শেরপুরের নকলা উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা। কেউ বীজতলা থেকে চারা তুলছেন, কেউবা জমিতে সেচ দিচ্ছেন। আবার কেউ চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন। অনেক মাঠে একযোগে চলছে চারা রোপণের কর্মযজ্ঞ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অর্জনকে ভিত্তি করে চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ১১১ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২-৩ সপ্তাহ ধরে রোপণ কাজ শুরু হয়েছে এবং এটি চলবে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, আমন ধান মূলত বৃষ্টিনির্ভর হওয়ায় এতে সেচ খরচ কম হয়। ফলে উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা আমন চাষে আগ্রহী।
সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার গনপদ্দী, নকলা, উরফা, গৌড়দ্বার, বানেশ্বরদী, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন মাঠে কৃষক ও শ্রমিকদের চারা রোপণে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
চলতি মৌসুমে আমন চাষের মধ্যে হাইব্রিড জাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭,১৩৫ হেক্টর, উফশী জাতের ৪,৭৬৩ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের জন্য নির্ধারিত হয়েছে ১,২১৩ হেক্টর জমি।
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, মোট ৫০ হাজার ৭৪৮ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাত থেকে ৩০,৬০৯ মেট্রিকটন, উফশী জাত থেকে ১৭,২৮৯ মেট্রিকটন এবং স্থানীয় জাত থেকে ২,৮৪৮ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাস্তব উৎপাদন পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মো. ছাইদুল হক, সদস্য মোখলেছুর রহমানসহ স্থানীয় কৃষক হেলাল, ঈসমাইল, খাদিমুল ইসলাম, কিতাব আলী, হালিম, শাহীন মিয়া, দেলোয়ার, রেজাউল করিম, মোশারফ হোসেন, মোক্তার আলী, কামাল হোসেন, হারুন অর রশিদ, রাশিদা বেগমসহ অনেকে জানান, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা দেরিতে চারা রোপণ শুরু হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হওয়ায় আশা করা যাচ্ছে আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই রোপণ কাজ শেষ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী জানান, ‘এবার চারা রোপণে এলএলপি (Line, Level, Planting) পদ্ধতির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় কৃষকদের মাঝে এই পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকরা অধিক ফলন এবং লাভবান হবেন।’
অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তাবাসসুম মকবুলা দিশা জানান, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্জন হতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাগর চন্দ্র দে বলেন, আমন ধান উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।’
কৃষিবিদ ফারিহা ইয়াসমিন জানান, ‘মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে উৎপাদন বৃদ্ধির নানা দিক নিয়ে আলোচনা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়।’