বলিউডে বহু তারকার জীবনেই আছে কঠোর সংগ্রামের কাহিনি। তবে সঞ্জয় মিশ্রর জীবনের গল্প যেন একটু বেশিই নাটকীয়, একটু বেশিই অনুপ্রেরণাদায়ক। একসময় তিনি ধাবায় কাজ করে প্রতিদিন আয় করতেন মাত্র ১৫০ টাকা। আর আজ তিনি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক, যিনি সমুদ্রসৈকতের পাশে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। এই রূপকথার পেছনে আছে অনেক ঘাম, কষ্ট, ট্র্যাজেডি এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
অভিনয়ে যাত্রা
বিহারে জন্ম নেওয়া সঞ্জয় মিশ্রর অভিনয়জীবনের সূচনা হয় টেলিভিশনের মাধ্যমে। তিনি প্রথম নজর কাড়েন ধারাবাহিক ‘চাণক্য’ এবং জনপ্রিয় সিটকম ‘অফিস অফিস’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে। যদিও তার প্রতিভা প্রথম দিকে টেলিভিশনে ধরা পড়লেও বলিউডে সত্যিকার খ্যাতি আসে রোহিত শেঠির ‘গোলমাল’, ‘ধামাল’ ও ‘অল দ্য বেস্ট’-এর মতো ছবিতে হাস্যরসাত্মক চরিত্রের মাধ্যমে।
জীবনের অন্ধকার অধ্যায়
২০০৯ সালে এক শুটিং চলাকালে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সঞ্জয়। পেটের ব্যথায় ভুগতে থাকলে তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে, এ সময় তার শরীর থেকে প্রায় ১৫ লিটার পুঁজ বের করতে হয়। ঠিক এই সংকটময় সময়েই তার বাবার মৃত্যু হয়। এই দুই ধাক্কা সঞ্জয়ের মানসিক ভারসাম্যই যেন নাড়িয়ে দিয়েছিল। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি সবকিছু ছেড়ে চলে যান উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশে, জীবনের অর্থ খুঁজতে।
রোহিত শেঠির ফোন কল
ঋষিকেশে গিয়ে সঞ্জয় কাজ নেন একটি ছোট ধাবায়। দিনে ৫০টি কাপ ধুয়ে মাত্র ১৫০ টাকা আয় করতেন। সেই সময়েই পরিচালক রোহিত শেঠি তাকে খুঁজে পান এবং ‘অল দ্য বেস্ট’ ছবির জন্য প্রস্তাব দেন। এই প্রজেক্টই ছিল তার চলচ্চিত্রে প্রত্যাবর্তনের সূচনা। এই ছবির ‘ধোন্ডু... জাস্ট চিল’ সংলাপ রাতারাতি জনপ্রিয় হয় এবং নতুন করে সঞ্জয়ের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে।
সঞ্জয়ের সম্পদ
বর্তমানে সঞ্জয় মিশ্রর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৫০ কোটি রুপি। সম্প্রতি তিনি মুম্বাইয়ের ম্যাড আইল্যান্ডে ৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে (প্রায় ৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা) একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। ফ্ল্যাটটি রাহেজা এক্সোটিকা সাইপ্রাস টাওয়ারের ১৫ তলায়, এর কার্পেট এরিয়া ১,৭০২ বর্গফুট এবং অতিরিক্ত ২০১ বর্গফুটের ডেক এলাকা। এতে আছে সমুদ্রের দৃশ্য, বিলাসবহুল ডিজাইন এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। তার সংগ্রহে আছে টয়োটা ফর্চুনার ও বিএমডব্লিউর মতো বিলাসবহুল গাড়িও।
মন্দির নির্মাণ
মুম্বাইয়ের কোলাহল থেকে দূরে সঞ্জয় লোনাভালার তিস্কারি গ্রামে একটি জৈব খামারবাড়ি গড়ে তুলেছেন। শুধু তাই নয়, সেখানে তিনি একটি শিব মন্দিরও নির্মাণ করেছেন, যা ৪১ বছর আগে দুইজন সাধু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। সেই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ করতেই তিনি মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এই ফার্মহাউসে পর্যটকরা থাকতে পারেন এবং কৃষিকাজের অভিজ্ঞতাও নিতে পারেন।
সিনেমার তালিকা
১৯৯৫ সালে চলচ্চিত্রজগতে অভিষেকের পর থেকে সঞ্জয় মিশ্র অভিনয় করেছেন ২০০টিরও বেশি ছবিতে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ‘অল দ্য বেস্ট’, ‘গোলমাল’, ‘ধামাল’, ‘ফাঁস গ্যায়ে রে ওবামা’, ‘আঁখোঁ দেখি’, ‘বধ’, ‘ভুল ভুলাইয়া ৩’, ‘সন অব সরদার ২’, ‘হির এক্সপ্রেস’ ইত্যাদি। তার ‘আঁখোঁ দেখি’ ছবির জন্য পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার, আর ‘বধ’-এর জন্যও প্রশংসিত হয়েছেন সমালোচকদের কাছে।
ফকিরের মতো জীবনযাপন
নিজেকে তিনি মনে করেন একধরনের ফকির। সঞ্জয়ের কথায়, ‘অভিনয় আমার পেশা নয়, আমার জীবন। কখনো কাজ না থাকলে লোনাভালার ফার্মহাউসে চলে যাই। সারা দিন মাঠে বসে ভাবি জীবন নিয়ে।’
তিনি বলেন, অর্থের প্রয়োজন অস্বীকার করেন না, তবে শান্তি, পরিবার আর ভালো পরিবেশই তার প্রকৃত সুখ। বেনারস তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা—গলি, ঘাট, সংগীত আর রাস্তার খাবারে তিনি খুঁজে পান নিজের অস্তিত্ব।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া ডটকম