‘ল্যাম্পি স্কিন’ এক ধরণের পক্স জাতীয় সংক্রামক রোগ। এটিতে গবাদিপশু আক্রান্ত হয়। পশুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে ওঠে। এতে গরু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে মৃত্যুও ঘটে।
এমন ভয়াবহ রোগটিই এখন ছড়িয়ে পড়েছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায়। কিন্তু রোগটির ভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকায় এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে এলাকায়ও। ফলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে খামারিদের মাঝে।
চারঘাাটের একজন খামারি বাচ্চু। তার বাড়ি শলুয়া ইউনিয়নের হলিদাগাছী সরদারপাড়া গ্রামে। তার খামারেও ‘ল্যাম্পি স্কিন’ রোগের সংক্রামণ ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বাচ্চু তার খামারেই ছিলেন। কথা হলে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে হঠাৎ আমার একটি গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে ওঠা শুরু করে। এরপর গরু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে গরুটি মারা যায়।’
‘পরে আরও একটি গরু আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসক জানান, রোগ ভালো হতে সময় লাগবে’, যোগ করেন এই খামারি।
চারঘাাট উপজেলার আরও কয়েকটি খামারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও এই রোগী আক্রান্ত হচ্ছে গরু। এতে গরু মারাও যাচ্ছে। ফলে খামারীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, চারঘাটে ৩৫০টি গরুর খামার রয়েছে। এর মধ্যে রেজিস্ট্রিকৃত রয়েছে ১৪ টি। প্রতিদিনই উপজেলা থেকে ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত পাঁচ থেকে ছয়টি গরুকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসে। উপজেলায় এখন ল্যাম্পি স্কিন রোগে শতাধিক গরু আক্রান্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সরকার এনায়েত কবির বলেন, ‘এটি ভাইরাসজনিত রোগ। আক্রান্ত গরুগুলোকে সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেগুলোর সুস্থ হতে সময় লাগবে।’
‘ল্যাম্পি স্কিন’ কি, কিভাবে ছড়াচ্ছে?
জানা গেছে, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ (পক্স জাতীয়) রোগটির উৎপত্তি আফ্রিকায়। এরপর ভারতেও এটি দেখা দেয়। সম্প্রতি অন্য দেশ থেকে আসা গরুর মাধ্যমে এই জীবাণু এখন দেশেও প্রবেশ করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমে গরুর চামড়ার ওপরের অংশে টিউমার জাতীয় ও বসন্তের মতো গুটি গুটি উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর দু-এক দিনের মধ্যেই গরুর শরীরজুড়ে গুটি গুটি হয়ে ঘায়ে পরিণত হয়।
এ সময় শরীরে ১০৪-১০৭ ডিগ্রি তাপমাত্রার জ্বর দেখা দেয়। মুখ দিয়ে লালা পড়তে থাকে এবং গরু খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতস্থান পচে গিয়ে সেখান থেকে মাংস খসে খসে পড়ে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এনায়েত কবির বলেন, ‘মশা ও মাছির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়। তাই আমরা খামারে গিয়ে এর আশপাশ পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দিচ্ছি।’
‘ল্যাম্পি স্কিন’ রোগের প্রতিষেধক কী আছে?
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, এই রোগ প্রতিরোধে সরকারের পৃথক কোন বরাদ্দ নেই।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এনায়েত কবির বলেন, ‘তবে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে যেন ভ্যাকসিন দিয়ে গরুগুলো সুস্থ রাখা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উঠান বৈঠকের মাধমে খামারিদের ল্যাম্পিং স্ক্রিন রোগ থেকে সর্তক থাকার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।’
এই কর্মকর্তা বলেন, তারা গরুর বাছুর হওয়ার পর পরই প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। যেন ল্যাম্পিং স্কিন রোগ থেকে সুস্থ থাকতে পারে গবাদিপশু।