ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৮ মে, ২০২৫

সৃষ্টিকর্তা যেন তাদেরকে রক্ষা করেন: কঙ্গনা রানৌত

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৭, ২০২৫, ১১:২৯ পিএম
অভিনেত্রী ও বিজেপি প্রার্থী কঙ্গনা রানৌত। ছবি- সংগৃহীত

‘দেশে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা বেশ নার্ভাস অবস্থায় আছি। তবে আমরা প্রার্থনা করি যে আমরা সফল হব।’ গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই কথাগুলি বলেন মান্ডি থেকে বিজেপির প্রার্থী ও বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানৌত। 

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক অপারেশন সিঁদুর ঘিরে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে, তখন তার মুখে এমন বক্তব্য নিছক একজন রাজনীতিকের প্রতিক্রিয়া নয়, বরং এটি একধরনের প্রচার-ছকও হতে পারে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

সকালে একটি পোস্ট দিয়ে ইনস্টাগ্রামে কঙ্গনা লেখেন ‘আমাদের সেনাবাহিনী যারা দেশকে রক্ষা করেন, সৃষ্টিকর্তা যেন তাদেরকে রক্ষা করেন। তাদের সাফল্য দান করেন।’ 

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সুরক্ষা প্রার্থনা করে কঙ্গনার ইন্সটাগ্রাম স্টোরি। ছবি - সংগৃহীত

এই অংশটি নিঃসন্দেহে আবেগঘন এবং দেশপ্রেমিক বার্তা, যেখানে তিনি সরাসরি সৈনিকদের মঙ্গল কামনা করেন। তবে বিষয়টি কেবল এখানেই থেমে থাকেনি।

একটু হেসে তিনি যোগ করেন, ‘ওই যে বলে না হুমকির মুখে নই, বরং আমরা নিজেরাই হুমকি।’ এই বাক্যটি নিয়েই শুরু হয় চুলচেরা বিশ্লেষণ। 

একজন রাজনীতিক যখন এমন আত্মবিশ্বাসী ভাষায় কথা বলেন, তখন তা ভোটের মাঠে একধরনের মনস্তাত্ত্বিক ‘ডমিনেন্স’ তৈরি করে। 

তাছাড়া মে ৭ এর ভোরে যখন ভারত পরিচালনা করে অপারেশন সিঁদুর, সেদিনই কঙ্গনার ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে উঠে আসে এই আগুনঝরা বার্তা, ‘ওরা বলেছিল, মোদিকে জানিয়ে দিও। আর মোদিই এবার জানিয়ে দিলেন।’ । 

আর এরপরই প্রশ্ন উঠছে- এটি কি নিছক একজন অভিনেত্রীর দেশভক্তি প্রকাশ, না কি বিজেপির সক্রিয় রাজনীতিক হিসেবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কৌশলগত প্রচার?

বিশেষ করে কঙ্গনার মতো বিতর্কপ্রবণ ও উচ্চকণ্ঠী তারকা নেত্রী যখন বলেন ‘আমরাই হুমকি’, তখন তার ভক্ত ও সমর্থকদের মধ্যে একরকম তীব্র উন্মাদনা কাজ করে।

এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসায় তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমাদের সকলের মনোবল মোদিজির সঙ্গে আছে। অপারেশন সিঁদুর নামটা প্রধানমন্ত্রীরই দেয়া।’

এই বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদির নাম জুড়ে দেওয়া নিঃসন্দেহে একটি রাজনৈতিক বার্তা। তিনি বোঝাতে চান, এই সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব এবং কৌশল সবই মোদির হাতে। 

অপারেশন সিঁদুর শব্দটির মধ্যেও রয়েছে একধরনের প্রতীকী মানে, যা নারী-সম্মান, ঘর-সংসার এবং রক্তের আত্মত্যাগকে একসাথে সামনে আনে।

সবচেয়ে তীব্র ও আবেগঘন মন্তব্যটি ছিল, ‘আমাদের মা-বোনদের চোখের সামনেই ক্লোজ প্রক্সিমিটিতে মাথায় গুলি করে তাদের স্বামী-সোহাগ ছিনিয়ে নেয়া হয়। রক্তের মাধ্যমেই আমরা এর প্রতিশোধ নিচ্ছি।’

এই বক্তব্যে কঙ্গনা স্পষ্টভাবে বলেন, ‘এটি শুধুই প্রতিরক্ষা নয়, এটি প্রতিশোধ।’  একজন অভিনেত্রী হিসেবে তার কথার গতি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। 

তেমনি একজন প্রার্থী হিসেবে এতে রয়েছে সুনির্দিষ্ট বার্তা: ‘এই সরকার বদলা নেয়’, এবং ‘এই সরকার কাউকে ক্ষমা করে না’।

শেষে তিনি বলেন ‘আমরা আমাদের দেশের সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করছি।’ এই প্রার্থনার মধ্যেও জড়িয়ে আছে শক্তি, আত্মবিশ্বাস এবং যুদ্ধজয়ের আশা।

এই পুরো বক্তব্যে কঙ্গনা একদিকে জাতীয় আবেগকে উসকে দিয়েছেন, অন্যদিকে মোদিকে সামনে রেখে ভোটের মাঠে প্রচারণার ঝড় তুলেছেন। 

সামরিক অভিযানকে ভোটের হাওয়ায় টেনে আনা ঠিক কতটা নৈতিক, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কঙ্গনার বক্তব্য যে কৌশলগত এবং অত্যন্ত উদ্দেশ্যমূলক, তা স্পষ্ট।

একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া তার এই বক্তব্যে দেশ, ধর্ম, রক্ত এবং মোদিকে একসাথে জুড়ে দিয়ে তিনি যেন রাজনৈতিক ভাষ্যকে বলিউড স্ক্রিপ্টের মতো করে রচনা করেন চড়া ডায়লগ, আবেগের ক্লাইম্যাক্স আর প্রধানমন্ত্রীর ‘ক্যামিও’র মিশেলে!