মাদুরাইয়ের এক উত্তপ্ত মধ্যদুপুর, হাজার হাজার মানুষের ভিড়। হাতে পতাকা, মাথায় লাল-হলদে কাপড়, চোখে উন্মাদনা। সেই জনস্রোতের সামনে মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন এক নায়ক, তবে এই নায়ক সেই পর্দার নায়ক নয়, বরং আজ তিনি রাজনীতির ময়দানে জনতার নায়ক। চোখে জল, ঠোঁটে মৃদু হাসি। ভক্তদের ভালোবাসায় আবেগে ভাসছেন তিনি। ভক্তরাও নিজের সর্বোচ্চ উজাড় করে প্রকাশ করছেন প্রিয় নায়কের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন।
একসময় যিনি রোমান্টিক নায়ক হিসেবে সিনেমা হলে দর্শকদের মাতিয়ে রাখতেন, আজ তিনিই রাজনীতির মঞ্চে নতুন খেলা শুরু করতে যাচ্ছেন। তিনি আর কেউ নন, দক্ষিণী চলচ্চিত্রের অন্যতম সুপারস্টার থালাপতি বিজয়। চলুন জেনে নিই পর্দা থেকে রাজপথ পর্যন্ত বিজয়ের এই রোমাঞ্চকর যাত্রার গল্প।

ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে তারকাদের আগমন নতুন কোনো ঘটনা নয়, বিশেষ করে তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে যেখানে অভিনেতা-রাজনীতিবিদদের দীর্ঘ এবং সফল ইতিহাস বিদ্যমান। এম. জি. রামচন্দ্রন (এমজিআর), জয়ললিতা এবং বিজয়াকান্তের মতো তারকারা প্রমাণ করেছেন যে রূপালি পর্দার জনপ্রিয়তা ভোটের বাক্সেও সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারে। এই ঐতিহ্যের সর্বশেষ সংযোজন হলেন তামিল সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর। 'থালাপথি' বা 'সেনাপতি' হিসেবে পরিচিত এই অভিনেতা গত কয়েক বছরে 'লিও' এবং 'দ্য গ্রেটেস্ট অফ অল টাইম'-এর মতো বাণিজ্যিক সফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। তার রাজনৈতিক অভিষেকের ঘোষণা কোনো আকস্মিক সিদ্ধান্ত ছিল না, বরং এটি তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রস্তুতির একটি সুপরিকল্পিত চূড়ান্ত পরিণতি।
প্রারম্ভিক জীবন, পরিবার ও শিক্ষা
জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর, জনপ্রিয় নাম থালাপতি বিজয়, জন্ম ২২ জুন ১৯৭৪ সালে চেন্নাইতে। বাবা এস এ চন্দ্রশেখর বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এবং মা শোবা চন্দ্রশেখর একজন কণ্ঠশিল্পী।

ছোটবেলায় বোন বিদ্যা মারা যান, যা বিজয়ের জীবনে গভীর ছাপ ফেলে। তিনি বালালোক মেট্রিকুলেশন স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং লয়োলা কলেজে ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশনসে ভর্তি হয়েছিলেন, তবে পড়াশোনা শেষ না করেই অভিনয়ে মনোনিবেশ করেন।
সিনেমায় আত্মপ্রকাশ ও খ্যাতির শিখরে ওঠা
শিশুশিল্পী হিসেবে ১৯৮৪ সালে ‘ভেট্রি’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। এরপর কয়েকটি সিনেমায় ছোট চরিত্রে অভিনয় করলেও ১৯৯২ সালে ‘নালাইয়া থিরপু’তে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। প্রথমদিকে বক্স অফিসে সফলতা পাননি, কিন্তু ১৯৯৬ সালের ‘পুভে উনাকাগা’ তাঁকে আলোচনায় আনে। ধীরে ধীরে ‘কাধালুক্কু মারিয়াধাই’, ‘থুল্লাধা মনমুম থুল্লুম’, ‘ঘিলি’, ‘পক্কিরি’সহ একের পর এক সফল ছবি তাঁকে দক্ষিণের সুপারস্টার বানায়। তাঁর ভক্তরা তাঁকে ডাকতে শুরু করে ‘থালাপতি’ নামে-অর্থাৎ সেনাপতি।

সিনেমা থেকে বিদায় ও শেষ চলচ্চিত্রের ঘোষণা
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করেন নিজের রাজনৈতিক দল ‘তামিলাগা ভেত্ত্রি কাজাগম’ (টিভিকে) এবং জানান, বাকি দুটি ছবি শেষ করেই পুরোপুরি রাজনীতিতে মন দেবেন। সেই তালিকায় প্রথম ছিল ‘দ্য গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’, আর দ্বিতীয় ও শেষ ছবি ‘জানানায়াগন’। এই ছবিতে বিজয়ের সঙ্গে অভিনয় করছেন পূজা হেগড়ে। পূজা হেগড়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি বেশ কষ্ট পেয়েছি। বিজয় স্যার এতই শান্ত ও সহজ মানুষ যে তাঁর সঙ্গে কাজ করা সবসময় আরামদায়ক। তিনি বড় স্বপ্ন দেখেন, অন্যরকম স্বপ্ন। তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাঁকে।’ ছবিটি মুক্তি পাবে ৯ জানুয়ারি ২০২৬ সালে, নির্বাচনের আগেই। ছবির শুটিং চলাকালে চেন্নাই ও মাদুরাইয়ে বাইরে শুট করতে হলে ভক্তদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হতো। সম্প্রতি মাদুরাইয়ের এক অনুষ্ঠানে হাজারো ভক্তের ভালোবাসা দেখে বিজয় নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

রাজনীতিতে পদার্পণ
বিজয়ের রাজনৈতিক যাত্রার মূল ভিত্তি হলো তার বিশাল ফ্যান ক্লাব, যা বছরের পর বছর ধরে একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিণত হয়েছে। ২০০০-এর দশকের শুরু থেকেই এই ফ্যান ক্লাবগুলো সংগঠিত হতে শুরু করে। ২০০৯ সালের ২৬ জুলাই পুদুক্কোট্টাইয়ে এই উদ্যোগটি আনুষ্ঠানিকভাবে 'বিজয় মাক্কাল ইয়াক্কাম' (বিএমআই) নামে একটি জনকল্যাণমূলক সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যা বিভিন্ন জনসেবামূলক ও পরহিতৈষী কাজে যুক্ত ছিল। একসময় বিএমআই-এর মাধ্যমে তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিতেন।
ধীরে ধীরে বিজয় তার চলচ্চিত্রে এবং জনসমাবেশে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে তার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত দিতে শুরু করেন। তার রাজনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রথম বড় পরীক্ষা ছিল ২০২১ সালের গ্রামীণ স্থানীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিএমআই-এর সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১২৯টিতে জয়লাভ করে, যা এক অপ্রত্যাশিত সাফল্য ছিল। এরপর ২০২২ সালের শহুরে স্থানীয় নির্বাচনেও তারা আরও ১০টি আসন জয় করে। এই ধারাবাহিক সাফল্য তার দলের শক্তি এবং রাজনৈতিক আনুগত্যের এক জোরালো প্রমাণ দেয়। এই সুসংগঠিত ফ্যানবেস এবং জনসমর্থনের ভিত্তি থেকেই তিনি ২০২৪ সালে রাজনৈতিক দল গঠনের চূড়ান্ত ঘোষণা দেন।
'তামিলগা ভেত্রি কাজাগাম'
২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বিজয় তার রাজনৈতিক দল 'তামিলগা ভেত্রি কাজাগাম' (টিভিকে)-এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন। তিনি দলের সভাপতি হন এবং এন. আনন্দকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। 'তামিলগা ভেত্রি কাজাগাম' নামের অর্থ 'তামিলনাড়ুর বিজয় সংঘ'। দলের ঘোষিত স্লোগান হলো 'পিরপ্পোক্কুম এল্লা উইরক্কুম', যার অর্থ 'জন্মের দিক দিয়ে সবাই সমান'। এই স্লোগানটি সাম্য ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রতি দলের প্রতিশ্রুতির ইঙ্গিত দেয়। গত দুই বছরে টিভিকে-এর রাজনৈতিক পথচলা ছিল বেশ কৌশলগত এবং সুপরিকল্পিত, যা নিম্নলিখিত সারণীতে স্পষ্ট করা যায়।
তারিখ |
ঘটনা |
২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ |
রাজনৈতিক দল 'তামিলগা ভেত্রি কাজাগাম'-এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, সভাপতি হিসেবে বিজয়ের নাম ঘোষণা এবং ২০২৬ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভিপ্রায় ব্যক্ত। |
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ |
বিকরাভান্ডিতে প্রথম রাজনৈতিক সম্মেলন, যেখানে ৮ লাখেরও বেশি মানুষের উপস্থিতি। দলের আদর্শিক ভিত্তি হিসেবে 'সেকুলার সোশ্যাল জাস্টিস' ঘোষণা। |
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ |
বুথ-ভিত্তিক কাঠামো শক্তিশালী করার জন্য সাংগঠনিক বিস্তারের ঘোষণা। ৭০,০০০-এর বেশি বুথ এজেন্ট নিয়োগের পরিকল্পনা। |
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ |
কোয়েম্বাটুরে বুথ এজেন্ট এবং দলীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিজয়ের বৈঠক। তৃণমূল পর্যায়ে দলের শক্তি বৃদ্ধির ওপর জোর। |
২১ আগস্ট, ২০২৫ |
মাডুরাইতে দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলন, যেখানে বিজয় তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ডিএমকে এবং বিজেপি-র বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ শানান। |
৯ জানুয়ারি, ২০২৬ |
বিজয়ের শেষ চলচ্চিত্র 'জন নায়কন' মুক্তি। ছবিটি তার রাজনৈতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। |

আদর্শগত অবস্থান: বাম-ঝোঁক নাকি মধ্যপন্থা?
টিভিকে তার আদর্শ হিসেবে 'সেকুলার সোশ্যাল জাস্টিস' বা ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক ন্যায়কে ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক ন্যায়, ধর্মনিরপেক্ষতা, সাম্যবাদ, দুই ভাষার নীতি এবং গণতন্ত্রের মতো বিষয়। প্রথম থেকেই বিজয় তার দলকে একটি বাম-ঝোঁক অবস্থানে স্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। দলের পক্ষ থেকে সমর্থকদের 'কমরেড' বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এছাড়াও দলের আদর্শিক নেতা হিসেবে পেরিয়ার, বি. আর. আম্বেদকর এবং মার্কসবাদকে গ্রহণ করে এই বাম-ঝোঁকের ইঙ্গিত স্পষ্ট করা হয়।

তবে, বিজয়ের আদর্শগত অবস্থান একটি সুচিন্তিত ভারসাম্যপূর্ণ কৌশল হিসেবে ধরা হয়। তিনি পেরিয়ারের নাস্তিক্যবাদকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ না করে, সি. এন. আন্নাদুরাইয়ের 'ওনরে কুলাম, ওরুভানে থেভান' নীতি গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও তিনি কে. কামরাজ এবং নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী ভেলু নাচিয়ার ও অঞ্জলাই আম্মালকে তার আদর্শিক নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এই মিশ্র আদর্শ তাকে কেবল বামপন্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, একটি বিস্তৃত সামাজিক ভিত্তি আকর্ষণ করতে সাহায্য করে। তিনি বিজেপি-কে হিন্দুত্ববাদী দল হিসেবে এবং ডিএমকে-কে পরিবারতন্ত্র ও দুর্নীতির জন্য সমালোচনা করে নিজেকে 'সেকুলার সোশ্যাল জাস্টিস'-এর প্রবক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।
জনসমাবেশে শক্তির প্রদর্শন: বিকরাভান্ডি ও মাডুরাই
বিজয়ের রাজনৈতিক যাত্রায় দুটি বড় জনসমাবেশ তার শক্তির প্রদর্শনী হিসেবে কাজ করেছে। প্রথমটি ছিল ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর বিকরাভান্ডিতে অনুষ্ঠিত দলের প্রথম সম্মেলন, যেখানে ৮ লাখেরও বেশি মানুষের উপস্থিতি বিজয়ের জনপ্রিয়তাকে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরের প্রথম বড় দৃষ্টান্ত। এই সম্মেলনে পেরিয়ার, আম্বেদকর, ভেলু নাচিয়ার ও কামরাজের মতো নেতাদের বড় আকারের কাটআউট প্রদর্শন করে টিভিকে তাদের আদর্শিক ভিত্তি নিশ্চিত করে।

মাডুরাইতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সম্মেলনে বিজয় নিজেকে 'সিংহ' হিসেবে তুলনা করে বলেন, 'একটি সিংহ একা থাকতেও জানে, আবার ভিড়েও থাকতে পারে। এটি কেবল শিকার করার জন্যই আসে, সময় কাটানোর জন্য নয়।' এই উপমা ব্যবহার করে তিনি নিজেকে একজন নির্জন, শক্তিশালী এবং নির্ভীক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন, যিনি প্রচলিত জোট-নির্ভর রাজনীতির ঊর্ধ্বে। তিনি আসন্ন ২০২৬ সালের নির্বাচনকে ১৯৫৭ ও ১৯৭৭ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করেন, যখন নতুন দলগুলো ক্ষমতায় এসেছিল। সমাবেশগুলোর বিশাল জনসমাগমকে বিজয় কেবল সমর্থন হিসেবে দেখেননি, বরং এটিকে জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'যারা বলেন এই ভিড় ভোটে রূপান্তরিত হবে না, তাদের বলি-এই ভিড় কেবল সমর্থন নয়, আমরা রাজ্যের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছি।'
প্রতিপক্ষ কারা: ডিএমকে, বিজেপি ও অন্যান্য
মাডুরাইয়ের সম্মেলনে বিজয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তার 'আদর্শগত শত্রু' হলো বিজেপি এবং 'রাজনৈতিক শত্রু' হলো ডিএমকে। বিজেপি-র বিরুদ্ধে তার মূল অভিযোগ ছিল ফ্যাসিবাদী শাসন, কেন্দ্রের মাধ্যমে তামিলনাড়ুর জনগণের সমস্যা উপেক্ষা করা এবং এআইএডিএমকে-কে 'পেছনের দরজা' হিসেবে ব্যবহার করা।
ডিএমকে-র বিরুদ্ধে তিনি পরিবারতন্ত্র, দুর্নীতি এবং জনগণের কাছে দেওয়া মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অভিযোগ তোলেন। মুখ্যমন্ত্রী এম. কে. স্টালিনকে তিনি বারবার 'স্টালিন আঙ্কেল' সম্বোধন করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, নারী নিরাপত্তাহীনতা এবং বিজেপি-র সঙ্গে 'গোপন আঁতাত'-এর অভিযোগ এনেছেন। এই সম্বোধন কেবল একটি মজার খোঁচা নয়, এটি রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রতি বিজয়ের কৌশলগত আক্রমণ।
ডিএমকে, এআইএডিএমকে এবং বিজেপি-র নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ডিএমকে নেতারা তার 'স্টালিন আঙ্কেল' সম্বোধনকে 'অপরিপক্ব' বলে অভিহিত করেছেন। বিজেপি নেতা তামিলিসাই সুন্দরারাজন সমালোচনা করে বলেছেন যে বিজয় একজন অভিনেতার মতো কাজ করছেন এবং তার সম্মেলনটি একটি 'সিনেমাটিক ইভেন্ট'। এআইএডিএমকে নেতারা অভিযোগ করেছেন যে বিজয় তাদের আদর্শিক নেতা এমজিআর-এর নাম ও ছবি ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছেন।
২০২৬ সালের নির্বাচন: বিজয়ের কৌশল
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজয় স্পষ্ট করেছেন যে তার দল একাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, কোনো জোট করবে না। মাডুরাইতে তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি মাডুরাই ইস্ট আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে তিনি বলেন, প্রতিটি টিভিকে প্রার্থীই আসলে তার প্রতিনিধিত্ব করবে, অর্থাৎ 'টিভিকে-কে ভোট দেওয়া মানে তাকেই ভোট দেওয়া'। মাডুরাই ইস্ট আসনটি বেছে নেওয়ার রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে, কারণ এটি বিজয়াকান্তের জন্মস্থান, যাকে বিজয়ের রাজনৈতিক পূর্বসূরি হিসেবে তুলনা করা হয়।
নির্বাচনকে সামনে রেখে টিভিকে রাজ্যজুড়ে সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তারা ৭০,০০০-এর বেশি বুথ এজেন্ট নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে, যা তাদের তৃণমূল স্তরের শক্তি বৃদ্ধি করবে। অতীতে তার ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা স্থানীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ দিয়েছে।
উপসংহার: সম্ভাবনা নাকি সংশয়?
বিজয় তার রাজনৈতিক যাত্রাকে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক ইতিহাসে এমজিআর ও জয়ললিতার ধারায় স্থাপন করতে চেয়েছেন। তবে সকল অভিনেতার রাজনৈতিক সাফল্য সমান ছিল না। বিজয়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো তার তারকা-খ্যাতিকে স্থায়ী রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তর করা, প্রচলিত দলগুলোর আক্রমণ মোকাবিলা করা এবং দলের অভিজ্ঞতার অভাব পূরণ করা।

বিজয়ের শেষ চলচ্চিত্র 'জন নায়কন'-এর ট্যাগলাইন ছিল 'গণতন্ত্রের মশালবাহী', যা তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে দৃঢ় করে। মাদুরাইয়ের সম্মেলনে বিজয় বলেছেন, 'সব রাজনীতিবিদ জ্ঞানী নন, এবং সব অভিনেতাই বোকা নন।' এই বক্তব্য কেবল প্রতিবাদের ভাষা নয়, বরং প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি সমালোচনার বহিঃপ্রকাশ। এখন দেখার বিষয়, বিজয় কি তার ফ্যান ক্লাবের শক্তি, সুচিন্তিত আদর্শ এবং আক্রমণাত্মক কৌশল ব্যবহার করে ২০২৬ সালের নির্বাচনে ডিএমকে-এর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন এবং তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক ইতিহাসে নিজের নাম নতুন অধ্যায় হিসেবে যুক্ত করতে পারবেন কিনা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন