গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগ প্রতিরোধে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। তবে মাত্র ৮০ পয়সার এই টিকা প্রান্তিক পশুমালিকদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় পশুমালিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা বলছেন, এই অতিরিক্ত টাকা দাবির কারণে তাদের ওপর আর্থিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ গবাদিপশুর মধ্যে প্রায় দুই লাখকে টিকা দিতে গেলে মোট প্রায় অর্ধ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় দিনমজুর মো. সজিব মিয়া বলেন, ‘আমার চারটি গরু ও দুটি বকরি আছে। টিকা দিতে দুজন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এসে প্রতি পশুর জন্য ২০ টাকা দাবি করেছেন। আমি কম করার চেষ্টা করলেও তারা জোর করেন এবং পানি সম্পদ অফিসে গেলে আরও বেশি টাকা লাগবে বলে ভয়ে টাকা দিয়েই টিকা নিয়েছি।’
একই অভিযোগ করেছেন টকই গ্রামের ভ্যানচালক মো. ফুল মিয়া। তিনি জানান, ‘আমাদের এলাকায় যারা গরুর টিকা নিচ্ছেন, সবাইকে ২০ টাকা দিতে হচ্ছে। কম টাকা দিতে চাইলে তারা মানছেন না।’
অন্যদিকে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে স্বীকার করেন, টিকার আসল মূল্য ৮০ পয়সা হলেও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের কারণে প্রতিটি টিকায় ১০ টাকা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘১০ টাকার বেশি কেউ নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভ্যাকসিন দেওয়া নিয়ে কোনো প্রকার ভয়ভীতি করা হচ্ছে না। যারা অর্থ দিতে অক্ষম, তাদের বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাসও নিশ্চিত করেছেন যে, বর্তমানে টিকাপ্রতি ১০ টাকা নেওয়া হচ্ছে এবং এটা প্রাণিসম্পদ বিভাগের সিদ্ধান্ত।
সুন্দরগঞ্জে বর্তমানে গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। প্রতিবেশী পীরগাছা উপজেলায় এরই মধ্যে দুজন মারা গেছেন এবং সাতজন আক্রান্ত। সুন্দরগঞ্জেও শতাধিক গরু মারা গেছে, অনেক গরু জবাই করা হচ্ছে। আক্রান্ত পশুর মাংস থেকে মানুষে এই রোগের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
অ্যানথ্রাক্স রোগ প্রতিরোধে এরই মধ্যে ২৬ হাজার ৪০০ ডোজ টিকা এসেছে, এর মধ্যে ২২ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আরও ৫০ হাজার ডোজ টিকার জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং কার্যক্রম চলমান।
স্থানীয় পশুমালিকরা আশা করছেন, টিকাকরণ কার্যক্রম স্বচ্ছ হবে এবং নির্ধারিত মূল্য থেকে বেশি টাকা আদায় বন্ধ হবে যাতে তারা আর্থিকভাবে অগ্রাহ্য না হন এবং এই প্রাণঘাতী রোগ থেকে গবাদিপশু ও মানুষ দুজনেই সুরক্ষিত থাকে।