শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০১:২৭ পিএম

ভারতকে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক নতুন জোট চায় পাকিস্তান

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ০১:২৭ পিএম

পাকিস্তান-ভারত। ছবি- সংগৃহীত

পাকিস্তান-ভারত। ছবি- সংগৃহীত

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইশহাক দার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানকে নিয়ে প্রস্তাবিত ত্রিদেশীয় উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত করে নতুন একটি আঞ্চলিক জোট গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তার দাবি, দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন আর অগ্রগতি কোনোভাবেই একক দেশের অনমনীয়তার কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না।

গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে ইশহাক দার বলেন, আমরা নিজে লাভবান হবো, কিন্তু অন্যের ক্ষতি হবে এ নীতি আমাদের নয়। সংঘাতের চেয়ে সহযোগিতাই আমাদের মূল দর্শন। ভারতসহ কারো জেদ বা অনমনীয়তার কাছে দক্ষিণ এশিয়ার অগ্রগতি থেমে থাকা উচিত নয়। এই বক্তব্যে তিনি স্পষ্টভাবেই ভারতকে আঞ্চলিক অচলাবস্থার জন্য দায়ী করেন।

১৯৮৫ সালে গঠিত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) বর্তমানে কার্যত স্থবির। ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা, সীমান্ত সংঘাত, কাশ্মীর ইস্যু এবং পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে ২০১৬ সালের পর আর কোনো সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি।

ফলে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য অত্যন্ত কম—মাত্র ৫ শতাংশ। নিয়মিত বৈঠক না হওয়া, রাজনৈতিক বিরোধ, আঞ্চলিক সংযোগ ও বাণিজ্য বাধা সার্ককে অকেজো করে তুলেছে। এই পটভূমিতেই পাকিস্তান এবার বিকল্প প্ল্যাটফর্মের কথা বলছে।

গত জুনে চীন–পাকিস্তান–বাংলাদেশের কূটনীতিকদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়। তখন জানানো হয়েছিল, এই উদ্যোগ ‘কোনো দেশকে লক্ষ্য করে নয়’। তবে পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বক্তব্য অনেকটাই সরাসরি সার্ককে পাশ কাটানোর ইঙ্গিত দেয়।

ইশহাক দার তার বক্তব্যে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সঙ্গে শুধু পাকিস্তানের নয়, আরও কয়েকটি দেশের সম্পর্ক দোদুল্যমান।

দুই দেশের সম্পর্ক কয়েক দশক ধরে উত্তেজনাপূর্ণ। সর্বশেষ গত মে মাসেই ভারত–পাকিস্তান চার দিনের সীমান্ত যুদ্ধে জড়ায়।

অন্যদিকে গত বছরের গণআন্দোলনের পর বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কও তলানিতে ঠেকেছে। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে ভারতের অবস্থানের কারণে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে। ফলে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি এখন এক নতুন বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে—যা পাকিস্তানের নতুন জোট উদ্যোগকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।

লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাবেয়া আক্তার মনে করেন, পাকিস্তানের এই প্রস্তাব বাস্তবের তুলনায় অনেকটাই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তবুও সার্ক অচল হয়ে যাওয়ায় ইসলামাবাদ বিকল্প সহযোগিতা কাঠামোর চেষ্টা করছে, যা আঞ্চলিক কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের শাবাব ইনাম খান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাস্তবসম্মত সহযোগিতা গড়তে সবসময়ই সংকট দেখা দেয়। তাই পাকিস্তানের এই প্রস্তাব উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলেও সময়ের দাবি।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি বলেন, সার্ক ব্যর্থ হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন জোট গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতির কারণে চীন–বাংলাদেশ–পাকিস্তান সহযোগিতা আরও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে।

দক্ষিণ এশিয়ার মোট বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে হয়। অথচ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আসিয়ান দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের হার ২৫ শতাংশ—যা সার্কের ব্যর্থতা স্পষ্ট করে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ৬৭ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাণিজ্য করতে সক্ষম।

কিন্তু ২০১৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপের মতো মোটরযান চলাচলের বড় একটি চুক্তি চূড়ান্ত হতে যাচ্ছিল—সেটিও পাকিস্তান আটকে দেয়। রেল ও সড়ক সংযোগেও জটিলতা তৈরি হয়।

অধ্যাপক রাবেয়া আক্তারের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আগ্রহ দেখালেও আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সীমিত। কারণ ভারতকে দূরে রেখে নতুন জোট তৈরির উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

প্রবীণ দোন্থির মতে, যদি পাকিস্তানের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়, তবে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে। পাশাপাশি ভারত–চীন প্রতিযোগিতাও নতুন মাত্রা পাবে। ফলে আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য পাল্টে যেতে পারে।

সার্কের অচলাবস্থা, ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা ও পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় পাকিস্তান বিকল্প আঞ্চলিক জোটের প্রস্তাব সামনে এনেছে। বাংলাদেশ ও চীনকে যুক্ত করে বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গড়ার এই উদ্যোগ স্বল্পমেয়াদে আকর্ষণীয় মনে হলেও বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

তবুও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিবর্তনের এই সময়ে পাকিস্তানের উদ্যোগ নতুন আঞ্চলিক সমীকরণ সৃষ্টি করতে পারে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Link copied!