রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, লঞ্চ ও বাসস্ট্যান্ডে বাড়ছে ছিনতাইকারী ও পকেটমার চক্রের দৌরাত্ম্য। বিশেষ করে নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্স এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে পকেটমার ও ছিনতাইকারী চক্র। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন ক্রেতারা। এক্ষেত্রে ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা পুলিশের দৃশ্যমান তৎপরতা দেখতে চায়। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, তারা ছিনতাই বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেশের ১ হাজারের বেশি চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতে অভিযান চলছে।
প্রতিদিন রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা দিয়ে হাজার হাজার ক্রেতা, পথচারী ও হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র নিউমার্কেটের বিভিন্ন বাসস্টান্ড ও অলিগলিতে গলি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। ঘাম ঝরিয়ে কষ্টে উপার্জন করা টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্রসহ প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বলে পুলিশ সূত্র জানায়।
সূত্রমতে, যাত্রীবেশে পকেটমার চক্রের সদস্যরা সাধারণ যাত্রীদের পকেট কেটে নিয়ে যাচ্ছে টাকা, স্বর্ণালংকার, দামি মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। পুলিশের চোখের সামনে এই চক্র নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে ছিনতাই কার্যক্রম। প্রায়ই ছিনতাইকারী ও পকেটমার চক্রের সদস্যদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন রাজধানীতে বসবাসরত ব্যক্তিরা। সর্বদা আতঙ্ক নিয়ে এই এলাকা দিয়ে চলাচল করে সাধারণ মানুষ।
অন্যদিকে প্রতিদিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর-হাউসবিল্ডিং এলাকা দিয়ে হাজার হাজার পথচারী ও যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া বিমানবন্দর রেলস্টেশন ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়ত করে হাজার হাজার মানুষ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র উত্তরার বিভিন্ন বাবস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও গলিপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
একাধিক সূত্র জানায় টঙ্গী, উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানার কিছু অসাধু মানুষ সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী ও পকেটমারের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ছিনতাই, পকেটমার ও ছিঁচকে চোরদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হলে পুলিশ বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
এরপর কিছুদিন ছিনতাই ও চুরির ঘটনা কম ঘটলেও বর্তমানে চক্রটি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া বাস ও ট্রেনে যাতায়াতকারী ভুক্তভোগীরা অনেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ায় তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ না করে তাদের গন্তব্যে চলে যান। এতে অধরাই থেকে যায় অপরাধীরা।
সূত্র জানায়, টঙ্গী, আবদুল্লাহপুর, হাউসবিল্ডিংয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুপাশে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। এ সময় সড়কের পাশে ওত পেতে থাকা ছিনতাইকারীরা ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।
মামুন নামের একজন ভুক্তভোগী জানান, টঙ্গী থেকে তার উত্তরার বাসায় ফেরার পথে আবদুল্লাহপুর পুলিশ চেকপোস্টের সামনে থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ওপরের কাপড় কেটে তার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ছিনতাই চক্র। 
গৃহবধূ লায়লা নামের আরেকজন জানান, সম্প্রতি হাউসবিল্ডিংয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় তার সঙ্গে থাকা অপর গৃহবধূর কানের স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় ছিনতাইকারী। এ সময় তার কানের লতি ছিঁড়ে যায়। রক্তাক্ত গৃহবধূ নিকটস্থ ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যান। একাধিক ব্যক্তি জানান, উত্তরার মধ্যে দলবেঁধে একদল তরুণ বয়সের ছিনতাইকারী ঘুরে বেড়ায়। তারা সুযোগ বুঝে অস্ত্র ঠেকিয়ে মানুষের সব কেড়ে নিচ্ছে।
এদিকে গত শুক্রবার নিউমার্কেট থেকে কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ফেরার পথে ঢাকা কলেজের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন আবু বকর ও রাবেয়া খাতুন। তারা জানান, আমাদের কোলে বাচ্চা ছিল। এসময় ১০ থেকে ২০ বছর বয়সি পাঁচজন রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছুরি ও চাকু ধরে আমার কাছ থেকে নগদ টাকাপয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করতে গেলে দেখি আরেকজন এমন ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছে। সদরঘাটে কথা হয় ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তি রাজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বুধবার রাত ৯টার দিকে আটজন অল্প বয়সের ছেলে ছুরি দিয়ে আমাকে জখম করে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
জানা যায়, রাজধানীর নিউমার্কেট, সদরঘাট, মোহাম্মাদপুর, মিরপুর, মতিঝিল, বাড্ডা, আবদুল্লাহপুর, হাউসবিল্ডিং, কামারপাড়া, স্লুইসগেট, আজমপুর, রাজলক্ষ্মী ও কসাইবাড়ি এলাকায় ছিনতাইকারীরা বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, রাজধানীতে পুলিশের সামনেই ছিনতাকারীরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে। ছিনতাইকারী চক্রে পুরুষ ও বহু নারী সদস্য রয়েছে। সন্ধ্যা হলেই তারা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে।
অপরাধ দমনে সারা দেশে ‘ডেভিল হান্ট’ ও কম্বাইন্ড প্রেট্রোলিং নামক আইনশৃঙ্খলা বিশেষ অভিযান চলমান থাকলেও থেমে নেই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, নীরবে চাঁদাবাজি, মব ভায়োলেন্সসহ নানা অপকর্ম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখ্যযোগ্য উন্নতি হচ্ছে না। ঢাকা মহানগরীতে প্রায়ই ঘটছে বড় বড় ডাকতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ ও আতঙ্ক কাটছে না। আসন্ন ঈদ সামনে রেখে পেশাদার অপরাধী ছাড়াও কুচক্রী মহল বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রগুলো দাবি করছে।
তারা আরও বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে জনগণের আস্থা ফেরাতে সরকারকে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে দেশের স্থিতিশীলতা দীর্ঘ মেয়াদে হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, লঞ্চ ও বাস স্ট্যান্ডে বাড়ছে ছিনতাইকারী ও পকেটমার চক্রের দৌরাত্ম্য।
এসব অপরাধের শিকার হয়ে মানুষ তাদের সহায়সম্পদ হারাচ্ছেন। অনেক কষ্টের ফল তারা হারিয়ে ফেলছেন। তবে এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভুক্তভোগীরা পুলিশের দৃশ্যমান তৎপরতা দেখতে চান। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, তারা ছিনতাই বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, প্রশাসনকে অপরাধ দমনে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সমাজের সচেতনতা বাড়াতে হবে। পুলিশি ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করতে হবে, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চোখ-কান খোলা রেখে সরকারকে বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাহলে ঈদের মধ্যে মার্কেট, লঞ্চঘাট ও বাসস্ট্যান্ডে ছিনতাইকারী-পকেটমার চক্রের দৌরাত্ম্য কমে যাবে।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে এবং অপরাধীদের ধরতে চেকপোস্ট ও অভিযানের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া রাজধানীর মার্কেট, লঞ্চঘাট ও বাসস্ট্যান্ডে ছিনতাইকারী-পকেটমার চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা।
রাজধানীর লঞ্চঘাট, মার্কেট ও বাস স্ট্যান্ডে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, রাজধানীতে মার্কেট, লঞ্চঘাট ও বাসস্ট্যান্ডে ছিনতাইকারী-পকেটমার চক্রের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিনিয়ত অপরাধী গ্রেপ্তারের নতুন নতুন কৌশলে অভিযান অব্যাহত আছে। অপরাধের মাত্রা আগের চেয়ে কমেছে। ঈদ সামনে রেখে অপরাধীরা যাতে সক্রিয় হতে না পারে, সেই লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
 

 
                            -20250322191823.webp) 
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
       -20251031164732.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন