বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ১২:৩৭ এএম

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের হদিস নেই

নিয়োগ-বদলিতে লুট হাজার কোটি টাকা

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ১২:৩৭ এএম

নিয়োগ-বদলিতে লুট হাজার কোটি টাকা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া-চকবাজার) আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দখল, লুটপাট-দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিক্ষা খাত ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম বন্দর এলাকাকেন্দ্রিক নানা অপকর্ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। মন্ত্রী হওয়ার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। নওফেল নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক। মন্ত্রী হয়েও চসিক প্রতিষ্ঠিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুটি বিশ্ববিদ্যলয় দখল করেন। গত দুই মেয়াদে নওফেল-দীপু মনি শিক্ষা খাতকে পিছনে ঠেলে দিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যত দিন ছিলেন, তত দিন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রকল্প থেকে অর্থ লোপাটের বিস্তর অভিযোগ সাবেক মন্ত্রী নওফেলের বিরুদ্ধে। নকল সিগারেটের ব্যবসা করে পাঁচ হাজার কোটি টাকা লুটেরও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রী।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে আলাদা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন নওফেল। নওফেলের নির্দেশে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর দমন-পীড়ন, গুলি, হামলা-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। আন্দোলন চলাকালে নওফেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত তাদের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে কঠোর হাতে দমনের কথা বলেছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানকে কাজে লাগান ন্যক্কারজনকভাবে। ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা এবং একাধিক হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হুকুমের আসামি হিসেবে কমপক্ষে এক ডজন মামলার আসামি হয়েছেন। চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণকারী সশস্ত্র আওয়ামী ক্যাডারদের বেশির ভাগই তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুবরাজ হিসেবে মন্ত্রিসভায় যোগ দেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পরই তার রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। দ্বাদশ সংসদে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সব শিক্ষাঙ্গনে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তার পছন্দের লোকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বসিয়ে, শিক্ষার মান নিয়ে কোনো চিন্তা না করে একের পর এক দুর্নীতির প্রকল্প গ্রহণ করেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে নওফেল। বাবার রাজনৈতিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশন তার অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ করছে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরপরই নওফেলের ভাগ্য খুলে যায়। রাতারাতি হয়ে যান হাজার কোটি টাকার মালিক। পরপর এমপি, প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী হয়ে ও বাবার দলীয় পরিচয় সূত্রে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ নেন। তৎকালীন সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ার কারণে নওফেল কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই অনিয়ম-দুর্নীতি, লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন। প্রতিটি সেক্টরে আলাদা আলাদা সিন্ডিকেট করে লুটপাট করতেন তিনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মবহির্ভূত উপায়ে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ ও কবজায় নেওয়া, কাড়ি কাড়ি টাকার বিনিময়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও বদলি করত নওফেল সিন্ডিকেট।

পটপরিবর্তনের পর বর্তমান সরকার নওফেলের নানা অপকর্ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং অন্যান্য গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থা। গত ২০ আগস্ট বিএফআইইউ নওফেল এবং তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত এবং ব্যাংক হিসাবের তথ্যও তলব করেছে। নওফেল ও তার স্ত্রী এমা ক্লারা বাটন এবং তাদের দুই সন্তান নীনা এমিলি ফাওজিয়া চৌধুরী ও হান্না শ্রেয়া এনী চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব জব্দ ও তাদের হিসাবের তথ্য দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। অন্যদিকে নওফেলের দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের পর থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থী হওয়া পর্যন্ত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের আগের পাঁচ বছরে তার অর্থ-সম্পদ বেড়েছে সাত গুণ। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে নওফেল এক কোটি ৬১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩১ টাকার সম্পদ দেখিয়েছিলেন হলফনামায়। তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ছিল তখন ৫৯ লাখ টাকা, যেখানে স্বামী-স্ত্রী কারও নামেই কোনো স্থাবর সম্পদ ছিল না। এবার নিজের নামে চার লাখ টাকার কৃষিজমি এবং এক কোটি টাকার দালান; স্ত্রীর নামে ৩৫ লাখ টাকার দালানের তথ্য দিয়েছেন হলফনামায়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় নওফেল তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ১০ কোটি ৯২ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৬ টাকা, যার মধ্যে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণই ৯ কোটি ৯২ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৬ টাকা। পাশাপাশি স্ত্রীর নামে এক কোটি এক লাখ ৮৯ হাজার ৪১৯ টাকার সম্পদ তিনি দেখিয়েছেন, যার মধ্যে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৬ লাখ ৮৯ হাজার ৪১৯ টাকা।

মহিবুল হাসান চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অর্থায়ন ও নিজস্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়টি পাঁচ বছর আগেই কবজায় নিয়ে হরিলুট চালান। তা ছাড়া তিনি নিজের যথেচ্ছ নিয়ন্ত্রণে নেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)। সেখানে শিক্ষক নিয়োগও ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব ক্যাডার ও চাঁদাবাজ বাহিনী দিয়ে যথেচ্ছ নিয়ন্ত্রণ, লুটপাট চালান। এ ক্ষেত্রে তৎকালীন দুই ভিসি ছিলেন নওফেলের দুর্নীতি-লুটপাটের সহযোগী। প্রতিটি নিয়োগ-বদলি সুপারিশের জন্য লাখ লাখ টাকা পকেটে ভরেছেন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণও নিজের কবজায় নেন তিনি। বোর্ডের কেনাকাটার সব কাজ পেতেন তার সহযোগী ঠিকাদাররা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সিভাসুর শিক্ষক নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করে নিজের পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ দিতেন তিনি। এ ছাড়া রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্যও সুপারিশ করেন নওফেল। এসবের মধ্য দিয়ে নওফেল কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। মহিবুল হাসান নওফেল নিজ ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করেই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজস্ব বলয়ের লোকদের নিয়োগ দিতেন। মেধাবীরা ছিলেন বঞ্চিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও সিভাসুকে দুর্নীতির হাটে পরিণত করেন তিনি।

কলেজ শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে নওফেল তার পিএস এবং নিজস্ব দালালদের মাধ্যমে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা ঘুষ নিতেন। এ ছাড়া লাখ লাখ টাকার লেনদেনে বিভিন্ন কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হতো। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ-পরিদর্শকসহ বিভিন্ন পদে নিজের লোকদের নিয়োগ দিতেন নওফেল। তারা ফলাফল জালিয়াতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্ম করলেও শিক্ষামন্ত্রী সব সময় নীরব ছিলেন। শিক্ষা বোর্ডর এসব কর্মকর্তা মন্ত্রীর জন্য খামে ভরে টাকা পাঠাতেন। ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে তার ছেলের পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠলেও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে দেননি নওফেল। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করতেন রাহুল দাশ। তার স্ত্রী পাপিয়া সেনকে ২০১৯ সালে নবম গ্রেডে প্রথম শ্রেণির হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।২০২২ সালে তাকেও স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দেড় বছরের মাথায় তাকে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ওই পদে পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব ছিল না, যার ফলে এ নিয়ে বাধে বিপত্তি। কিন্তু প্রশাসনিক কর্তারা নিয়ম ভেঙে শেষ পর্যন্ত তাকে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে পদোন্নতি দেন।

শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পরই তার রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। বদলি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন মো. জুয়েল নামে এক অফিস সহকারীর মাধ্যমে। মহিবুল হাসান চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে সব সময় কুক্ষিগত রাখতে চাইতেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হতো। এসব সংঘর্ষে মহিবুল হাসান চৌধুরী ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নাম উঠে আসত। উপমন্ত্রী থাকাকালে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডও কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। ২০১৬ সালে কারিগরি শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের জন্য সরকার প্রতিবছর ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। উপমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে এই অর্থের প্রায় ৮০ শতাংশ নিজের পকেটে পুরেছেন। তার মালিকানাধীন বিজয় টিভিতে কারিগরি শিক্ষার প্রচারণা চালানো হতো, যা প্রথম সারির টেলিভিশনের টিআরপি রেট দেখাত। এর মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বোর্ডের নিয়ন্ত্রণও নিজের হাতে নিয়েছিলেন। বোর্ডের কেনাকাটার সব কাজ পেতেন তার বলয়ের ঠিকাদাররা, যার একটি অংশ কমিশন হিসেবে তিনি পেতেন। শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের অবস্থান শক্ত করতে অধ্যাপক আবু তাহেরকে ইউজিসি সদস্য হিসেবে বসান। আবু তাহের চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে নওফেলকে মালিকানা পাইয়ে দিতে নানা অপতৎপরতা শুরু করেন। এর পুরস্কার হিসেবে, আবু তাহের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হন, যদিও তার যোগ্যতা ছিল না এবং আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। নোট-গাইড প্রকাশনীর মালিকদের কাছ থেকে বছরে চারবার চাঁদা নিতেন, যা নওফেলের দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন করে শুরু হয়। অল্প সময়েই প্রায় ১০ কোটি টাকা নিয়েছেন শুধু নোট-গাইড বইয়ের মালিক ও কোচিং সেন্টারের মালিকদের কাছ থেকে। তার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মালিকানাসহ শেয়ার রয়েছে এবং কয়েকটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে মালিকানা রয়েছে।

নকল সিগারেট ব্যবসায় ৫ হাজার কোটি লুট বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির নকল সিগারেট তৈরি এবং নকল ব্যান্ড রোল লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন। তার এ দুর্নীতির সারথী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

অভিযোগ রয়েছে, বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো এবং তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর মাধ্যমে মন্ত্রী-প্যানেল মেয়রের জুটি গত চার বছরে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি দিয়ে লোপাট করেছেন কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। লিটনের মালিকানাধীন দুই প্রতিষ্ঠান বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো। এর মধ্যে একটি কোম্পানির ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের।

কক্সবাজারের চকরিয়া এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শিবপুরের কারখানায় নকল সিগারেট তৈরি হতো। তাদের কারখানায় তৈরি হওয়া বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেটে লাগানো হয় নকল ব্যান্ড রোল। নকল এ সিগারেট দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো প্রতিষ্ঠার পর থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার টন সিগারেট তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করেছে সিগারেটের কাঁচামাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে; যা দিয়ে ৫ কোটি সিগারেটের শলাকা তৈরি সম্ভব। এখানে সরকার ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ রাজস্ব হারিয়েছে কমপক্ষে তিন হাজার কোটি টাকা।

রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিজয় ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা হয়। এ কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন চসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র ও নওফেল ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আবদুস সবুর লিটন। কোম্পানিতে শেয়ারের সংখ্যা ১০ হাজার। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন লিটনের ভাই আবদুল মান্নান খোকন। তার শেয়ারের সংখ্যা দুই হাজার।

এই কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রয়েছে নিহান ইনভেস্ট হোল্ডিং লিমিটেডের প্রতিনিধি এমা ক্লেয়ার বার্টন। ওখানে দেওয়া তথ্যে এমার স্বামী হিসেবে মহিবুল হাসান চৌধুরীর নাম দেওয়া হয়েছে। নিহান ইনভেস্ট হোল্ডিং লিমিটেডের ৯৯ শতাংশ শেয়ার হচ্ছে নওফেল ও তার স্ত্রী এমার। বাকি ১ শতাংশ তাদের এক পারিবারিক বন্ধুর।

আরবি/জেডআর

Link copied!