গ্রাহক চাহিদা ও প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সংগতি রেখে টেলিকম সেবাপ্রদানকারীদের পক্ষ থেকে গুণগত মানসম্মত সেবা পাওয়া নিশ্চিতে নতুন বিধিমালা আসছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ‘বিটিআরসি (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) রেগুলেশন, ২০২৪’ শিরোনামে বিধিমালাটি আনতে যাচ্ছে। এই খসড়া বিধিমালায় মোবাইল এবং ফিক্সড টেলিফোন সেবায় কলড্রপ ১ শতাংশের মধ্যে রাখার বিধান সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ডাউনলোডে কমপক্ষে প্রতি সেকেন্ডে ১৫ মেগাবিট (এমবিপিএস) এবং আপলোডে ৪ এমবিপিএস রাখা হয়েছে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে গ্রাহক যে গতির প্যাকেজ কিনেছেন তার শতভাগ অনুপাত ডাউনলোড এবং আপলোড স্পিড দিতে হবে। আর ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন্স ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটরদের ল্যাটেন্সি রাখতে হবে ৪ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে। নেটওয়ার্ক বিষয় ব্যতীত গ্রাহকের অন্যান্য অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে সর্বোচ্চ ২৮ দিনের মধ্যে। গুণগত সেবা নিশ্চিতে ব্যর্থ হলে টেলিকম সেবাপ্রদানকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রাখারও বিধান থাকছে খসড়ায়। সম্প্রতি এই বিধিমালার খসড়া প্রকাশ করে এ বিষয়ে সর্বসাধারণের মতামত নিচ্ছে বিটিআরসি।
বিধিমালাটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, টেলিকম সেবার বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্ক (কল ও ডেটা) তথা মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও), ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট তথা আইএসপি এবং এনটিটিএন অপারেটরদের সেবাকে এতে অন্তুর্ভুক্ত করা হয়। শিডিউল-১ এর অধীন ভিন্ন ভিন্ন টেবিলে গুণগত সেবা নিশ্চিতের বিভিন্ন ‘স্ট্যান্ডার্ড’ (মাপকাঠি) নির্ধারিত হয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবায় ‘ভয়েস’ এর ক্ষেত্রে সফলভাবে কল সেটআপের হার সর্বনিম্ন ৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ এমএনওগুলোকে কল ড্রপের হার সর্বোচ্চ ১ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। আর এই হার নিশ্চিত করতে হবে প্রতি বিটিএস (বেস ট্রান্সিভার স্টেশন) তথা নেটওয়ার্ক টাওয়ারের নিজ নিজ কাভারেজভুক্ত এলাকায়। বিটিএস তথা নেটওয়ার্ক টাওয়ার অচল বা বন্ধ থাকতে পারবে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ (০.০৫%) শতাংশ। ক্ষুদেবার্তা বা এসএমএস সফলভাবে প্রেরণ ও গ্রহণের হার হবে সর্বনিম্ন ৯৯ শতাংশ। আর এই সবকিছু প্রতি মাসের গড়ে নির্ণয় করা হবে। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে পরীক্ষাকালে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ডাউনলোডে কমপক্ষে ১৫ এমবিপিএস এবং আপলোডে ৪ এমবিপিএস হতে হবে। ফিক্সড টেলিফোন তথা ল্যান্ড লাইনের সফল কলরেট এবং কলড্রপের হার মোবাইল কলের মতো একই। তবে সফলভাবে কল সেটআপ হতে হবে সর্বোচ্চ ৬ সেকেন্ডের মধ্যে।
ফিক্সড ইন্টারনেট তথা ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে ‘পিং রাউন্ড ট্রিপ’ সর্বোচ্চ ২৫ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রবেশের চেষ্টা এবং ওয়েবসাইটটির পক্ষ থেকে ‘রেসপন্স’ আসার মধ্যবর্তী সময়কে ‘পিং রাউন্ড ট্রিপ’ বলা হয়। এ ছাড়াও গ্রাহক ইন্টারনেটের যে গতির প্যাকেজ কিনবেন, সেই গতির শতভাগ হারে ডাউনলোড এবং আপলোড স্পিড দিতে হবে। প্যাকেট লস হতে পারবে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ। সঞ্চালন ব্যবস্থায় কোনো গোলযোগ বা সমস্যা হলে সেটির সমাধানে সর্বনিম্ন ৪ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় পাবে আইএসপি’গুলো।
এই বিধিমালার আওতায় রাখা হয়েছে এনটিটিএন অপারেটরদেরও। এনটিটিএনদের ল্যাটেন্সি সর্বোচ্চ ৫ মিলিসেকেন্ড পর্যন্ত রেখে সুপারিশ করা হয়েছে খসড়ায়। ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার একটি প্রান্ত থেকে আরেকটি প্রান্তে ডেটা পৌঁছাতে যে সময় প্রয়োজন, সেটিকে ল্যাটেন্সি বলা হয়। পাশাপাশি এনটিটিএনগুলোকে সর্বনিম্ন ৯৭ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯৯ দশমিক ৯১ শতাংশ পর্যন্ত আপটাইম নিশ্চিত করতে হবে। সঞ্চালন ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা হলে সেটির সমাধানে প্রকারভেদে সর্বনিম্ন ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা সময় পাবে এনটিটিএন অপারেটরগুলো।
টেলিকম সেবা বিষয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ নিষ্পত্তিরও বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া বিধিমালায়। নেটওয়ার্ক ব্যতীত অন্যান্য সব বিষয়ে গ্রাহক অভিযোগ ২৮ দিনের মধ্যে শতভাগ নিষ্পত্তি করতে হবে। গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে ৯০ শতাংশ গ্রাহকদের কল ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর দিতে হবে তথা রিসিভ করতে হবে। সর্বোচ্চ ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে শতভাগ গ্রাহকের কল রিসিভ করতে হবে গ্রাহক সেবা কেন্দ্রগুলোকে। ৯০ শতাংশ গ্রাহক অভিযোগ নিষ্পত্তির উদ্যোগ সর্বোচ্চ ৫ কর্মদিবসের মধ্যে নিতে হবে।
গুণগত সেবা নিশ্চিতে বিধিমালায় উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে যথাযথ রেকর্ড রাখতে হবে টেলিকম সেবা প্রদানকারীদের। সেই রেকর্ড সম্পর্কে নিয়মিতভাবে বিটিআরসিতে প্রতিবেদনও জমা দিতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কমিশন চাইলে পরবর্তীতে সেসব প্রতিবেদন প্রকাশও করতে পারবে। গুণগত মানের স্ট্যান্ডার্ড মানতে ব্যর্থ হলে অথবা প্রতিবেদন জমা না দিলে বা ভুল দিলে অথবা এই বিধিমালার অন্য কোনো বিষয় প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে শাস্তির সুযোগও রাখা হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইন-২০০১ এর ধারা ৬৫ অনুযায়ী প্রশাসনিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়াতে।
এই খসড়া বিধিমালা সম্পর্কে বর্তমানে জনমত নিচ্ছে বিটিআরসি। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্দিষ্ট ই-মেইলে এই মতামত জানানো যাবে। তবে ব্যবসায়িক অংশীদাররা ইতোমধ্যে তাদের মতামত জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। এ বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে বলে জানিয়েছে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো এবং টেলিকম খাতের ব্যবসায়ীদের একাধিক সংগঠন। খসড়া বিধিমালাকে সাধুবাদ জানিয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই বিধিমালার প্রয়োজন আছে। আইএসপিদের ওপর যেসব শর্ত রাখা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই তার থেকে উন্নত মানের সেবা গ্রাহকদের দেওয়া হয়। তবে নানা প্রতিবন্ধকতায় অনেক সময় পারি না। যেমন ‘পিং রাউন্ড ট্রিপ’ নিশ্চিত করা যায় না আপস্ট্রিম সরবরাহকারীদের কারণে। আইএসপিরা সেবার মান তখনই নিশ্চিত করতে পারবে যখন ইন্টারনেট সঞ্চালন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে এই বিধিমালার আওতায় আনা হবে। খসড়া বিধিমালায় কিন্তু আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) বা আইটিসিদের (ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্টোরিয়াল কেব্ল) রাখা হয়নি। বিষয়টি বিটিআরসিকেও জানিয়েছি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি টেলিকম অপারেটরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কল ড্রপের সীমা পূর্বে ২ শতাংশ ছিল, সেটা এখন ১ শতাংশ করা হয়েছে। এতে কোনো সমস্যা নেই; তবে পূর্বে কল ড্রপ হিসেবের গড় করা হতো পুরো দেশের হিসেবে। তবে খসড়ায় প্রতিটি টাওয়ারের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি নির্দিষ্ট এলাকায় কল ড্রপের গড় হার ১ শতাংশের মধ্যে রাখা চ্যালেঞ্জিং। তৃণমূল বা প্রান্তিক অঞ্চলে বাস্তবিক নানা প্রতিবন্ধকতায় এটা অনেক সময়েই মানা যায় না। এ বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে অধিকতর আলোচনা করব।
 

 
                            -20250117065108.jpg) 
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
       -20251031164732.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন