রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫-এর মনোনয়নপত্র বিতরণের কার্যক্রম ‘অনিবার্য কারণে’ বন্ধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে ছাত্রদল নির্বাচন পেছানোর এবং কমিশন পুনর্গঠন দাবি করে আসছে গত কয়েকদিন যাবৎ। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাতিল হওয়া ‘পোষ্যকোটা’র পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানিক সুবিধার দাবিতে দিনব্যাপী ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় এক বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন।
ছাত্রনেতারা বলছেন, একটা রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের অছাত্রদেরকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার শিক্ষকরা এই সময়েই আন্দোলন করতে আসলেন। এটা স্পষ্টত একটা ষড়যন্ত্রেরে লক্ষণ। নির্বাচন কমিশন কোনো সংগঠনের সাথে সমঝোতা করে রাকসুর সকল কাজ করতে ব্যর্থ হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে, গতকালও (মঙ্গলবার) ধর্মঘটের কারণে অফিস বন্ধ ছিল। এর মাঝেও আমরা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছি। আজ বিকেলেই আরেকটা সভা আছে আমাদের সেখানে একটা সিদ্ধান্ত আসবে আশা করছি। তা ছাড়া দ্রুতই এই কার্যক্রম শুরু হবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৯ আগস্ট; মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে ২০ থেকে ২৩ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৭ ও ২৮ আগস্ট; প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ ৩১ আগস্ট এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ৪ সেপ্টেম্বর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক পর ১৯৬২ সালে রাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মোট ১৪টি নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে রাকসু নির্বাচন হয়েছিল। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত গতকালের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনের আগামী ২০ আগস্টের মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। পরবর্তী নির্দেশনা নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে।’
শিক্ষকদের ধর্মঘট
গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে চতুর্থদিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যান্য দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করলেও এ দিন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এর অংশ হিসেবে পরীক্ষা ও জরুরি সেবা ছাড়া অধিকাংশ বিভাগ ও দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তাদের দাবি না মানলে আগামীতে তারা প্রশাসনিক কার্যক্রম অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
ছাত্রদলের দাবি
শাখা ছাত্রদলের নেতাদের দাবি, রাকসু নিয়ে ছাত্রদলের দাবিগুলো প্রশাসন আমলে নেয়নি। শিবির ও তাদের বানানো ছোট ছোট টিম ছাড়া আর কেউ নীতিগত কোনো ভূমিকাতে নেই। আমরা চাই প্রশাসন নিরপেক্ষ থেকে তাদের আস্থা অর্জন করুক। ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের যৌক্তিক দাবিগুলো প্রশাসন মেনে নিক। এমন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন না করে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে অনুসরণ করে তারা নির্বাচন দিক। না হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই প্রহসনমূলক নির্বাচন মেনে নেবে না।
তবে এই নির্বাচন পেছানোতে ছাত্রদলের কোনো ভূমিকা নেই বলছেন শাখার সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী। তিনি বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক কিছু দাবি রয়েছে। আমরা তার বাস্তবায়নের পরেই নির্বাচন চাই। তবে এই নির্বাচন পেছানোতে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই।’
যা বলছেন ছাত্রনেতারা
একটি বিবৃতিতে ছাত্র শিবিরের শীর্ষ নেতারা বলেন, ‘রাবি শাখা ছাত্রশিবির মনে করে, রাকসু নির্বাচন কমিশন একটা রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের অছাত্রদেরকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন যদি কোনো সংগঠনের সাথে সমঝোতা করে থাকে এবং নির্দিষ্ট সময়ে রাকসুর সকল কাজ সমাধান কিংবা শেষ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে এই ক্যাম্পাসের সকল শিক্ষার্থী এটার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে এবং রাকসু আদায়ের জন্য কঠোর হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘পোষ্যকোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মিমাংসিত ইস্যু, এটা নিয়ে যে আন্দোলন হচ্ছে এবং মনোনয়নপত্র বিতরণ বন্ধ করা হলো। স্পষ্টত একটা ষড়যন্ত্রেরে লক্ষণ। আমরা তাদের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে যেতে চাই না। আপনার দ্রুত ঘরে ফিরে যান। আমাদের অধিকার নিয়ে লড়বেন না।’
সার্বিক বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তাদের গতকালের (মঙ্গলবার) ধর্মঘটের কারণে অফিস বন্ধ ছিল। এর মাঝেও আমরা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছি। আজ বিকেলেই আরেকটা সভা আছে আমাদের, সেখানে একটা সিদ্ধান্ত আসবে আশা করছি। তা ছাড়া দ্রুতই এই কার্যক্রম শুরু হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে কারও দখলদারিত্ব বা কমিশনের পক্ষ থেকে আলাদা সুবিধা করে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আশা করছি, আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের উপহার দিতে পারব।’

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন