মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০৫:৫১ পিএম

‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণের দ্বারপ্রান্তে ‘ইসরায়েল’

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০৫:৫১ পিএম

আল-আকসা মসজদি কমপ্লেক্সের স্থানে ‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণের ছক কষছে ‘ইসরায়েল’। ছবি- সংগৃহীত

আল-আকসা মসজদি কমপ্লেক্সের স্থানে ‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণের ছক কষছে ‘ইসরায়েল’। ছবি- সংগৃহীত

ইসলামের অন্যতম পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে জেরুজালেমে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি মসজিদ প্রাঙ্গণে ইসরায়েলিদের প্রার্থনা, পতাকা উত্তোলন এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

তারা আশঙ্কা করছেন, ‘ইসরায়েল’ মসজিদটিকে মুসলিম ও ইহুদিদের মধ্যে স্থানিকভাবে বিভক্ত করার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এরপর পুরো কমপ্লেক্স ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই

চলতি মাসের শুরুতে ‘ইসরায়েলি’ অভিযানের সময় আল-আকসার ভেতরে দেখা গেছে বসতি স্থাপনকারীদের দলবদ্ধ প্রার্থনা, গান ও নাচ। পুরুষরা সিজদায় মুখ মাটিতে ঠেকিয়ে রেখেছে, উড়ছে ‘ইসরায়েলি’ পতাকা।

ফিলিস্তিনিরা বলছেন, কয়েক বছর আগেও এমন দৃশ্য অকল্পনীয় ছিল। ফিলিস্তিনিদের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে।

ইহুদিদের ‘থার্ড টেম্পল’র নকশা। ছবি- সংগৃহীত

আল-আকসা মসজিদ পরিচালনাকারী সংস্থা ইসলামিক ওয়াকফের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিচালক আউনি বাজবাজ বলেন, ‘যা ঘটেছে... তা আল-আকসা মসজিদের উপর জোরপূর্বক ইহুদি সার্বভৌমত্ব আরোপ এবং মুসলিম ও বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে স্থানিকভাবে বিভক্ত করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়কে প্রতিনিধিত্ব করে।’

জেরুজালেমের পুরাতন শহরে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদটি মুসলিম বিশ্বের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। ফিলিস্তিনিদের কাছে এটি তাদের পরিচয় ও সংগ্রামের প্রতীক। অন্যদিকে, অনেক ইহুদি এই স্থানটিকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে। এবং তারা বিশ্বাস করেন, এখানেই তাদের থার্ড টেম্পল বা তৃতীয় মন্দির নির্মিত হবে।

ঐতিহাসিক স্থিতাবস্থা ভাঙন

উনিশ শতকের শেষ দিকে অটোমান সাম্রাজ্য আল-আকসা মসজিদ একটি আন্তর্জাতিক ‘স্থিতাবস্থা’ চুক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী, এক লাখ ৪৪ হাজার বর্গমিটারের সম্পূর্ণ মসজিদ কমপ্লেক্সটি জর্ডানের তত্ত্বাবধানে ইসলামিক ওয়াকফ দ্বারা পরিচালিত হয়।

চুক্তি অনুসারে, শুধুমাত্র মুসলিমরা মসজিদের অভ্যন্তরে প্রার্থনা করতে পারবে, এবং অমুসলিমদের প্রবেশাধিকার ওয়াকফের সিদ্ধান্ত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। পরবর্তীতে জর্ডানের তত্ত্বাবধানে ইসলামিক ওয়াকফ এর দায়িত্ব পালন করে‘।

‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণের জন্য ‘লাল গরু’ জবাই শুরু করেছে ইহুদিরা। ছবি- সংগৃহীত

১৯৯৪ সালে ‘ইসরায়েল’-জর্ডান শান্তি চুক্তিতে এই তত্ত্বাবধানের বৈধতা স্বীকৃত হয়। তবে ২০০০ সালে এরিয়েল শ্যারনের শত শত সশস্ত্র রক্ষী নিয়ে আল-আকসা সফর দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা ফিলিস্তিনি গণঅভ্যুত্থানের সূত্রপাত ঘটায়। সেই থেকে ‘ইসরায়েল’ স্থিতাবস্থা ভাঙার পথে এগোতে শুরু করে।

প্রথমে মসজিদে প্রবেশে বয়স ও অঞ্চলভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, পরে ওয়াকফের পরিদর্শন নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়া হয়। ধীরে ধীরে কট্টরপন্থী ইসরায়েলি গোষ্ঠী ‘টেম্পল মাউন্ট অ্যাক্টিভিস্ট’ কর্মীদের অভিযানে ‘ইসরায়েলি’ বাহিনী রক্ষী হিসেবে দাঁড়ায়। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অনেকে আল-আকসা ধ্বংস করে তৃতীয় মন্দির নির্মাণের পক্ষে।

একই সঙ্গে আল-আকসা কমপ্লেক্সের নিচে প্রকাশ্যে খননকাজ চালানো হয়, যা ফিলিস্তিনিদের মতে স্থানের ঐতিহাসিক পরিচয় মুছে দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ।

নতুন বাস্তবতা ও সংঘাত

গত দুই দশকে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের অভিযানের সংখ্যা ও পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে বছরে মাত্র পাঁচ হাজার বসতি স্থাপনকারী অভিযানে অংশ নিত, ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজারে। ২০২৪ সালে সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৭ হাজার, লক্ষ্য ১ লাখ।

এখন অভিযানগুলো দিনে দু’বার হয়, মুসলিম ফজর ও যোহরের নামাজের পর। ফিলিস্তিনিদের মতে, এর মূল উদ্দেশ্য হলো মসজিদটিকে একটি ভাগাভাগি প্রার্থনার স্থানে পরিণত করা।

এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার ফলে বিভিন্ন সময়ে সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। ২০২১ সালের রমজান মাসে মসজিদে ইসরায়েলি অভিযান গাজায় ১১ দিনের যুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিল। হামাস তাদের ৭ অক্টোবরের আক্রমণের অন্যতম কারণ হিসেবে ‘আল-আকসার বন্যা’ বা আল-আকসার উপর চলমান লঙ্ঘনকে উল্লেখ করেছে।

৭ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে। ‘ইসরায়েলি’ কর্তৃপক্ষ প্রায়শই ৬০ বা ৫০ বছরের কম বয়সী ফিলিস্তিনি পুরুষদের মসজিদে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। ফলে, একসময় যেখানে জুমার নামাজে হাজার হাজার মুসল্লি হতো, এখন সেখানে সংখ্যাটি হাজারে নেমে এসেছে।

পবিত্র মসজিদ আল-আকসা ধ্বংস করে ইহুদিরা সেখানে নির্মাণ করবে ‘থার্ড টেম্পল’। ছবি- সংগৃহীত

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো ‘ইসরায়েলি’ পুলিশ এখন প্রকাশ্যে ইহুদি প্রার্থনা, গান ও নাচের অনুমতি দিচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের নেতৃত্বে বসতি স্থাপনকারীরা মসজিদের ভেতরে ‘ইসরায়েলি’ পতাকা উড়িয়ে দলবদ্ধ প্রার্থনা করছেন।

ওয়াকফের কর্তৃত্ব হ্রাস

ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকার সীমিত করার পাশাপাশি ইহুদিদের প্রার্থনা ও ধর্মীয় কার্যক্রমে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৪ সালে ‘ইসরায়েল’-এর জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের অধীনে একটি নতুন নীতি বাস্তবায়িত হয়, যেখানে মসজিদে ইহুদিদের বাধাহীনভাবে প্রার্থনা করার অনুমতি দেওয়া হয়। জুন মাসে, বেন গভির নিজে শত শত বসতি স্থাপনকারীকে নিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন এবং সেখানে উচ্চস্বরে ইহুদি প্রার্থনা করা হয়।

ওয়াকফের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মতে, ‘ইসরায়েলি’ কর্তৃপক্ষ মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রশাসনিক কাজে প্রতিনিয়ত বাধা সৃষ্টি করছে। কর্মী নিয়োগ, এমনকি সামান্য মেরামত কাজের জন্যও ‘ইসরায়েলি’ কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন হয়, যা প্রায়শই প্রত্যাখ্যান করা হয়।

২০২২ সালে জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর দান করা নতুন কার্পেটও ‘ইসরায়েল’ প্রবেশ করতে দেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই কর্মকর্তার ভাষায়, ‘আল-আকসার উপর আমাদের কর্তৃত্ব এখন শূন্য। সবকিছু ইসরায়েল-এর অনুমতির ওপর নির্ভরশীল।’

‘থার্ড টেম্পল’র ছায়া ও ফিলিস্তিনিদের আশঙ্কা

ফিলিস্তিনিরা আশঙ্কা করছে, সাময়িক সয়সভিত্তিক বিভাজন আরোপ অর্থাৎ মুসলিম ও ইহুদিদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারণের পর, ‘ইসরায়েল’-এর পরবর্তী পদক্ষেপ হবে স্থানিক বিভাজন। প্রথম ধাপে সিনাগগ নির্মাণের পরিকল্পনা এগোবে। এরপর ধাপে ধাপে পুরো কমপ্লেক্স ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এই পরিস্থিতি হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদের কথা মনে করিয়ে দেয়, যা প্রথমে সাময়িকভাবে এবং পরে স্থানিকভাবে বিভক্ত করা হয়েছিল।

২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনবিহীন ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্যের’ মানচিত্র দেখান বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি- সংগৃহীত

২০২৩ সালে ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টি এমপি অমিত হালেভি মসজিদ কমপ্লেক্সকে বিভক্ত করার একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিলেন, যেখানে ৭০ শতাংশ ইহুদিদের এবং ৩০ শতাংশ মুসলিমদের জন্য বরাদ্দের কথা বলা হয়। বেন গভির প্রকাশ্যে আল-আকসার ভেতরে সিনাগগ নির্মাণের পক্ষে মত দেন।

‘টেম্পল মাউন্ট অ্যাক্টিভিস্ট’ গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে আল-আকসা ধ্বংস করে তৃতীয় ইহুদি মন্দির নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এখন তাদের অনেক সদস্য সংসদ ও মন্ত্রিসভায় আসন দখল করেছে। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও নেগেভ-গ্যালিলি মন্ত্রী ইয়িটজাক ওয়াসেরলাউফ প্রকাশ্যে মন্দির পুনর্নির্মাণের কথা বলছেন

২০২৫ সালের রমজানে ইসরায়েলি বাহিনী এক অভূতপূর্ব পদক্ষেপে ফিলিস্তিনিদের শুক্রবারে ইব্রাহিমি মসজিদে প্রবেশ ঠেকায়। ফিলিস্তিনিদের মতে, এটি আল-আকসার ভবিষ্যতের দিকেই ইঙ্গিত করছে। এই আশঙ্কা নতুন নয়। হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদের অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ। প্রথমে সাময়িক সময়সূচিভিত্তিক বিভাজন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পরে তা স্থায়ী হয়ে গেছে।

ওয়াকফের কর্মকর্তারা মনে করছেন, ‘আল-আকসায় যা ঘটছে তা কেবল কিছু নিয়ম লঙ্ঘন নয়, বরং এটি একটি ব্যাপক ইহুদিকরণ প্রকল্প। লক্ষ্য পূর্ণ ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব।’ তাদের মতে, মুসলিম বিশ্বকে চ্যালেঞ্জের বিশালতা বুঝতে হবে এবং সময় থাকতেই প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। না হলে মসজিদটির ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক পরিচয় ধাপে ধাপে মুছে যাবে।

Link copied!