ঢাকা সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

ইউক্রেনকে ‘টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র দেবে ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ১০:৪১ এএম
ইউক্রেনকে টমাহক দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি- সংগৃহীত

রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘টমাহক’ দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগে এয়ার ফোর্স ওয়ানে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। সম্ভবত আমরা ইউক্রেনকে টমাহত দিতে পারি। এমন সময় ট্রাম্প এ মন্তব্য করলেন, যখন রাশিয়ায় পাল্টা হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সামরিক সহায়তা চেয়ে এ সপ্তাহে ২ বার ফোন করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

এদিকে রাশিয়া জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে, তাহলে যুদ্ধ পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক ও নাটকীয় পর্যায়ে’ পৌঁছাবে। রোববার (১২ অক্টোবর) ক্রেমলিন এ সতর্কবার্তা দিয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, ‘টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এখন এমন এক নাটকীয় সময় চলছে, যখন সব পক্ষ থেকেই উত্তেজনা বেড়ে চলেছে।’

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার আগে তিনি জানতে চান, কিয়েভ এসব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে কী করতে চায়। তিনি যুদ্ধ আরও বাড়াতে চান না, তবে ‘আংশিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন’ বলেও জানান।

টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা প্রায় ২,৫০০ কিলোমিটার, যা দিয়ে ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে, এমনকি মস্কোতেও হামলা চালাতে সক্ষম হবে। মার্কিন কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের তথ্যমতে, কিছু পুরোনো টমাহক মডেলে পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনের সক্ষমতাও রয়েছে।

পেসকভ বলেন, ‘ভাবুন, একটি দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার দিকে ছুটে আসছে—যেটি পারমাণবিকও হতে পারে। তখন রাশিয়া কী ভাববে? কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে? বিদেশি সামরিক বিশেষজ্ঞদের এটা বুঝতে হবে।’ রুশ কর্মকর্তারা আগেও বলেছেন, তারা এখন পশ্চিমাদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িত, যা ১৯৬২ সালের কিউবা মিসাইল সংকটের পর সবচেয়ে বড় মুখোমুখি অবস্থান।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি বলেন, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। তাই ইউক্রেনকে এই অস্ত্র সরবরাহ করা হলে, যুদ্ধ ‘নতুন ও বিপজ্জনক পর্যায়ে’ পৌঁছাবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনকে রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় দূরপাল্লার হামলায় সহায়তা করছে। ওয়াশিংটনের গোয়েন্দা তথ্যের সহায়তায় ইউক্রেন ড্রোন হামলার রুট, উচ্চতা ও সময়সূচি নির্ধারণ করছে। ফলে রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়ানো সম্ভব হচ্ছে।

পুতিন বরাবরই ইউক্রেন যুদ্ধকে রাশিয়া ও পশ্চিমাদের সম্পর্কের একটি ‘ইতিহাস-নির্ধারক মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছেন। তার দাবি, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পশ্চিমারা ন্যাটো সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাশিয়াকে অপমান করেছে এবং ইউক্রেন ও জর্জিয়ার মতো দেশগুলোতে হস্তক্ষেপ করে মস্কোর প্রভাববলয় সংকুচিত করেছে।

অন্যদিকে, ইউক্রেন ও এর পশ্চিমা মিত্ররা এই যুদ্ধকে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী দখল প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছে এবং বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রুশ বাহিনীকে পরাজিত না করা পর্যন্ত লড়াই চলবে।