ঢাকা শনিবার, ০৯ আগস্ট, ২০২৫

বিপৎসীমার নিচে নামল তিস্তার পানি, কাটেনি বন্যার শঙ্কা

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৫, ১০:৩৩ এএম
তিস্তা ব্যারাজ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া তিস্তার পানি আজ শনিবার (৯ আগস্ট) থেকে কমতে শুরু করেছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি কমে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ফের বন্যার শঙ্কায় রয়েছেন তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের হাজারো মানুষ।

শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল ৯টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ৯টায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। শনিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচে, যা সকাল ৯টার দিকে আরও কমে ৫ সেন্টিমিটার নিচে নামে। তবে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব জলকপাট খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

আবহাওয়া অফিস জানায়, উজানে পানির সমতল হ্রাস পাওয়ায় শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায় এবং পরে স্থিতিশীল থেকে হ্রাস পেতে শুরু করে। তবে আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় পুনরায় পানির স্তর বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।

পাউবো সূত্র জানায়, ভারতের উজানে ভারী বর্ষণের ফলে নদীতে হঠাৎ করে পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। শুক্রবার রাতে পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে আমন ধান, সবজির ক্ষেত ও পুকুর। সড়কপথ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় নৌকা ও ভেলা এখন চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

এদিকে বেশকিছু নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম; হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈলমারী ও নোহালী; আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া; সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়ন।

এবার উজানের ঢলের কারণে জেলায় ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়লে বন্যার পরিধিও আরও বাড়বে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পর্যন্ত তিস্তা নদীতে বড় কোনো বন্যা দেখা না দিলেও, এটি বন্যায় রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা।

তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ নুরুল ইসলাম জানান, ‘শনিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীতীরবর্তী অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুণীল কুমার জানান, ‘শুক্রবার তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও নিম্নাঞ্চলে সতর্কতা জারি রয়েছে। পরিস্থিতি দুই-তিন দিন স্থায়ী থাকতে পারে। তবে পানি আবার বাড়বে কি না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’