একমাত্র মেয়ে আরিফা খাতুন মাস্টার্স পাস করে হয়েছেন শিক্ষক। এমন যোগ্য মেয়ের বাবা হয়ে কিভাবে অশিক্ষিত থাকবেন—এমন ভাবনা থেকেই গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার একজন জনপ্রতিনিধি বাবা ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং জিপিএ ৪.০০ পেয়ে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
তিনি প্রমাণ করেছেন—সত্যিই লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই। ইচ্ছা করলেই মানুষ ভালো কিছু করতে পারে। ওই বাবার নাম মো. ইয়ার মামুদ। তিনি উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাশবাড়ি গ্রামের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে তিনি ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
২০২৩ সালে তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর থেকেই নিয়মিত ক্লাস করতে থাকেন। ক্লাসের অন্যান্য সহপাঠীরা হাসাহাসি করলেও তিনি থেমে থাকেননি। প্রমাণ করেছেন—লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই, ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব।
ইয়ার মামুদ জানান, দুই ভাই ও এক বোনের সংসার ছিল আমাদের। বোনটি মারা যায়, বাবাও তখন খুব অসুস্থ। লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। তারপর অভাব-অনটনে আর এগোতে পারিনি। সংসারের ঘানি টানতে হয়েছে। এক সময় বাবা না–ফেরার দেশে চলে গেলেন, দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।
তিনি জানান, এভাবে কখন যে সময় চলে গেল বলতে পারি না। সময়ের পালাক্রমে আমিও সংসার শুরু করি। কৃষিকাজের পাশাপাশি ব্যবসাও শুরু করি। ব্যবসায় সফল হওয়ার পর এলাকার মানুষজন নির্বাচনে দাঁড়াতে বলল। দাঁড়ালাম, বিজয়ীও হলাম। সবখানেই যখন এমন সফলতা পেলাম, তখন লেখাপড়ায় পিছিয়ে থাকব কেন? আমার মেয়ে মাস্টার্স পাস করেছে, তার ঘরেও আল্লাহ মেয়ে দিয়েছেন। নাতিকে যেন বলতে পারি—তোমার নানা কিন্তু শিক্ষিত। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ।”
তিনি আরও জানান, অবশেষে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এই বছর এসএসসি পাস করেছি, জিপিএ ৪.০০ পেয়েছি। সামনে আরও পড়াশোনা করতে চাই। মেয়ের মতো মাস্টার্স পাস করতে চাই। আমার শিক্ষকমণ্ডলী, আমার মেয়ে, স্ত্রী এবং এলাকার সবার কাছেই কৃতজ্ঞ। সবাই যেন আমার জন্য দোয়া করেন।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান বলেন, ‘ইয়ার মামুদ ভাই সমাজের অনেকের চোখ খুলে দিয়েছেন। লেখাপড়া করে শুধু চাকরি করতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। তিনি জ্ঞান অর্জন করে সেই জ্ঞান সমাজসেবায় ব্যবহার করছেন। আমরা এলাকাবাসী তাঁকে শুভেচ্ছা জানাই। তিনি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’
ইয়ার মামুদের মেয়ে আরিফা খাতুন বলেন, ‘বাবা সব দিক থেকেই একজন সফল মানুষ, প্রচণ্ড মেধাবী। অভাবের কারণে আগে পড়তে পারেননি। এখন বাবার সব হয়েছে। কে কী বলল—তাতে কিছু যায় আসে না, পড়াশোনায় বয়স কোনো বাধা না। আমার বাবা যেন আমার মতো উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে মানুষের সেবা করেন, সেটিই আমি প্রত্যাশা করি।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষা গ্রহণের কোনো বয়স নেই। ইয়ার মামুদ সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা। তার জীবনের মঙ্গল কামনা করি। আমরা তাকে স্বাগত জানাই।’

 
                             
                                    


 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
       -20251031164732.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন