মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে নানা জল্পনা ক্রমশ বাড়ছে। তবে নোবেল পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এখনো তার এই পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। যদিও তিনি আন্তর্জাতিক সংঘাত সমাধানে কিছু মধ্যস্থতার ভূমিকা নিয়েছেন, তবু নোবেল কমিটির মানদণ্ড অনুযায়ী তার কার্যক্রম টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট প্রভাব ফেলেনি।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার সাধারণত শান্তির স্থায়িত্ব, আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও বহুপাক্ষিক সংস্থার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখার জন্য প্রদান করা হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা গেলে, ট্রাম্পের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রম যেমন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অবজ্ঞা এবং বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবিশ্বাস নোবেল কমিটির দৃষ্টিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হয়।
২০১৮ সাল থেকে ট্রাম্প কয়েকবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। মার্কিন প্রতিনিধি ক্লডিয়া টেনি ২০২০ সালে তাকে ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্রের মধ্যে আব্রাহাম চুক্তির মধ্যস্থতার জন্য মনোনীত করেন। তবে একই বছর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং পাকিস্তান সরকারও নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। কিন্তু মনোনয়ন পাওয়া মানেই জয় নয়।
অন্যদিকে, ট্রাম্প নিজেকে বারবার নোবেল পুরস্কারের ‘যোগ্য’ দাবি করে চলেছেন। তার ভাষায়, সাতটি যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য তিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য। বিশেষ করে ইসরায়েল ও গাজার সংঘাত সমাধানের মাধ্যমে তিনি এই পুরস্কার পাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন। যদিও তার এই দাবিগুলো সমালোচকদের সন্দেহের মধ্যে ফেলেছে।
সামরিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুত শান্তি অর্জনের চাইতে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রক্রিয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যা এখনো প্রমাণিত হয়নি।
পূর্ববর্তী বিজয়ীদের সঙ্গে তুলনা
হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির গবেষক থিও জেনো মনে করেন, নোবেল কমিটি এমন কাউকে পুরস্কৃত করবে না যিনি জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিশ্বব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাকে অবজ্ঞা করেন। অতীতে যারা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন, তারা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, পুনর্মিলন ও সেতুবন্ধন প্রতিষ্ঠার জন্য পরিচিত, যা ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
রাজনৈতিক চাপ
২০০৯ সালে বারাক ওবামাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার পর নোবেল কমিটি ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি পড়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তারা রাজনৈতিক চাপ এড়াতে চান। পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক নিনা গ্রেগার বলেছেন, ‘ট্রাম্পের স্পষ্টভাষিতা এবং বিতর্কিত বক্তব্য তার বিপক্ষে কাজ করবে। তাই তার নোবেল পুরস্কার পাওয়া এখনো ‘দূরবর্তী লক্ষ্য’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’
আমেরিকার অপমান
এদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর, ট্রাম্প বলেছেন, যদি তিনি নোবেল পুরস্কার না পান, তবে তা হবে ‘আমেরিকার অপমান’। তিনি দাবি করেছেন, গত কয়েক বছরে তিনি সাতটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন। তবে তার এই দাবির সত্যতা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী, তারা কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড, কসোভো-সার্বিয়া, কঙ্গো-রুয়ান্ডা, পাকিস্তান-ভারত, ইসরায়েল-ইরান, মিশর-ইথিওপিয়া এবং আর্মেনিয়া-আজারবাইজানসহ বিভিন্ন সংঘাতের সমাধানে ভূমিকা রেখেছে। যদিও এসব কৃতিত্ব কিছু ক্ষেত্রে আংশিক বা বিতর্কিত।
এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সিএনএন এক ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভিত্তিহীন। কেননা ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন মিশর এবং ইথিওপিয়ার মধ্যে কোনো যুদ্ধই হয়নি।