ওই হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকার কারণে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করে বেরিয়ে যেতে চায় রোগী। এ সময় হাসপাতালের মালিক রোগীকে আটকাতে লিফট বন্ধ করে দেয়। গর্ভবতী নারী সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গেলে আঘাত পেয়ে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়। পরবর্তীতে গর্ভের শিশুটি মারা যায়।

ওসি আরও জানান, হাসপাতালটিতে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি অবৈধ। এ কারণে ঘটনাটি জানার পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এটি বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছেন। এ ঘটনায় আমরা হাসপাতালের মালিক-ম্যানেজারসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে রেখেছি। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।  

তবে হাসপাতালের আয়া সুইটি আক্তার বলেন, রোগীটি জামালপুর হাসপাতাল থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। কিন্তু এই হাসপাতালের সাবেক ম্যানেজার মো. হান্নান রোগীকে এখানে নিয়ে আসে। তখন ডাক্তার ছিল না। এ সময় রোগীর মারাত্মক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে রোগীর স্বজনরা লিফট বন্ধ থাকার কারণে দুইতলা থেকে রোগীকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

এ ঘটনায় বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও হাসপাতালটির মালিক পক্ষের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়েও দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।  

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারীর স্বামী এসআই লুৎফর হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন, ‘আমি তাকে নিয়ে ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব।’

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের লাইসেন্স পাওয়া গেলেও অনেক ত্রুটি রয়েছে। অনেকদিন ধরে এই হাসপাতালটি নিয়মবহির্ভূতভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। যা প্রাইভেট হাসপাতাল পরিচালনার পরিপন্থি। 

তিনি আরও বলেন, গর্ভপাতের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত হাসপাতাল বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।