ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

অন্ধকার ঘরে ঘুমালে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, বলছে গবেষণা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ১২:৪১ এএম

ঘর অন্ধকার না হলে অনেকেরই ঘুম আসে না। আলোতে কারও ঘুম ভেঙে যায়, কারও মনোযোগ নষ্ট হয়। শান্ত ও অন্ধকার পরিবেশে ঘুমানোর পরামর্শ বহুদিনের। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে— এ পরামর্শ শুধু ঘুমের আরাম নয়, হৃদ্‌রোগ থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।

ঘুমের সময় কোনো ধরনের আলো শরীরে চাপ সৃষ্টি করে, যা ভবিষ্যতে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে; এমনটাই জানানো হয়েছে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সায়েন্টিফিক সেশনস ২০২৫-এ উপস্থাপিত নতুন গবেষণায়।

যদিও গবেষণাটি এখনো পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়নি, তবে এর প্রাথমিক ফলাফল ঘুমের সময় অন্ধকার পরিবেশের প্রয়োজনীয়তাকে আরও একধাপ জোরালো করে তুলে ধরেছে।

আলো কেন ক্ষতিকর?

ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের গবেষকেরা ২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ৪৬৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ঘুমের পরিবেশ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের ঘর ও আশপাশের আলোর মাত্রা পরিমাপ করে তারা দেখেন— 

  • রাতে কৃত্রিম আলো যত বেশি ছিল
  • পরবর্তী বছরগুলোতে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও তত বেশি ছিল

গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়—

  • আলোর তীব্রতা বাড়লে পরবর্তী পাঁচ বছরে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৩৫% বৃদ্ধি পায়
  • পরবর্তী দশ বছরে হৃদ্‌রোগের সামগ্রিক ঝুঁকি বাড়ে ২২%

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমের সময় আলো মস্তিষ্কে চাপ বাড়ায়। এই চাপ ধমনিতে প্রদাহ বা ব্যথা সৃষ্টি করে, যা পরে হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোকের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির ঘুম বিশেষজ্ঞ জোনাথন সিডেরনায়েসের মতে, কৃত্রিম আলো বিপাককে ব্যাহত করে, স্নায়ুতন্ত্রে অস্থিরতা আনে এবং প্রদাহ বাড়ায়—যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি তৈরি করে।

২০২২ সালের আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ আলোতেও যারা ঘুমিয়েছিলেন, তাদের—

  • হার্ট রেট বেড়ে গিয়েছিল
  • গভীর ঘুম কমে গিয়েছিল
  • ইনসুলিন সংবেদনশীলতা দুর্বল হয়েছিল


হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্ক একই সূত্রে বাঁধা

হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ ড. জেন মর্গান বলেন, প্রদাহ হলো শরীরের চাপের প্রতিক্রিয়া। এ প্রদাহই ধমনিকে শক্ত করে তোলে, যা শেষ পর্যন্ত হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের দিকে নিয়ে যায়। হৃদয় ও মস্তিষ্ক—একটির ওপর অন্যটির প্রভাব সরাসরি পড়ে।

রাতে আলো থাকলে শরীরে মেলাটোনিন নামক ঘুম-হরমোন কমে যায়। এতে রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবে কমতে পারে না। রাতে দীর্ঘ সময় ধরে আলো জ্বলে থাকলে এই প্রক্রিয়া আরও ব্যাহত হয়।

মোবাইল ফোনের স্ক্রিন থেকে আসা নীল আলোও বড় সমস্যা। এটি শুধু ঘুম নষ্টই করে না, বরং হৃদ্‌স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভালো ঘুমের জন্য অন্ধকার কেন গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন গবেষণা বারবার দেখাচ্ছে—

  • অন্ধকার ঘর মানেই ভালো ঘুম
  • আর ভালো ঘুম মানেই সুস্থ হৃদযন্ত্র

অন্ধকার ঘুমের তিনটি বড় উপকারিতা—

  • রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবে কমে
  • মেলাটোনিন ঠিকভাবে নিঃসৃত হয়
  • শরীরের পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া বাধাহীনভাবে চলে

কীভাবে ঘুমের পরিবেশ করবেন আলো নিয়ন্ত্রিত?

১. জানালা ঢেকে দিন

পর্দা ঠিকমতো আলো আটকাতে না পারলে ব্ল্যাকআউট পর্দা ব্যবহার করুন।
স্বল্প খরচে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলও কাজে আসতে পারে।

২. দরজার নিচের ফাঁক বন্ধ করুন

তোয়ালে বা কাপড় গুঁজে দিলেই অকারণ আলো ঢোকা কমে যায়।

৩. স্লিপ মাস্ক ব্যবহার করুন

আলো আটকাতে এটি সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর সমাধান।

৪. মোশন-সেন্সিং নাইট লাইট ব্যবহার করুন

সব সময় জ্বলে থাকা নাইট লাইট নয়—শুধু প্রয়োজনের সময় জ্বলে এমন লাইট বেছে নিন।