শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাজে। আগে বেহিসেবি চলত। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত অফিস করতেন না। সার্বক্ষণিক ধ্যান-জ্ঞান ছিল ধান্দাবাজি, পকেট ভারী করা। দিনের পর দিন ফাইল পড়ে থাকত, নড়াচড়া করত না। সে অবস্থা এখন আর খুব একটা নেই। সাত দিনে ফাইল নিষ্পন্ন হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, রাজউক ভবনে আগে দালালে গিজগিজ করত। ফ্লোরে ফ্লোরে ছিল জটলা, ছিল হৈ-হল্লা। বলতে গেলে রাজউক এখন দালালমুক্ত। চারদিকে সুনসান নীরবতা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথাবার্তার আওয়াজও কানে আসে না, কক্ষে কক্ষে কাজ চলছে নীরবে। মুগ্ধ হওয়ার মতো পরিবেশ। রীতিমতো মন-প্রাণ ভরে ওঠে।
এই নতুন রাজউকের রূপকার হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার। তার যোগদানের কিছুদিনের মধ্যেই ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে রাজউক। বদলানোর প্রক্রিয়ায় অল্প ক’মাসেই রাজউকের আজকের এই অবয়ব। বাহ্যিক স্বচ্ছতার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক সংস্কারও চোখে পড়ার মতো।
নিয়মিত কয়েক দিন রাজউক ভবনে গিয়ে দেখা গেছে সর্বত্রই প্রাণের সঞ্চার। বেগবান হয়েছে কাজের গতি। ফাইল আটকে রেখে অনৈতিক চাওয়া-পাওয়া নেই। যেখানেই এসব প্রবণতা মাথাচাড়া দেয়, সেখানেই হাত পড়ে তার। ঝামেলায় পড়া সেবাপ্রার্থীদের জন্য তার দরজা অবারিত। দু-একটা মিটিং করেও ক্লান্তি তাকে স্পর্শ করে না। প্রতিদিন ১০-২০ জনের সঙ্গে সাক্ষাৎ দেন। কথা শোনেন, কাজ দেখে তাৎক্ষণিক সমাধান দেন।
সহাস্যে সেবাপ্রার্থীরা বিদায় নেন। কিছুদিন হলো ভবনের নিচতলায় চালু হয়েছে ওয়ানস্টপ সেন্টার। সেখানে মানুষ পেয়ে যাচ্ছে কাক্সিক্ষত সেবা। অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে গতি আনতে তিনি হাত দিয়েছেন ব্যাপক সংস্কারে। ই-নথি চালুসহ ডিজিটালাইজেশনে মনোযোগ দেওয়ায় বাড়তে শুরু করেছে প্রযুক্তির ব্যবহার।
দায়িত্ব নিয়েই রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা অবলম্বন করে দুর্নীতির মূলে আঘাত করতে শুরু করেন। ফলে ধসে পড়তে থাকে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রাচীরগুলো। তার শক্তিশালী মনিটরিং এবং সার্বক্ষণিক নজরদারির কারণে অধস্তনরা আরশোলার মতো সোজা হয়ে যান।
এ কারণে নিয়ম-নীতি মেনে কাজ করতে বাধ্য হন। আগে যেখানে অনৈতিক ধান্দার কারণে একটি ফাইল নিষ্পন্ন হতে সময় লাগত মাসের পর মাস, এখন সেখানে সময় লাগে পাঁচ-সাত দিন। তার দৃঢ় মনোভাব এবং বলিষ্ঠ পদক্ষেপের দরুন বহু দুর্নীতিবাজ ইতিমধ্যে বিদায় নিয়েছে, জায়গা করে নিয়েছেন নতুন উদ্যমী জনবল। বোর্ডে যুক্ত হয়েছেন পরিচ্ছন্ন ইমেজের সদস্যরা। অনেক কর্মচারীকে বদলি এবং সাময়িক বহিষ্কার করার পর আতঙ্ক নেমে আসে। অনেকে নেপথ্যে বলাবলি করতে শুরু করেন, বিধি ভঙ্গ করা হয়েছে।
অথচ জানা যায়, রাজউক (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) বিধিমালা, ২০১৩ অনুসরণ করা হয়েছে সব ক্ষেত্রেই। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। কারো কারো বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও রুজু করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, সেবার মানোন্নয়ন এবং জনসেবা নিশ্চিতই তার এখনকার ধ্যান-জ্ঞান। তিনি পুরনো ঢাকাকে আধুনিকীকরণ করতে চান, সামগ্রিক ঢাকাকে ভূমিকম্প সহনীয় একটি বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এ লক্ষ্যে তিনি মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে এখন ব্যস্ত। রূপালী বাংলাদেশকে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ড্যাপের সংশোধন ও বিধিমালা সময়োপযোগী করা হচ্ছে। ফার নিয়েও কাজ চলছে। সর্বোপরি আমরা বৈষম্যবিরোধী সংস্কারে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছি।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031160223.webp) 
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন