কলা এমন একটি ফল, যেটি সারাবছরই পাওয়া যায়। নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফল নিয়মিত খেলে সাধারণ রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে সহায়তা করে। অন্যান্য ফলের তুলনায় কলা সহজলভ্য। দামেও সস্তা। তাই যে কোনো পেশার মানুষ সহজে এই ফলটি খেতে পারেন। উত্পাদন, স্বাদ ও সুগন্ধের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ায় কলাকে ফলের রানি বলেন অনেকে।
কলার পুষ্টিগুণ
১০০ গ্রাম কলায় যা থাকে (গড় হিসাব):
ক্যালোরি: ৮৯
কার্বোহাইড্রেট: ২২.৮ গ্রাম
চিনি: ১২.২ গ্রাম
প্রোটিন: ১.১ গ্রাম
ফ্যাট: ০.৩ গ্রাম
আঁশ: ২.৬ গ্রাম
পটাশিয়াম: ~৩৫৮ মি.গ্রা.
শক্তির ভালো উৎস: কলায় প্রাকৃতিক চিনি যেমন – গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ থাকে, যা দ্রুত শক্তি দেয়। তাই সকালের নাস্তায় বা ওয়ার্কআউটের আগে কলা খাওয়া উপকারী।
আঁশে ভরপুর: কলায় দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় দুই ধরনের আঁশ থাকে, যা হজমশক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং দীর্ঘসময় পেট ভরা অনুভব হয়।
পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ: কলায় উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো।
ভিটামিন ও খনিজে পরিপূর্ণ:
ভিটামিন বি৬- স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখে এবং হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সি- রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
ম্যাগনেশিয়াম ও কপার- হাড় ও পেশি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড: যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য কলা প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে: কলায় ট্রিপটোফ্যান নামে একটি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা সেরোটোনিন তৈরিতে সাহায্য করে। যা মন ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।
নিয়মিত কলা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি শুধু একটি সহজলভ্য ও সস্তা ফলই নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারিও।
কলা খাওয়ার উপকারিতা
শক্তি জোগায় দ্রুত- কলা প্রাকৃতিক শর্করা (গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ ও সুক্রোজ) এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, যা শরীরকে তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী শক্তি জোগায়। তাই ব্যায়াম বা কাজ শুরুর আগে একটি কলা খেলে শক্তি পাওয়া যায়।
হজমে সহায়তা করে- কলা দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবারে ভরপুর, যা হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। এটি অন্ত্রের গঠন উন্নত করে এবং পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়।
হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে- কলা পটাশিয়ামসমৃদ্ধ ফল, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা ভালো রাখতে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
মন ভালো রাখে- কলা ট্রিপটোফ্যান নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড ধারণ করে, যা শরীরে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়। সেরোটোনিন মস্তিষ্কে "ভালো লাগা" হরমোন হিসেবে কাজ করে, ফলে মন ভালো থাকে ও হতাশা কমে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে- কলা খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে। এতে ক্যালরি কম, কিন্তু ফাইবার বেশি থাকায় এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়- কলা আয়রনসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ত্বকের ও চুলের জন্য উপকারী- কলা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। এটি ত্বককে উজ্জ্বল রাখে এবং বলিরেখা কমায়। চুলেও পুষ্টি জোগায়।
গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা কমায়- কলা পাকস্থলীতে একটি সুরক্ষামূলক আবরণ তৈরি করে, যা গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং আলসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নির্দিষ্ট কিছু এনজাইম শরীরে প্রদাহজনক উপাদান তৈরিতে বাধা দেয়, ব্যথা ও ফোলাভাব কমায়। একটি সুস্থ গর্ভধারণকে সমর্থন করে: কাঁচা কলা তাদের পুষ্টিগুণের কারণে গর্ভবতী মায়েদের জন্য একটি চমৎকার পছন্দ।
কাঁচা কলা কাদের খাওয়া উচিত নয়?
অতিরিক্ত কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে গ্যাস হতে পারে, ফলে পেট ফাঁপা, আলগা গতি, খিঁচুনি, বমি বমি ভাব এবং এমনকি বমিও হতে পারে । খুব বেশি মাত্রায় খাওয়া হলে, সবুজ কলা আমাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে কিছু লোকের কাঁচা কলার প্রতি তীব্র অ্যালার্জিও দেখা দেয়।
কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও এর কিছু অপকারিতা রয়েছে।
কলা খাওয়ার অপকারিতা:
ওজন বৃদ্ধি: কলা তুলনামূলকভাবে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত (বিশেষত পাকা কলা)। দিনে অনেকগুলো কলা খেলে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে যেতে পারে, যা ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে: পাকা কলায় প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ) বেশি থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত কলা খাওয়া রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়াতে পারে।
কিডনি রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ: কলা উচ্চমাত্রায় পটাশিয়ামযুক্ত। কিডনি যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তবে শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমে হাইপারক্যালেমিয়া হতে পারে—যা হৃদযন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।
অতিরিক্ত কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে: যদিও কলা হজমে সহায়তা করে, তবে অনেক সময় অপরিপক্ব বা আধা-পাকা কলা খাওয়া হলে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়তে পারে।
মাইগ্রেন বাড়াতে পারে: কলা টায়ারামিন নামে একটি যৌগ ধারণ করে, যা কিছু মানুষের মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের ট্রিগার হিসেবে কাজ করতে পারে।
বেশি ঘুম পেতে পারে: কলা ট্রিপটোফ্যান এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ, যা স্নায়ু শান্ত করে ও ঘুম বাড়ায়। অতিরিক্ত খেলে দিনে ঘুম ঘুম ভাব আসতে পারে, বিশেষ করে যারা অফিস বা পড়াশোনায় ব্যস্ত।
দাঁতের ক্ষতি: প্রচুর চিনি থাকায় অতিরিক্ত কলা খেলে দাঁতে প্লাক জমতে পারে এবং ক্যাভিটির ঝুঁকি বাড়ে—বিশেষ করে যদি খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার না করা হয়।