বিদেশে ছুটিতে থাকা হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল (অব.) শাহ আবিদুর রহমানকে জোরপূর্বক অপসারণের পর সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। কার্যকরি পরিষদ নিয়ে বিদ্যমান সংকটের মাঝে পরিচালককে অপসারণের ঘটনা প্রকাশের পর থেকে হাসপাতাল একরকম অচলাবস্থার মধ্যে নিপতিত হতে শুরু করে। হৃদরোগের জন্য বিশেষায়িত ও সুখ্যাতি অর্জনকারী সিলেটের এই চ্যারেটি প্রতিষ্ঠান সংকটে নিমজ্জিত হওয়ার পর তা থেকে উত্তরণের কোনো উদ্যোগ বা প্রচেষ্টা না চালিয়ে একে আরও জটিলতার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ উঠেছে পরিষদের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকেই। এটি যেন হার্ট ফাউন্ডেশনে জ্বলতে থাকা আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।
ফাউন্ডেশনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সংকট শুরু পরিচালনা পরিষদ গঠন নিয়ে। আধিপত্য বিস্তার এবং হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ একটি পক্ষ এককভাবে হস্তগত করতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভায় সিলেকশনের মাধ্যমে পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। তবে বিতর্ক এড়াতে সেই কমিটিতে কিছু নিরপেক্ষ ও ভিন্ন বলয় থেকেও কয়েকটি সম্পাদকীয় পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠে, যাদের পদে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের বেশিসংখ্যককে আগে বলা হয়নি। এমনকি অপছন্দের পদেও নাম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে কারো কারো। পরিষদ ঘোষণার পর তারা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এদিকে এ অবস্থায় পরিষদ বিদেশে মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ছুটিতে থাকার সময় হাসপাতালের দীর্ঘদিনের পরিচালক কর্নেল (অব.) শাহ আবিদুর রহমানকে অপসারণ করে।
এটি মানতে পারেননি পরিষদের অনেকেই। তাদের মধ্যে রয়েছেন কার্যকরি পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব সোবহানী চৌধুরী, ডা. মোস্তফা শাহ জামান চৌধুরী বাহার, পাবলিসিটি সেক্রেটারি আবু তালেব মুরাদসহ আরও কয়েকজন। তারা বিষয়টি বিবেচনার জন্য মৌখিক সুপারিশ করেন। কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, এভাবেই সিলেট হার্ট ফাউন্ডেশনের ক্ষোভ ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। এ মুহূর্তে পরিষদের শীর্ষ দায়িত্বশীলদের স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ জন্য ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। তার প্রভাব পড়ছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায়। ঘনীভূত হচ্ছে চিকিৎসক সংকট। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়ন ইস্যুও। বিষয়টি মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে এরই মধ্যে পরিষদের কয়েকজন সদস্য পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জানা গেছে, তারা আজ (শনিবার) বা আগামীকাল রোববার নিজেদের লিখিত পদত্যাগপত্র পরিষদের সভাপতির কাছে প্রদান করবেন। তাদেরই একটি পদত্যাগপত্র এরই মধ্যে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসে পৌঁছেছে। সেখানে পরিষদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে মতামত নেওয়া বা সম্মতি না নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পদত্যাগ করবেন এমন এক দায়িত্বশীল সদস্য দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এভাবে সিলেট হার্ট ফাউন্ডেশন পরিচালনার জন্য জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) মরহুম ডা. এ মালিক তার শুভাকাক্সক্ষীদের নিয়ে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেননি। যে লক্ষ্য নিয়ে ফাউন্ডেশনের যাত্রা, সিলেটে যা হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে সেটি ব্যাহত হবেই।
সম্প্রতি দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সাথে আলাপকালে কার্যকরি পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. আমিনুর রহমান লস্কর পরিষদ নিয়মতান্ত্রিকভাবে গঠনের কথা জানান। পরিষদের পাবলিসিটি সেক্রেটারি ও সিলেটের সিনিয়র সাংবাদিক আবু তালেব মুরাদ অন্য দায়িত্বশীলদের পদত্যাগের ব্যাপারে জানান, ঘটনাটি তার কানেও এসেছে। বলেন, সিলেট হার্ট ফাউন্ডেশন সংকটে আছে এটা ঠিক। তবে সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা আমাদের করা দরকার। প্রশ্ন হলো, আমরা কি তা করছি? তিনি বলেন, ক্ষোভ আছে পরিষদ নিয়ে। তাদের কেউ যদি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন, সেটা তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন